কাজ করে দেখাতে চান ক্রীড়ামন্ত্রী

দুই দিনে ১০টি ক্রীড়া ফেডারেশনের সঙ্গে বসেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। আজ (বুধবার) ফুটবল ও হকি ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকের পর পাপন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের নানা বিষয়ে অবহিত করেছেন। প্রশ্নোত্তরের একেবারে শেষ পর্যায়ে পাপন বলেছেন, ‘আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) সামনে খুব বেশি কথা বলতে চাই না আর। কিছু করতে পারি কি না জানি, যদি পারি তখন বলব না, আপনারা দেখবেন। যদি না পারি, বলব পারব না, ফিনিশড।’
নাজমুল হাসান পাপন গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকলেও ক্রীড়াঙ্গনের অনেক বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা ছিল। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন পাপন, ‘গত দুই দিন যা শুনেছি, এর ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।’
আর্থিক বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি স্পন্সরের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন পাপন, ‘শ্যুটিং ও আরচ্যারি কমপ্লেক্স চেয়েছে। কমপ্লেক্সের জন্য আমার সরকারি সহায়তা লাগবে। এছাড়া বাকি ফেডারেশনগুলোর যে আর্থিক সাহায্য সেটা আমি আশাবাদী পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে করতে পারব।’
সরকারের পাশাপাশি বাইরের পৃষ্ঠপোষকদের সম্পৃক্ত করার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, ‘বর্তমানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে প্রশিক্ষণ ও বিদেশ ভ্রমণের জন্য মাত্র ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ। ক্রিকেট বাদে বাকি সব ফেডারেশনের জন্য যা অপ্রতুল। এই ছয় মাসে টাকা বৃদ্ধি করানো যাবে না। চেষ্টা করা হবে পরবর্তী বাজেটে বৃদ্ধির। সেটাও একটা লিমিট আছে (১০-১৫ শতাংশ)। আমার চেষ্টা থাকবে লিমিটকে বৃদ্ধি করার। কতটুকু পারব জানি না, তবে চেষ্টা করব সর্বাত্মক।’
ক্রিকেট ছাড়া অন্য সকল ফেডারেশনগুলোর আজীবন পৃষ্ঠপোষকতার সমস্যায় ভোগেন। তবে পৃষ্ঠপোষকতা কোনো সমস্যা না বলে মন্তব্য করেন পাপন, ‘সবাইকে না পারলেও বেশ কিছু স্পন্সর যোগাড় করা সম্ভব। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।’ এক্ষেত্রে তিনি অভিজ্ঞতা বর্ণনাও করেন এভাবে, ‘যে জায়গা থেকে আসছি, টাকা চাইলেই পেতাম। কার কাছ থেকে নেব চিন্তা করতাম, এখন নতুন জায়গা। এখানেও আশা করছি সহযোগিতা পাব। বাস্তবতা কতটুকু পাই দেখা যাক। আমি আত্মবিশ্বাসী। অবকাঠামোতে সময় লাগবে, এতে আমার হাত নেই। তবে সেখানেও চেষ্টা থাকবে দ্রুত করার। আর্থিক অনেক সমস্যায় সমাধান সম্ভব, অন্তত ৮০ শতাংশ হলেও।’
ফুটবল ফেডারেশন দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন। ফুটবলে এক সময় পৃষ্ঠপোষক ছিল। নানা কারণে পৃষ্ঠপোষক মুখ ফিরিয়ে নেয় এই ফেডারেশন থেকে। পৃষ্ঠপোষক ধরে রাখা প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘পৃষ্ঠপোষকরা দু’টো জিনিস চায়। তারা যে অর্থ দিচ্ছে এর সঠিক ব্যবহার এবং প্রচার। এই দু’টো জিনিসের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে তাদেরও (স্পন্সর) জবাবদিহিতা দিতে হয়, কারণ তাদের বোর্ড থেকে অ্যাপ্রুভ করা লাগে। তাই স্পন্সরদের চাহিদা পূরণ করতে হবে।’
স্পন্সর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাম্প্রতিক বিসিএলের কথাও উঠেছে। এই টুর্নামেন্ট হয়েছে পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই। এই প্রসঙ্গে ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘আমাদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। তাদের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। তাই তারা দুই-তিন মাস পয়সা ছাড়া পৃষ্টপোষকতার কথা বলেছিল, আমরা এটি করতে রাজি হইনি।’
বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাময় খেলা হকি। সেই হকি লিগ নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় না। তবে এজন্য ফেডারেশনকে কাঠগড়ায় দাড় করাতে নারাজ পাপন, ‘আসলে এখানে ফেডারেশনকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। অনেক কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলো আজ আলোচনা হয়েছে। আমরা বেশ কিছু বিষয় নির্ধারণ করেছি। যেগুলো করতে হবে। স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী।’
হকি ফেডারেশন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ইনডোর হকির ব্যবস্থা করতে চায়। সেজন্য হকি স্টেডিয়ামে পরির্দশন করবেন পাপন। ইনডোর হকিতেও সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার। হকির সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী, ‘ওমান-কাজাখস্তান আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে। হকির অনেক ফ্যাসিলিটিজ সমস্যা রয়েছে। টার্ফ বৃদ্ধি করতে হবে। তারা কয়েকটি টার্ফ চেয়েছে, এতে বিভিন্ন জেলায় হকি খেলোয়াড় ওঠে আসবে।’
হকি ফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে বাৎসরিক ৩০ কোটি টাকা চেয়েছি। এতে ডেভলপমেন্ট, সিনিয়র দলসহ সব কিছুই অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।’ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুর রশীদ শিকদার নাজমুল হাসান পাপনের ওপর আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্রিফিংয়ের মধ্যেই বলেন,
‘পাপন ভাই মন্ত্রী হওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনের সবাই আশাবাদী, হকি ফেডারেশনও তাই।’
এজেড/এএইচএস