প্রথা ভাঙা একজন মৌয়ের গল্প

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী শরীর গঠনের যাত্রা অল্প দিনের। এর মধ্যেই দেশের নারী শরীর গঠনের প্রতীক হয়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামের মেয়ে মাকসুদা মৌ। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসে নারী ইভেন্ট ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ জিতেছেন। মেডেল ছাপিয়ে তার নিবেদন ও আগ্রহ সবার চেয়ে তাকে আলাদা করে রাখছে।
কানাডায় পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করা মাকসুদা শরীর গঠনেই মনোনিবেশ করেছেন। রাজধানীর বড় শপিংমলের জিমে তিনি কাজ করছেন ট্রেনার হিসেবে। সকাল এগারোটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ট্রেনিং করাতেন নারী-পুরুষ সবাইকে। যমুনা ফিটনেস ড্রিমে ট্রেনিং করান তারকা অভিনেতা, অভিনেত্রী, ক্রিকেটারসহ বিশিষ্টজনদের।
পুরুষদের ট্রেনিং করানো নিয়ে মৌ বলেন, ‘আমি শরীর গঠনের উপর সার্টিফিকেশন করেছি। আমার জ্ঞান অনুশীলনকারীদের ওপর বিতরণ করি। এখানে ছেলে মেয়ে কোনো বিষয় নয়।’
কানাডাতে পাবলিক হেলথে মাস্টার্সে অনেক খরচ। দেশে ফিরে এসে শরীর গঠনে ক্যারিয়ার গড়ায় পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে মৌ বলেন, ‘কানাডাতে আমার আংশিক স্কলারশিপ ছিল। এজন্য পরিবারের খুব বেশি খরচ হয়নি। শরীর গঠনের মতো ব্যতিক্রমী সেক্টরে পরিবার প্রথমে রাজি ছিল না। আমার আগ্রহ ও সাফল্যে এখন অবশ্য আর তেমন বাধা দেয় না।’
শরীর গঠনের আগ্রহ জন্মে মৌয়ের ভারতে পড়াশোনার সময়। শরীর গঠনে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘ভারতে যখন পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল নিজেকে ফিট রাখার দরকার। তখন থেকেই অনুশীলন, ডায়েট করি।’ শরীর গঠনের জন্য ব্যয়ও অনেক। ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার, ইন্সট্রাক্টরের সম্মানী মিলিয়ে মাসে অনেক টাকা গুণতে হয় মৌকে, ‘আমি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলব এজন্য বাইরের ট্রেইনারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তাকে মাসিক সম্মানী দিতে হয়। ডায়েটে পুষ্টিকর খাবারের পেছনেও অনেক খরচ।’
যে পরিমাণ খরচ নিজেকে ফিট রাখতে তত পরিমাণ আয় খুব একটা নয়। তাই দেশের বাইরে খেলে নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এই নারী বডিবিল্ডার, ‘আমার যে সার্টিফিকেশন আছে দেশে এর বেশি মুল্য পাব না। কারণ যারা মুল্যায়ন করবেন তারা এর সম্পর্কে অবগত নন।’
দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে বিস্ময়ের শিকার হয়েছেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা বডিবিল্ডিংয়ে সেভাবে আসে না। দেশের বাইরে তো যাই না। আমাকে দেখে অন্য দেশের বডিবিল্ডাররা অবাক হয়েছে।’
সাবেক মিস্টার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম নারী শরীর গঠনের রোল মডেল হিসেবে দেখছেন মৌকে, ‘সে প্রচলিত প্রথা ভেঙে নারীদের নতুন পথ দেখিয়েছে। তাকে দেখে অনেকে এগিয়ে আসবে। আমরা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য করার করব।’
২৮ বছর বয়সী নারীর সতীর্থদের উদ্দেশ্যে একটাই স্পষ্ট বক্তব্য, ‘ট্যাবু ভাঙতে হবে। ট্যাবু ভাঙতে পারলে এই সেক্টরে নারীরাও ভালো করতে পারবে।’
এজেড/এটি/এমএইচ
