নেই বাংলাদেশি কমিশনার, ‘হস্তক্ষেপ’ অযাচিত

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আকস্মিকভাবে টস করান ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া ডিলান। সাডেন ডেথে ১১-১১ স্কোরলাইন হওয়ার পর রেফারি ১২ তম শটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই ম্যাচ কমিশনার মাঠের কাছাকাছি গিয়ে রেফারিকে টসের কথা বলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টস অনুষ্ঠিত হয়।
টস নিয়ে বাংলাদেশ পরবর্তীতে আপত্তি তুলে। বাইলজে টসের বিষয় নেই এবং টসে শিরোপা নিষ্পত্তি এটি বাংলাদেশ অবগত ছিল না। ম্যাচ কমিশনার ভুল বুঝতে পেরে রেফারিকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানান। রেফারি সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও ভারত আর মাঠে ফেরেনি। সকল জটিলতা হয়েছে ম্যাচ কমিশনারের কারণেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে ম্যাচ কমিশনার এটি করতে পারেন কি না?
বাংলাদেশের সাবেক ফিফা রেফারিদের অনেকেই বাফুফের রেফারিজ কমিটিতে রয়েছেন। তাই কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঘরোয়া পর্যায়ে যারা ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেও তারা এই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তাই বাফুফের সাবেক রেফারি কনসালটেন্ট ও এএফসি’র সিনিয়র ম্যাচ কমিশনার গৌতম করের শরণাপন্ন হওয়া।
তিনি এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন। কলকাতায় থাকলেও বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে অবগত। ম্যাচ কমিশনারের ভুল আখ্যায়িত করে তিনি কলকাতা থেকে বলেন, 'এটি সম্পূর্ণ ম্যাচ কমিশনারের ভুল। খেলার মাঠে রেফারিই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। ম্যাচ কমিশনারের কাজটি মূলত প্রশাসনিক। ম্যাচের আগের দিন স্টেডিয়াম, ম্যাচের দিন দুই দলের জার্সি, ড্রেস, স্টেডিয়ামের পরিবেশ সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ। রেফারিকে ম্যাচ কমিশনার পর্যবেক্ষণ করবে তবে খেলার বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’
এএফসি পদকপ্রাপ্ত এই ম্যাচ কমিশনার বলেন, 'বজ্রপাত বা বিশেষ পরিস্থিতিতে ম্যাচ কমিশনার রেফারিকে খেলা বন্ধ করতে বলতে পারেন। আবার বিশেষ প্রয়োজনে রেফারি কোনো বিষয়ে দ্বিধান্বিত হলে সেক্ষেত্রে ম্যাচ কমিশনারের শরণাপন্ন হতে পারেন। ম্যাচ কমিশনার সরাসরি রেফারিকে বলতে পারেন না।'
ম্যাচ কমিশনার একটি ম্যাচের সার্বিক দায়িত্বে থাকেন। রেফারিকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও তার। রেফারির কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হলে সেটি কমিশনার তার রিপোর্টে দিতে পারেন তবে ম্যাচ চলাকালে সেটি শুধরাতে বলার এখতিয়ার নেই।
রেফারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ভারত মাঠে ফিরল না। এতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা। এই আইন ব্যতয় হওয়া নিয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গৌতম কর, 'ম্যাচ কমিশনারের আওতার বিষয়টি আমি বললাম। এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করব না।’
এই টুর্নামেন্টে ম্যাচ কমিশনার ছিলেন দু’জন। একজন শ্রীলঙ্কান, আরেকজন ভারতীয়। শ্রীলঙ্কান ডি সিলভা এএফসির গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কমিশনারের দায়িত্ব পালন করলেও ফিফা নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনিও ম্যাচ পাননি অনেক দিন। শ্রীলঙ্কার উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তিনি আবার সক্রিয় হয়েছেন।
বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ কমিশনার নেই। আগে ছিলেন বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। তিনি ফিফার দুই বছরের নিষেধাজ্ঞায়। সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালও ম্যাচ কমিশনার। কিছু দিন আগে তিনি এএফসির সম্মাননাও পেয়েছেন ম্যাচ কমিশনার হিসেবে। ৬৫ বছরের উর্ধ্ব ব্যক্তিদের এএফসি সম্মাননার মাধ্যমে বিদায় জানিয়েছে। ফলে তিনিও এখন সক্রিয় ম্যাচ কমিশনার নন।
বাফুফের কম্পিটিশন ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারি ম্যাচ কমিশনারের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। সেই পরীক্ষার উত্তর অবশ্য এখনো আসেনি।
এজেড/এইচজেএস