অলিম্পিয়ানদের গুরুতে শুরু দুই সাঁতারুর
বাংলাদেশের দুই তারকা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও অনীক ইসলাম জাপানের টোকিওতে এক মাসের কোচিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জাপান সাঁতার দলের সাবেক কোচ নরিমাসা হিরাই অধীনে টোয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে আগামীকাল দেশে ফিরবেন এই দুই সাঁতারু।
নরিমাসা হিরাই আন্তর্জাতিক সাঁতারে অত্যন্ত বড় মাপের কোচ। অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা এবং বিশ্ব রেকর্ড করা অনেক সাঁতারুই তার শিষ্য। এমন একজন কোচের কাছে এক মাস কোচিংয়ের দীক্ষা নিয়ে অনেক কিছুই শিখেছেন দুই সাঁতারু। দুই বার অলিম্পিক খেলা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগরের এক মাসের কোচিং ট্রেনিং শেষে উপলব্ধি, 'সাঁতার টাইমিং নির্ভর খেলা। এখানে এসে বুজলাম কোচদের টাইমার ধরাটাও যে কতটা আধুনিক এবং বিজ্ঞান সম্মত। টাইমিং ধরা থেকে অনুশীলনে সময় বিভাজন সহ সব কিছুই শিখেছি হাতে-কলমে’ টোকিও থেকে বলেন সাগর।
সাগর-অনীক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে এক মাস কোচিংয়ের বিভিন্ন বিষয় রপ্ত করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি পুলে আধুনিক সকল কিছুই রয়েছে। আর সেখানে বাংলাদেশে শীতের সময় জাতীয় সুইমিংপুলে অনুশীলন করা যায় না আর একবিংশ শতাব্দীতেও হ্যান্ডটাইমিং। তাই দুই সাঁতারুর কন্ঠেই ঝরল আফসোস, 'আমরা এখানে অনেক কিছুই দেখলাম ও শিখলাম কিন্তু আমাদের দেশে সাতারে সীমাবদ্ধতা। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা যেমন তেমনি ট্যাকনিক্যালও। কোচিংয়ে দেশের সঙ্গে এখানে ভিন্নতা পেয়েছি অনেক।’ টোকিও’তে রয়েছে বেশ কয়েকটি সুইমিং সেন্টার। যেখানে বাচ্চারা তিন বছর বয়স থেকে সাতার শেখেন। আবার সেখান থেকেই অনেকে অলিম্পিকে স্বর্ণও জেতেন। টোকিও’র এই সাঁতার কাঠামোর আধুনিক রুপকার হিসেবে ধরা হয় হিরাইকে। তিনি অবশ্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতীয় দল থেকে খানিকটা দূরে রয়েছেন।
সাগর গত বছর বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন আয়োজিত একটি কোচিং কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন। বিশ্ব সাঁতার ফেডারেশনের একজন উন্নত মানের ইন্সট্রাকটর এসেছিলেন। সেই কোর্সের চেয়ে এই ট্রেনিং অনেক কার্যকরি বলে মন্তব্য করেছেন, 'ঐ জাতীয় কোর্সগুলো অনেকটাই তাত্ত্বিক। এখানে আমরা একেবারে ব্যবহারিক শিখেছি। কিভাবে কোন সময় কোনটা করতে হয়।’
এক মাস কোচিং ট্রেনিং পর অনীক ইসলামের পর্যবেক্ষণ, 'এক মাস খেলোয়াড় বা কোচ কারো শেখার জন্য পুরোপুরি পর্যাপ্ত নয়। এরপরও এখানে আমরা একেবারে বেসিক ট্রেনিং করানো থেকে শুরু করে উচ্চতর ট্রেনিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো জেনেছি বিশেষভাবে। যা আমাদের পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত কাজে দেবে।’ সদ্য অবসরে যাওয়া সাগর এবং অনীককে জাতীয় দলে সহকারী কোচ হিসেবে কাজের সুযোগ দিয়েছে ফেডারেশন। তবে জাপান থেকে অনীকের ভিন্ন উপলব্ধি, 'আমরা এখানে যা শিখলাম সেটা প্রকৃতভাবে ব্যবহার করতে হলে আমাদের একেবারে তৃণমূলে সাঁতারুদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সিনিয়র যারা রযেছে তারা একটি পদ্ধতির মধ্যে বেড়ে উঠেছে। আধুনিক এই শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে।’
জাপানে বাংলাদেশের দুই সাঁতারুর কোচিং কোর্সের ব্যবস্থা করেছেন বাংলাদেশের সাতারের অকৃত্রিম বন্ধু তাগুচি। তার প্রচেষ্টায় দুই সাঁতারুর কোচিং কোর্সের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো ফি প্রদান করতে হয়নি। যাতায়াত ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছেন। এক মাসে তার দুই শিষ্য কোচিংয়ের অনেক কিছু রপ্ত করায় সন্তুষ্ট, 'তারা অনেক কিছুই শিখেছে। সামনে এগুলো প্রয়োগ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা, ভারত সাতারে এগিয়ে। নেপালও অনেক কাজ করছে। বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ কোচিংয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, 'দেশীয় কোচদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অনুধাবন করে আমরা দুই জনকে জাপান পাঠিয়েছি। সামনেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করব। তাদের এই অর্জিত জ্ঞান সাতারে প্রয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করা হবে।’
এজেড/এইচজেএস