তামিমের আক্ষেপের দিনে সৌরভ ছড়ালেন শান্ত

শুরুটাই ছিল চমক জাগানিয়া। মুমিনুল হক পাল্লেকেলের ঘাসে ঢাকা উইকেটে অনেকটা সাহসী সিদ্ধান্তই নিলেন। টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়কের প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তে নিশ্চিত খুশি হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্যাপ্টেন দিমুথ করুনারত্নে। কিন্তু ফর্মে থাকা লঙ্কান পেসারদেরই উল্টো চমকে দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
সাহসের জয় হলো টাইগারদের। ক্যান্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০২ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল হক অপরাজিত ৬৪ রান নিয়ে আছেন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে, যিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত আছেন ১২৬ রানে। মাত্র ১০ রানের আক্ষেপে পুড়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। আউট হন নার্ভাস নাইনটিতে ঠিক ৯০ রানে। একমাত্র ব্যর্থ হয়েছেন সাইফ হাসান, ফিরেছেন শূন্য রানে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার সাইফ হাসানের ফ্লাইট মিস করা উইকেট স্বাগতিক শিবিরে ভয় ধরিয়ে দেয়। সেই শঙ্কা অবশ্য পরে উবে গেছে। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন তামিম ও শান্ত। প্রথম সেশনে দলের আর কোনো বিপদ হতে দেননি দুজন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মধ্যাহ্নভোজের আগেই ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন তামিম। দ্বিতীয় সেশনে তার সামনে শতক হাঁকানোর সুযোগ ছিল, তবে বিশ্ব ফার্নান্দোর বাইরে বল খোঁচা দিয়ে বের করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। শতক থেকে ১০ রান দূরে থাকতে ৯০ রানে সাজঘরে ফেরেন ড্যাশিং ওপেনার।
তামিম আক্ষেপে পুড়লেও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। দ্বিতীয় সেশনটা মুমিনুলকে নিয়ে কাটানোর ফাঁকে পঞ্চাশ রানের কোটা পূর্ণ করেন তিনি। তৃতীয় ও শেষ সেশনে ২৩৫ বল খেলে প্রথম শতকের স্বাদ পান শান্ত। এই সেশনে নিজের ফিফটি তুলে নেন অধিনায়ক মুমিনুলও। আগের দুই সেশনে একটি করে উইকেট হারালেও শেষ সেশনে কোনো উইকেট দেয়নি টাইগাররা। দিন শেষে বড় সংগ্রহের দিকে ছুটছে বাংলাদেশ দল।
প্রথম দিনের খেলা শেষে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৩০২ রান। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছেদ্য ১৫০ রানের জুটি শান্ত-মুমিনুলের। যেখানে শান্ত ১২৬ ও মুমিনুল ৬৪ রানে অপরাজিত।
গত ১২ এপ্রিল শ্রীলঙ্কাগামী বিমান ধরার আগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টিম লিডারের দায়িত্ব পাওয়া খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেশন ধরে খেলা। চট্টগ্রামের (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) মতো পাঁচদিনের ম্যাচ চারদিন দখলে নিয়ে শেষদিনে হারতে চাই না।’
শ্রীলঙ্কায় গিয়ে একমাত্র দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিন গত ১৭ এপ্রিল নাজমুল হোসেন শান্ত প্রায় একই কথা বলেন। দলের সুদূরপ্রসারী কোনো ভাবনা নেই বলে জানান তিনি। শান্ত বলেন, ‘টেস্ট খেলাটাই এ রকম। যে যত ধৈর্য নিয়ে, সময় নিয়ে ব্যাটিং বা বোলিং করবে, সফল হওয়ার সম্ভাবনা তারই বেশি। আমরা যদি সেশন বাই সেশন চিন্তা করি, তাহলে আরেকটু সহজ হবে।’
মূল লড়াইয়ের আগে অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট বা দলের কোনো সদস্য গণমাধ্যমের দঙ্গে কথা বললে অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি সাজান। মাঠের ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ বধে সেটি প্রয়োগ হয় সামান্যই। তবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে যেন বদ্ধপরিকর টাইগাররা। টানা ৮ ম্যাচ হারের ক্ষত কাটিতে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া গোটা দল। সফলতা ধরতে যে পরিকল্পনা এঁটেছিল ম্যানেজমেন্ট, ক্যান্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে সে পথেই হাঁটতে দেখা গেল বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: প্রথম দিন শেষে, ৩০২/২, ৯০ ওভার (শান্ত ১২৬*, তামিম ৯০, মুমিনুল ৬৪*; বিশ্ব ২/৫২)
টিআইএস/এটি/জেএস