‘ক্রিকেটাররা নয়, এখন রাজনীতির লোকেরা বোর্ড চালাচ্ছে’

কদিন আগেই পাকাপাকিভাবে ব্যাট প্যাড তুলে রেখেছেন ভারতীয় ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি। সৌরভ গাঙ্গুলীর পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে জাতীয় দলে আলো কেড়েছিলেন এই ক্রিকেটার। যদিও চোটের কারণে নিয়মিত হতে পারেননি। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পর রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছেন। হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী। রাজনীতির পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও বিচরণ ছিল মনোজের। লক্ষ্য ছিল বাংলার হয়ে ভারতের মর্যাদার রঞ্জি ট্রফির শিরোপা জেতার। তবে সেই ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
সব ধরণের ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণার পর একের পর এক মন্তব্য করছেন মনোজ। দিন দশেক আগে একটি টুইট করেছিলেন তিনি। রঞ্জি ট্রফির গুরুত্ব কীভাবে কমছে এবং কীভাবে এই প্রতিযোগিতা তার জৌলুস হারাচ্ছে, তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। তারপরই ঈশান কিষানদের মতো কিছু ক্রিকেটারকে উদ্দেশ্য করে নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির বোর্ড। তা শুনে মনোজ তিওয়ারির মনে হচ্ছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়’ হয়েছে বিসিসিআইয়ের। তার মতে, এখন বোর্ড চালাচ্ছেন রাজনীতির লোকেরা। সে কারণেই অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।

গত সোমবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন মনোজ তিওয়ারি। ক্রিকেটারদের উদ্দেশে বোর্ড সচিব জয় শাহ যে মেইল পাঠিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গ ওঠে সংবাদ সম্মেলনেও। মনোজ বলেন, ‘রঞ্জি ট্রফির মূল্যটা এখন কমে যাচ্ছে। কিছু বললেই নির্বাসিত করবে, জরিমানা করবে। এখন বোর্ড খেলোয়াড়রা চালাচ্ছে না। চালাচ্ছে কিছু রাজনীতির লোকজন। এটাই বাস্তব। কিছু বললেই নির্বাসিত হতে হবে। একটা টুইটের জন্য আমার ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা করা হয়েছে। আগে মুখ খুললে আজকের এই সংবর্ধনার দিনটা আমার দেখা হত না। হয়তো ক্রিকেটজীবন আগেই শেষ হয়ে যেত। রঞ্জি ট্রফি শেষ হলে আরও অনেক কিছু বলতে পারি। রঞ্জি ট্রফির যে গুরুত্ব সেটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করব।’ প্রসঙ্গত, বোর্ড সচিব জয় শাহ হলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা শাসকদল বিজেপির নেতা অমিত শাহের ছেলে।
আরও পড়ুন
বোর্ডের সেই নির্দেশিকা সম্পর্কে মনোজ আরও বলেছেন, ‘বোর্ড এই নির্দেশ জারি করার পর ঘরে বসে ভাবছিলাম, আমি টুইট না করলে বোধহয় এটা হতো না। বোর্ড এখন এটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি কিন্তু অনেকদিন ধরেই বলছিলাম এই বিষয়ে। যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কম ম্যাচ খেলেছে কিন্তু আইপিএল খেলে বিখ্যাত হয়েছে, তারা এখন শুধু আইপিএলকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি এই প্রবণতা লক্ষ করেছি। তরুণ ক্রিকেটারেরা দেখতাম শুধু আইপিএল নিয়েই আলোচনা করছে। রঞ্জি ট্রফি চলার সময়ে বিশেষ করে হয় এটা। কারা করে সেটা এখন সবাই জানে।’
বোর্ডের উদ্দেশে পরামর্শও দিয়েছেন মনোজ। আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘ভারতে যা প্রতিভা রয়েছে তা অস্ট্রেলিয়াতেও নেই। অথচ আইসিসি ট্রফি জয় দেখুন, ওরা কতগুলো পেয়েছে আর আমরা কত কম পেয়েছি। এটা উল্টো হওয়ার উচিত ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে প্রতিভা তুলে এনে তাদের ঠিক ভাবে লালন-পালন করতে হবে। রঞ্জি ট্রফির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় তাদের আইসিসি ট্রফি জেতার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।’
অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে আরও সময় দিতে পারবেন বলে মনে করেন মনোজ। কিন্তু ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকা, অর্থাৎ কোচ হওয়া বা একাডেমি খোলার পরিকল্পনা কি রয়েছে? কোচ প্রসঙ্গে স্পষ্ট উত্তর না দিলেও একাডেমি নিয়ে মনোজ বলছেন, ‘যদি পুরোপুরি সময় দিতে না পারি, তাহলে করব না। এখন দেখছি, একাডেমিতে যে বাচ্চা ছেলেরা খেলতে আসে তাদের স্বপ্ন গুলো কোথাও না কোথাও ভেঙে যাচ্ছে। সবাই একটা স্বপ্ন নিয়েই খেলতে আসে। কিন্তু যথাযথ পরামর্শ না পাওয়ার ফলে সেগুলো শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। যেদিন মনে হবে পুরো সময় দিতে পারব সে দিন অবশ্যই খুলবো।’
এফআই