সালতামামি ২০২০: করোনার বছরে বায়ার্নের জয়জয়কার

করোনাভাইরাস। নানা সম্ভাবনার বছরের একটা বড় অংশে স্থবিরতা ‘উপহার’ দিয়েছে বৈশ্বিক এই মহামারি। ফুটবলও বাদ থাকবে কেন? ফুটবলেও ছিলো একটা বড় সময়ের স্থবিরতা। শেষমেশ নতুন স্বাভাবিকতা নিয়ে ফিরলেও রেশ যে রয়ে গেছে, তা বলাই বাহুল্য! এর পরও নানান ঘটন অঘটনের কমতি ছিলো না বিদায়ী ২০২০ এ। বছরের শেষ দিনে এসে ফিরে দেখা যাক, কেমন ছিল পরবর্তিত পরিস্থিতির ফুটবল।
ফুটবলের করোনার থাবা, সূচি বদল
বছরের বড় দুটো ফুটবল আসর, ইউরো আর কোপা আমেরিকা পিছিয়ে গেছে করোনাভাইরাসের ছোবলে। দুটো আসরই অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর, ফলে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপকে।
না খেলেই শিরোপা পিএসজির!
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের চারটিই করোনা মহামারীর কারণে স্থগিত থাকার পর ফিরেছে নতুন স্বাভাবিকতা নিয়ে। তবে ফরাসি লিগ ওয়ান সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। লিগ স্থগিত করার দুই মাস না যেতেই গত এপ্রিলের শেষ দিকে মৌসুম বাতিল করে দেয়া হয়। গত ৩০ এপ্রিল শেষমেশ ঘোষণা আসে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা পিএসজির হাতেই উঠছে শিরোপা।
নতুন স্বাভাবিকতার ফুটবল শুরু বুন্ডেসলিগার হাত ধরে
প্রায় দুই মাসের অনাকাঙ্খিত বিরতি শেষে সবার আগে মাঠে ফেরে জার্মান শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগা। তবে নতুন স্বাভাবিকতার একগাদা নিয়মের কড়াকড়ি ছিলো এখানে, দুই দল আর ম্যাচের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০০জনের প্রবেশাধিকার মেলে মাঠে, দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই পাননি মাঠে আসার অনুমতি।
বাড়তি বদলির নিয়ম
করোনার কারণে আরও অনেক নিয়মের পরিবর্তন এসেছে। যেমন প্রতি ম্যাচে বদলির সংখ্যা। আগে তিনজন থাকলেও করোনাফেরত ফুটবলের ঠাসবুনোটের সূচির কথা ভেবে বদলির সংখ্যা বাড়িয়ে ৫ এ উন্নীত করা হয়। তবে সেটা এখন কোচেরা করতে পারেন প্রথমার্ধ বিরতি ছাড়া তিনটি ভিন্ন সময়ে। এছাড়া নিয়মিত কোভিড পরীক্ষার নীতিমালা তো আছেই! জার্সি বদল, আর মাঠে থুথু ফেলা, সতীর্থদের সঙ্গে দূরত্ব না মেনে উদযাপনেও ছিলো কড়া নিষেধাজ্ঞা।
শেষ লিভারপুলের অপেক্ষা
প্রিমিয়ার লিগ যুগে শিরোপা না জেতার আক্ষেপ সবসময়ই তাড়িয়ে বেড়াত লিভারপুলকে। সে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে এই বছর। ৩০ বছর পর ইংলিশ সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল শিরোপা উঁচিয়ে ধরার স্বাদ পায় দলটি।
নতুন কাঠামোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্নের শিরোপা
দ্বিতীয় রাউন্ড তখনো শেষ হয়নি, স্থগিতাদেশ আসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের উপরও। ফেরার পর দ্রুততম সময়ে মৌসুম শেষ করার জন্যে শেষ আট থেকে পর্তুগালের লিসবনে জৈবসুরক্ষা বলয়ে এক লেগে টুর্নামেন্ট পদ্ধতিতে আয়োজন করে উয়েফা। ভিন্ন রূপের এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বেশ দাপট নিয়েই শিরোপা জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ, পথে আছে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে হারানোর গৌরবও। এর ফলে দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় ট্রেবল জেতার কীর্তি গড়ে দলটি।
মেসির ‘ব্যুরোফ্যাক্স’
বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার অভিপ্রায় জানিয়ে লিওনেল মেসি ক্লাবকে একটি ব্যুরোফ্যাক্স পাঠান গেলো ২৫ আগস্ট। তবে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ ৭০০ মিলিয়ন ইউরো ছাড়া তাকে ছাড়তে অসম্মতি জানায়। ফলে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় দুই পক্ষের। সব শেষে ৫ সেপ্টেম্বর গোল ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি শেষমেশ থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।
রোনালদোর ‘সেঞ্চুরি’
ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলের শতক অর্জন করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। গত সেপ্টেম্বরে সুইডেনের বিপক্ষে নেশন্স লিগের ম্যাচে জোড়া গোল করে এ কীর্তি গড়েন তিনি। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়ও আছেন দুইয়ে। শীর্ষে থাকা ইরানের আলী দায়ীর ১০৯ গোলের পেছনে ছুটছেন তিনি।
ফের মেসি-রোনালদো
রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্তাসে যোগ দেয়ার পর থেকে মেসির সঙ্গে আর মুখোমুখি হওয়া হয়নি রোনালদোর। চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্তাস আর বার্সেলোনা একই গ্রুপে পড়ায় সে সম্ভাবনা আবারও তৈরি হয় তাদের। তবে প্রথম লেগে রোনালদো করোনাক্রান্ত হওয়ায় দেখা হয়নি দুজনের। ফিরতি লেগে অবশ্য ফিট ছিলেন, জোড়া গোল করে দলকেও জিতিয়েছেন ৩-০ ব্যবধানে।
লেভান্ডভস্কির জয়জয়কার
৪৭ ম্যাচে ৫৫ গোল। সঙ্গে যদি যোগ হয় ক্লাবের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপাও, বর্ষসেরার পুরস্কারটা তার হাতে না ওঠাটা বেমানানই বটে। না, সেটা হয়নি। রবার্ট লেভান্ডভস্কির হাতেই উঠেছে ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার। তবে আক্ষেপ একটু আছে বৈকি! করোনার কারণে স্থগিত ঘোষণা না হলে যে ব্যালন ডি’অরটাও উঠতো তারই হাতে!
না ফেরার দেশে ম্যারাডোনা
এ বছরই না ফেরার দেশে চলে গেছেন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। মাত্র ৬০ বছর বয়সেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে ফুটবলে মৃত্যুর খবর একমাত্র নয় এটি। বিদায়ী মাসে পাওলো রসি, আলেহান্দ্রো সাবেয়াদের মতো কিংবদন্তিরাও পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে।
পেলেকে টপকে মেসি
অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চলতি ডিসেম্বরেই মেসি ভেঙেছেন সান্তোসের হয়ে পেলের ৬৪৩ গোলের রেকর্ড। এক ক্লাবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি এখন মেসির, করেছেন ৬৪৪ গোল।
এনইউ