রিয়ালের ‘অপ্রতিরোধ্য যাত্রা’ নাকি বায়ার্নের ‘প্রতিশোধ’
ইউরোপিয়ান ফুটবলে নানা সময় উত্তাপ ছড়িয়েছে বিভিন্ন ক্লাবের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় দ্বৈরথ। বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদের দ্বৈরথও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। একদল স্প্যানিশ ফুটবলের রাজা, শুধু স্প্যানিশ ফুটবল নয় গোটা ইউরোপেই রাজত্ব করায় রিয়াল মাদ্রিদের জুড়ি মেলা ভার। অন্যদিকে বায়ার্ন মিউনিখ জার্মান ফুটবলের ধারক-বাহক। পাওয়ার ফুটবলের দেশে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন তারা। মুখোমুখি লড়াইয়েও দুই দলের রেকর্ড কাছাকাছি। আজ রাত ১টায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের ১ম লেগে মুখোমুখি হবে এই দুই জায়ান্ট।
বায়ার্ন মিউনিখ এবং রিয়াল মাদ্রিদ যুগে যুগে উপহার দিয়েছে বহু আইকনিক ম্যাচ। এ প্রসঙ্গে একটা তথ্য পাঠকের আগ্রহ বাড়াবে। এই দুই দল যখনই মুখোমুখি হয়েছে, কোনো ম্যাচই গোলশূন্য ড্র হয়নি। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সেবার ৩-১ অ্যাগ্রিগেটে জয় তুলে নিয়েছিল বায়ার্ন।
এরপর থেকে দুই দল বহুবার একে অন্যের বিপক্ষে খেলেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বায়ার্নের হতাশা একটু বেশি। দুই দলের সবশেষ তিন দেখায় রিয়াল হেসেছে শেষ হাসি। ২০১৩-১৪ এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে এই রিয়ালের কাছে হেরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বায়ার্নকে। বায়ার্নের জন্য আজকের লড়াইটা তাই অনেকটা প্রতিশোধের।
প্রতিযোগিতা যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সেখানে রিয়াল মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন তারা।
নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী দল সাজাতে কার্লো অ্যানচেলত্তির জুড়ি মেলা ভার। আধুনিক চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছেন এই কোচ।
সবশেষ ম্যাচে অ্যানচেলত্তি দলকে খেলিয়েছেন ষাটের দশকের বিখ্যাত কাতেনাচ্চিও ফরমেটে। যেখানে রক্ষণ করে যাওয়াই শেষ কথা। এর আগে আবার খেলিয়েছেন নিখুঁত স্প্যানিশ ঢঙয়ের ফুটবল। রিয়ালকে তাই বোঝা বেশ কষ্টকর।
রিয়াল মাদ্রিদ ২০১২ সালে এই বায়ার্নের কাছে সেমিতে হেরেছিল। এরপর টুর্নামেন্টে অধুনা যুগের সবচেয়ে বড় আধিপত্য দেখায় তারা। ২০১৪ সালে জয় করে দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে জিনেদিন জিদান জয় করেন টানা তিন শিরোপা। অনেকের ধারণা, রিয়ালের এমন অপ্রতিরোধ্য যাত্রার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ২০১২ সালের বায়ার্নের বিরুদ্ধে সেই হার।
২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথ থেকে রিয়ালই বিদায় করেছে বায়ার্নকে। তাই মঙ্গলবার রাতে বায়ার্ন নামবে প্রতিশোধের নেশায়।
হেড টু হেড
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ১২ বার জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১১ বার জিতেছে বায়ার্ন। ড্র হয়েছে বাকি তিন ম্যাচ। এখন পর্যন্ত ৭ বার সেমিফাইনালে দেখা হয়েছে দুই দলের। তাতে অবশ্য জয়ের পাল্লা ভারী বায়ার্নের। চারবার রিয়ালকে টপকে ফাইনাল খেলেছে তারা। বাকি তিনবার ফাইনালে গিয়েছে রিয়াল। যদিও শেষ দুইবার রিয়ালই হেসেছিল শেষ হাসি।
দুই দলের লড়াইয়ে রিয়াল গোল দিয়েছে ৪১টি। পিছিয়ে নেই বায়ার্ন। তারা দিয়েছে ৩৯ গোল।
বায়ার্নকে স্বস্তি দিতে পারে কোচ টমাস টুখেলের দুর্দান্ত রেকর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে কখনোই হারেননি আক্রমণাত্মক ধাঁচের এই কোচ। চেলসিকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে রিয়ালকেই হারিয়েছিলেন টুখেল। আজকের ম্যাচেও নিশ্চিতভাবেই রিয়ালকে আবার পরাজয়ের স্বাদ দিতে চাইবেন এই ‘পাওয়ার’ কোচ।
জেএ