শিক্ষা নেয়নি কিংস ও ফুটবলাররা!
ম্যাচের তখন ৭৯ মিনিট। প্রতিপক্ষ আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে ম্যাচ। যে কোনো মুহূর্তে আবাহনী ম্যাচে সমতা আনার মতো উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে কিংসের দুই ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল ও রবসন রবিনহো মনোমালিন্য করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলেন। দুই জনকে শান্ত করতে দুই দিকে ছুটলেন দলের অন্য ফুটবলাররা। দুই জনকে শান্ত করে ফেরাতে প্রায় এক মিনিট খেলা স্থগিত ছিল। পরে অবশ্য দুই জনই খেলেছেন এবং জয় নিয়ে কিংস মাঠ ছেড়েছে।
দুই ব্রাজিলিয়ানই ভালো মানের ফুটবলার ও উচ্চ সম্মানীতে খেলছেন। মাঠে বোঝাপড়া বা সম্পর্কের অবনতি হতেই পারে তাই বলে আর্মব্যান্ড ছুড়ে ফেলে দেয়া এবং মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। দুই বিদেশি ফুটবলারের এমন আচরণে বেশ বিস্মিত কোচিং স্টাফ ও টিম ম্যানেজম্যান্ট।
বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন বাংলাদেশের ফুটবলের অসঙ্গতি নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন নানা সময়ে। বিশেষ করে কিংসের মুল প্রতিপক্ষ আবাহনী ও ফেডারেশন সম্পর্কে সমালোচনা করে ম্যাচ নিষেধাজ্ঞাও পড়েছিলেন। এএফসির কড়া সমালোচনা করা এই কোচ নিজ দলের বিদেশি ফুটবলারদের বিশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে একেবারে নিশ্চুপ। এই ব্যাপারে মন্তব্য চাওয়া হলে একেবারেই সাড়া দেননি এই স্প্যানিশ কোচ। গতকালই প্রথম নয় কিংসের বিদেশি ফুটবলাররা চলতি মৌসুমে বেশ কয়েকবারই মাঠে অত্যন্ত অখেলোয়াড়িসুলভ আচরণ করেছেন। ম্যাচ জয়ের সফলতা কোচের থাকলে এই বিশৃঙ্খলা দমন না করার ব্যর্থতাও তার কাঁধে বর্তায়।
হেড কোচ মন্তব্যহীন থাকায় অন্য কোচিং স্টাফদেরও এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ। একজনের কাছ থেকে কালকের ঘটনার খানিকটা আভাস পাওয়া গেল এ রকম, ‘তিন ব্রাজিলিয়ান একই সাথে থাকে ক্লাবে। ভালোই সম্পর্ক তাদের মধ্যে; রবসন বেশ কয়েকবার ভালো পজিশনে থাকলেও মিগুয়েল তার দিকে বল বাড়ায়নি। তাই এই ঘটনার সৃষ্টি।’ এই মন্তব্যের প্রকৃত সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি কারণ অন্য সবার কথা, ‘এ ব্যাপারে মন্তব্য করা নিষেধ। আজ-কাল ছুটি। পরশু মিটিং হলে পরে বলা যাবে।’
আরও পড়ুন
ঘরোয়া ফুটবলে এক সময় নিম্ন মানের বিদেশি ফুটবলার আসত। ২০১৮ সালে বসুন্ধরা কিংস প্রিমিয়ার ফুটবলে এসেই রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসকে এনে চমক সৃষ্টি করে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলা হার্নান বার্কোস সহ প্রতি মৌসুমেই কিংসে অত্যন্ত উচু মানের বিদেশি ফুটবলার এনেছে।
তবে এবার চলতি মৌসুমে কিংসের বিদেশি ফুটবলারদের মাঠে অত্যন্ত বাজে আচরণ বেশি চোখে পড়েছে। ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল রহমতগঞ্জের ম্যাচে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে গলা চেপে ধরেছিল। রেফারি দেখেও না দেখার ভান করেছিল। বাংলাদেশি রেফারিরা নানা প্রভাবে এড়িয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবশ্য বড় খেসারত দিতে হয় কিংস ও বাংলাদেশকে।
বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া লিগে টানা চার বার চ্যাম্পিয়ন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এএফসি কাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। মালদ্বীপের মালের পর গত আসরের বিদায়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও তর্কযুক্ত থাকলেও কিংসের উজবেক ফুটবলার গফুরভও দায় এড়াতে পারে না। কিংস অর্ধ থেকে বল বেরিয়ে প্রতিপক্ষের অর্ধে যাচ্ছে এমন অগুরুত্বপূর্ণ এক বল দ্রুতগতিতে স্লাইডিং ট্যাকেল করতে গিয়ে লাল কার্ড দেখেছেন। এরপরই কিংস মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।
গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের উড়িষায় অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচ থেকে কিংসের খেলোয়াড় ও ম্যানেজম্যান্টের শিক্ষা ঘরোয়া ফুটবলে চলতি মৌসুমে পরিলক্ষিত হয়নি। বিদেশি ফুটবলাররা প্রায়ই অসদাচরণ ও অত্যন্ত বাজে ফাউল করছেন৷ দেশি রেফারিরা অনেক সময় এগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন। যে সকল রেফারি কার্ড দিয়ে সতর্ক ও ম্যাচের শৃঙ্খলা বজায় রাখেন তাদের আবার কিংস কর্মকর্তারা ফেডারেশনে বারণ করেন ম্যাচ দিতে!
এজেড/জেএ