রোলা গ্যারোতে নাদালের সামনে কিছুক্ষণ

২৬ জুলাই সকাল থেকেই প্যারিসের আকাশে বৃষ্টি ঝরছে। পরের দিন বিকেলেও অনবরত পড়ছিল বৃষ্টির ফোটা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রোলা গ্যারোর দিকে রওনা।
পোর্তে মেলিয়তের মিডিয়া শাটল রোলা গেরোতে মিনিট বিশেকের বেশি লাগেনি। শাটল থেকে নামতেই দেখা গেল লাইন ধরে কেউ আসছেন- আবার কেউ বের হচ্ছেন। বৃষ্টিতে কংক্রিটের প্যারিসে কাঁদা-মাটির দেখা মেলেনি কোথাও। রোলা গ্যারোর পথের ধারে বৃষ্টিতে রাস্তার ধার খানিকটা কর্দমাক্ত। যে কোনো পথিক সহজেই বুঝতে পারছে সে রোলা গ্যারোর পথেই আছে।
আরও পড়ুন
রোলা গ্যারোতে প্রবেশ করতেই যেন অলিম্পিক আবহ। কয়েক হাজার লোক গ্যালারিতে প্রবেশ করছেন। বড় কমপ্লেক্সের লোনে বসে কেউ আড্ডা দিচ্ছেন আবার কেউ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে লেখার বিশ্লেষণ করছেন। রোলা গ্যারোতে নানা দেশের নানা বর্ণের মানুষ। অলিম্পিকের পূর্ণ আবহ যেন রোলা গ্যারোতেই।

রোলা গ্যারো একটি বড় টেনিস কমপ্লেক্স। তিনটি বড় ভেন্যুসহ আরও বেশ কয়েকটি কোর্ট রয়েছে। মূল কোর্টের নাম ফিলিপ চ্যাতরিয়ের। ফরাসি টেনিস তো বটেই বিশ্ব টেনিসের অন্যতম পুরোধা ছিল। তিনি বিশ্ব টেনিসের সভাপতি থাকাবস্থায় অলিম্পিকে আবার টেনিস ফিরিয়েছেন। ফরাসি টেনিসকে নিয়েছেন ভিন্ন উচ্চতায়। তাই রোলা গেরোর সবচেয়ে বড় ও মুল কোর্টের নামকরণ হয়েছে তার নামেই। ফরাসি নারী টেনিস খেলোয়াড় সিমন ম্যাথেউর নামে একটি ও সুজানে ল্যাঙ্গেন নামে আরেকটি কোর্টের নামকরণ। এই দুই কোর্টের দর্শক ধারণক্ষমতা ফিলিপের অর্ধেকেরও কম। এই তিনটি কোর্ট ছাড়া অন্য কোর্টের সুনির্দিষ্ট নাম নেই শুধু নাম্বার রয়েছে।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের বিশেষত্ব কোর্ট। ইংল্যান্ডের উইম্বলডন সবুজ ঘাসের, ইউএস ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোর্ট কংক্রিটের আর ফ্রেঞ্চ ওপেন মাটির। এই কোর্ট রাজা স্পেনিশ রাফায়েল নাদাল। ১৪ বার ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতেছেন। উদ্বোধনী দিন মশাল নেওয়ার পরের দিনই ক্লে কোর্টে নেমেছেন নাদাল। দ্বৈতে তার সঙ্গী উইম্বলডন জয়ী কার্লোস আলকারেজ। এই দুই জনের খেলা দেখতে রোলা গ্যারোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। পঞ্চাশ হাজার দর্শকদের করতালি। নাদাল-আলকারেজ হাত উঁচিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন ক্ষণে ক্ষণেই।

খেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই রোলা গ্যারো পীনপতন নিরবতা। পঞ্চাশ হাজার দর্শকের মধ্যে টেনিস বলের প্রতি ড্রপের শব্দ কানে আসে স্পষ্টভাবেই। একটি গেম শেষ হলেই বা দুর্দান্ত সার্ভিস-রিটার্নের পরেই আবার করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে রোলা গ্যারো। রোলা গ্যারোর দর্শকরাও উচ্চ মানের।
রোলা গ্যারো আর নাদাল অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই কোর্টে প্রাণবন্ত নাদালকে দেখা যায়। বয়স ৩৮ হলেও এই কোর্টে এসে যেন প্রাণ ফিরে পান স্পেনিশ কিংবদন্তি। দ্বৈতে কখনো সার্ভিস ঠেকাতে সামনে যাচ্ছেন, কখনো ফোরহ্যান্ড করছেন আবার কখনো কোর্টের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়াচ্ছেন। আলকারেজ কয়েকদিন আগেই উইম্বলডন জিতলেও ক্লে কোর্টে নাদালই তার গুরু। গুরু-শিষ্য বেশ সহজেই আর্জেন্টাইন দ্বৈতকে পরাজিত করেন।

রোলা গ্যারোর ইতিহাস শতবর্ষী। প্রতিটি পরতে পরতে আছে ইতিহাস। ফিলিপ চ্যাতরিয়ের স্টেডিয়ামের গ্যালারির বাইরের অংশে ফ্রেঞ্চ ওপেনজয়ীদের নাম সুন্দরভাবে খোদিত। রোলা গ্যারোতে আছে থ্রি ডি একটি মিউজিয়াম সেন্টারেও। রোলা গেরোর কোর্ট মাটি রক্ষণাবেক্ষণ, ৩০ একরে এত বড় কমপ্লেক্স পরিচালনা এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য জানার চেষ্টা ছিল। বেশ কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রোলা গ্যারোর অফিসের লোকজন অলিম্পিক চলাকালে নেই। গেমস আয়োজক কমিটিই সব পরিচালনা করছেন।
ফ্রান্সের ঐতিহাসিক ক্রীড়া ভেন্যু রোলা গ্যারো। বিশ্বের মধ্যেও অন্যতম। সেই ভেন্যুর মিডিয়া সেন্টার ও ট্রিবিউন খুঁজতে অবশ্য গলদঘর্ম। আধ ঘণ্টা পেরিয়ে মিডিয়া সেন্টার ও ট্রিবিউনে পৌঁছাই। মিডিয়া ট্রিবিউন চার-পাঁচ তলা সমান উচ্চতায়। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ভেন্যু হলেও মিডিয়া ট্রিবিউন অত্যন্ত সরু। ল্যাপটপ নিয়ে সাংবাদিকের কাজ করা ও চলাফেরা খুবই দায়। নিচ তলায় মিডিয়া সেন্টার অবশ্য সুবিশাল। যেখানে হাজার জন সাংবাদিক বসে কাজ করতে পারে। মিডিয়া সেন্টারের পাশেই প্রেস কনফারেন্স কক্ষ। সেটাও খুব বড় নয়। যেখান থেকে নাদাল-ফেদেরারদের বক্তব্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
এজেড/এফআই