সার্চ কমিটির বৈঠকে সাবেক খেলোয়াড়-সংগঠকরা, আগামী সপ্তাহে অ্যাডহক
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করেছিল গত ২৯ আগস্ট। এরপর প্রায় তিন সপ্তাহে এই কমিটি নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা করেছে। আজ (মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো কয়েকটি ফেডারেশনের বর্তমান-সাবেক কর্মকর্তা এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে মত বিনিময় করেছে সার্চ কমিটি।
হকি, বিলিয়ার্ড-স্নুকার্স, দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশেষ এই কমিটি। তিনটি বৈঠকেই ফেডারেশনের বিদ্যমান ও সাবেক কমিটির কর্মকর্তার পাশাপাশি তারকা খেলোয়াড়রাও ছিলেন। তিন ফেডারেশনের সঙ্গে ঘণ্টা চারেক সভা করে মিডিয়ায় কথা বলেছেন সার্চ কমিটির অন্যতম সদস্য মেজর (অব) ইমরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহে কয়েকটি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করব। এর আগে সেই ফেডারেশনগুলোর বর্তমান-সাবেক কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’
আগামীকাল অ্যাথলেটিক্স, কাবাডি ও স্কোয়াশ এবং পরশুদিন টেনিস, ফেন্সিং ও ব্রিজ ফেডারেশনের সঙ্গে বসবে সার্চ কমিটি। ফলে এই নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি আগে গঠন হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করলেন সার্চ কমিটির সদস্য ইমরোজ, ‘প্রথম ধাপে আমরা কয়েকটি ফেডারেশনের কমিটি দেবো, এরপর আবার কয়েকটি ফেডারেশনকে সঙ্গে ডাকব, তারপর আবার কমিটি দেব।’
ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি নিয়ে খানিকটা ধারণাও দিয়েছেন সার্চ কমিটির এই সদস্য, ‘ফেডারেশন ভেদে সার্চ কমিটির সদস্য ১১-১৫ বা ১৭ জনের হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন, এই পদে পরিবর্তনের আভাস ইতোমধ্যে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় দিয়েছেন। এরকম কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। আবার অনেকে দুই মেয়াদের বেশি থাকলেও পদে থাকতে পারেন খেলার সফলতা বা বড় ধরনের কোনো অসঙ্গতি না থাকলে।’
সার্চ কমিটি আজ তিন ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কিছু প্রশ্নমালা দিয়েছেন। যেখানে রয়েছে ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র, জাতীয় দল নির্বাচন প্রক্রিয়া, বিদেশ ভ্রমণের নীতিমালাসহ আরও কিছু বিষয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দুই-তিন দিনের মধ্যে সার্চ কমিটির কাছে এই সংক্রান্ত মতামত বা পরামর্শ প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। এই মতামত বা পরামর্শ অ্যাডহক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান সার্চ কমিটির আরেক সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার, ‘এই প্রশ্নমালার সঙ্গে অ্যাডহক কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক ফেডারেশনের কর্মকর্তারা নেই। খেলাটি সচল ও চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কমিটি গঠন হচ্ছে। আমাদের কমিটির অন্যতম উদ্দেশ্য গঠনতন্ত্র ও ফেডারেশনগুলোর সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন। এজন্যই এই প্রশ্নমালা প্রণয়ন ও মতামত চাওয়া।’
ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিনের। আসন্ন অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ সম্পর্কে ইমরোজের বক্তব্য, ‘আমরা নানা দিক বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটি নাম ফেডারেশন ভিত্তিক অ্যাডহক কমিটি হিসেবে সুপারিশ করব। সেটা অনুমোদন এবং মেয়াদের বিষয়টি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এখতিয়ার।’
সার্চ কমিটি ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কার কার্যক্রম করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ২০১৮ সালের আইনের ভিত্তিতে। সেই আইনেও অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে। সেটারও সংশোধন করার পরামর্শ দেবে এই কমিটি, ‘একটি অ্যাক্ট পরিবর্তন রাষ্ট্রীয় বিষয়। আমরা ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাক্টের কিছু বিষয় সংশোধন প্রয়োজন। সেই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দেবো। তারা প্রয়োজন মনে করলে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারে, না হলে নেই।’
বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ প্রতাপ শঙ্কর হাজরা আজ এসেছিলেন সার্চ কমিটির বৈঠকে। তিনি হকি ফেডারেশনের অসঙ্গতি ও সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো অবহিত করেছেন। জাতীয় হকি দলের তারকা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি ফেডারেশনের শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া ও পরবর্তী আপিল সিস্টেম নিয়ে কথা বলেছেন। দাবা ফেডারেশন নিয়ে আলোচনায় ছিলেন সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহমেদ ও দুই গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব এবং রিফাত বিন সাত্তার। তারাও দাবা ফেডারেশনের বিভিন্ন দিক নিয়ে মন্তব্য পেশ করেছেন। দাবা ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীমও ছিলেন। হকি ফেডারেশন থেকে ছিলেন দুই নির্বাহী সদস্য ইউসুফ আলী ও তারিকউজ্জামান। সাবেক দুই তারকা রফিকুল ইসলাম কামাল ও মামুনুর রশীদও ছিলেন আলোচনায়।
এজেড/এএইচএস