নির্ঘুম রাতে ক্যারিয়ারের ১২ বছর কেটেছে শচীনের!

ক্রিকেট যতটা না শারীরিক কসরতের খেলা, তার থেকে ঢের মানসিক বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মানসিক অবসাদে বাইশ গজের পাঠ চুকিয়ে দিয়েছেন। মানসিক চাপ নিতে না পেরে সাময়িক বিরতিতে যাওয়ার উদাহরণ আছে অনেক। মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, স্টিভ হার্মিসন, ম্যাথু হোগার্ড, শন টেইট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের মতো খেলোয়াড়েরা ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে মানসিক অবসাদে ভুগেছেন। এবার নিজের মানসিক অবসাদের কথা সামনে আনলেন শচীন টেন্ডুলকার।
ইংল্যান্ডের সাবেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ট্রেসকোথিকের সৌজন্যে তো ক্রিকেট-বিশ্ব বেশ আগেই জেনেছে মানসিক অবসাদ ক্রিকেটারদের একটি রোগ। সেটি বেশ ভয়াবহ। ট্রেসকোথিক, ট্রটরা এ অবসাদে ভুগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। ফ্লিনটফ, হার্মিসন ও হগার্ডের মতো কেউ কেউ অবসাদের সঙ্গে লড়েই চালিয়ে গেছেন ক্রিকেট খেলা। আবার অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার শন টেইট, অলরাউন্ডার ম্যাক্সওয়েলদের মতো অনেকেই অবসাদের জন্য কিছুদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থেকেছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন জানিয়েছেন মানসিক অবসাদ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে কিভাবে গ্রাস করেছে। এর জন্য প্রায় এক যুগ উৎকণ্ঠা আর নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তিনি। পরে মানিয়ে নিতে শুরু করেন শচীন।
শচীন জানান, ‘সময়ের সঙ্গে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, খেলার জন্য শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। আমার ভাবনায় খেলা শুরু হয়ে যেত আমি মাঠে প্রবেশ করার অনেক আগে থেকেই। উৎকণ্ঠার মাত্রা ছিল অনেক বেশি। ১০-১২ বছর ধরে উৎকণ্ঠার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে আমাকে। ম্যাচের আগে অসংখ্য রাত আমার নির্ঘুম কেটেছে। পরে মানিয়ে নিতে শুরু করি এভাবে যে, এটাও আমার প্রস্তুতির অংশ। তখন আমার মন শান্ত রাখতে কিছু কাজ শুরু করলাম।’
অবসাদ কাটাতে কি করতেন সেটিও জানিয়েছেন ক্রিকেটের অগণিত রেকর্ডের মালিক, ‘ব্যাটিংয়ের মতো ভঙ্গি করতাম, টিভি দেখতাম, ভিডিও গেম খেলতাম। চা বানানো, নিজের কাপড় ইস্ত্রি করা, এসবও আমাকে সাহায্য করেছে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে। ম্যাচের আগের দিনই পরিপাটি করে ব্যাগ গুছিয়ে নিতাম। ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগেও এই রুটিন অনুসরণ করেছি।’
শচীন মনে করেন, শারীরিক চোটে পড়লে সহজেই সেটির চিকিৎসা মেলে। ক্রিকেটের আর দশটা চোটের মতোই দেখা উচিত মানসিক লড়াইকেও।
মাস্টার ব্লাস্টারের ভাষায়, ‘যখন কোনও চোটে পড়েন, তখন ফিজিও ও চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর জানায় আপনার সমস্যা কী। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবাইকেই ভালো-খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যখন খুবই দুঃসময় আসে, তখনই কাছের মানুষদের পাশে প্রয়োজন হয়।’
টিআইএস/এটি