নয় ফেডারেশনের কমিটি: আছে চমক, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বির্তকও!

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ গতকাল রাতে নয়টি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি প্রকাশ করেছে। এরপর থেকে ক্রীড়াঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কয়েকটি ফেডারেশনের কমিটি গ্রহণযোগ্য ও চমক সৃষ্টি করেছে। তেমনি রয়েছে বিতর্ক এবং প্রশ্নও। জাতীয় খেলা কাবাডি ফেডারেশনের কমিটি নিয়ে সেই প্রশ্নের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
গতকাল ঘোষিত কয়েকটি ফেডারেশনের কমিটিতে বিগত কমিটির অনেকেই নেই। অন্য ফেডারেশনে কমিটি নির্বাচনে বিগতদের বাদ দিয়ে গঠন হলেও কাবাডিতে হয়েছে ব্যতিক্রম। ১৮ জনের কমিটিতে পাঁচ জনই ছিলেন বিগত কমিটিতে। বিগত কমিটির দুই যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ ও গাজী মোজাম্মেল হক অ্যাডহক কমিটিতে রয়েছেন।
সোহাগ সাধারণ সম্পাদক ও গাজী মোজাম্মেল হক আগের পদেই রয়েছেন। বিগত কমিটির সদস্য মনির পদোন্নতি পেয়ে কোষাধ্যক্ষ ও আগের কমিটির কোষাধক্ষ্য আরিফ মিহির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খানকে সহ-সভাপতিই রেখেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি ফেডারেশনগুলোর কাছে অডিট রিপোর্ট চেয়েছিল। অডিট রিপোর্ট প্রদান না করা ফেডারেশনগুলোর তালিকায় রয়েছে কাবাডি। গত কমিটির পাঁচ জনকেই আবার নতুন কমিটিতে রেখেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
কাবাডি ফেডারশেনে দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। গত কয়েক বছর কাবাডি ফেডারেশন মূলত পুলিশের কর্মকর্তাদের আধিক্যই ছিল। নামকওয়াস্তে টুর্নামেন্ট আয়োজন করে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও এশিয়ান গেমসে গিয়ে চরম ভরাডুবি হয়েছে। হাবিবুর রহমানের প্রভাবে গত কয়েক বছর কাবাডি ফেডারেশন মূলত পরিচালনা করেছেন দুই যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ ও গাজী মোজাম্মেল হক।
আরও পড়ুন
নেওয়াজ সোহাগ মূলত স্পোর্টস ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ব্যবসায়ী। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ব্যবসা করেই মূলত তার ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিতি। পরবর্তীতে কাবাডিতে ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা করেন। সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের আস্থা অর্জন করায় ফেডারেশনে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও হয়েছেন।
প্রথাগত সংগঠক না হয়েও সোহাগ আকস্মিকভাবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক করায় বিস্মিত অনেকেই। এর চেয়েও বেশি বিস্ময় যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হকের পুনরায় যুগ্ম সম্পাদক হওয়া। পুলিশের পেশাগত অঙ্গনে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ সম্পন্ন ব্যক্তির নাম কমিটিতে হাতে লেখা থাকায় প্রভাবিত করার প্রশ্নও উঠছে ব্যাপকভাবে।
কাবাডির পরিচিত মুখ আব্দুল মান্নান। নতুন কমিটি নিয়ে তার মন্তব্য, ‘কমিটি ভালো-মন্দ মিলিয়েই হয়েছে। দেখা যাক কেমন কাজ করে।’ কাবাডির জীবন্ত কিংবদন্তী আব্দুল জলিল, জিয়ার মতো ব্যক্তিত্ব নেই কমিটিতে। কাবাডি অঙ্গনের অনেকে নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করলেও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ না পাওয়া এবং রোষানলে পড়ার ভয়ে।

ক্রীড়াঙ্গন সংস্কার লক্ষ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করেছে। সেই সার্চ কমিটি ৫২ ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে কমিটির সুপারিশ করেছিল। কাবাডি ফেডারেশনের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর সার্চ কমিটি এই সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও নেই কোনো সদুত্তর।
কাবাডি ছাড়া অন্য আট কমিটি নিয়ে তেমন বড় ধরনের বির্তক নেই। দাবা, টেনিসের কমিটি ক্রীড়াঙ্গনে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনের দুই পরীক্ষিত সংগঠক সৈয়দ সুজাউদ্দিন ও ইসতিয়াক আহমেদ কারেনকে দাবা ও টেনিসে ফেরানোয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সিদ্ধান্ত বেশ প্রশংসিত হয়েছে। স্কোয়াশ, ব্রিজ, বিলিয়ার্ডের মতো অপ্রচলিত খেলার কমিটি নিয়ে তেমন অভিযোগ বা আপত্তি পাওয়া যায়নি।
ফুটবল, ক্রিকেটের পর দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় দলীয় খেলা হকি। এই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বরাবরই দ্বিধাবিভক্ত থাকে হকি অঙ্গন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটিতে কাকে সাধারণ সম্পাদক করেন এ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে কৌতুহল ছিল অনেক। অবসরপ্রাপ্ত লে.কর্ণেল রিয়াজুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে চমক দিয়েছে এনএসসি। সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় স্বল্পতা ছাড়া অন্য কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। আবাহনী, মোহামেডান, মেরিনার্স ও উষা হকিতে এই চার ক্লাবের প্রাধান্য। অ্যাডহক কমিটিতে মেরিনার্স ও আবাহনীর কর্মকর্তা থাকলেও মোহামেডান ঘরনার কেউ নেই। দেশের অন্যতম শীর্ষ ও জনপ্রিয় ক্লাবের কেউ না থাকায় ইতোমধ্যে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
বেশি বিস্ময় যুগ্ম সম্পাদক গাজী মোজাম্মেল হকের পুনরায় যুগ্ম সম্পাদক হওয়া। পুলিশের পেশাগত অঙ্গনে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ সম্পন্ন ব্যক্তির নাম কমিটিতে হাতে লেখা থাকায় প্রভাবিত করার প্রশ্নও উঠছে ব্যাপকভাবে।
দাবা, হকির পাশাপাশি গতকাল ঘোষিত আরেকটি বড় ফেডারেশন ছিল অ্যাথলেটিক্স। এই খেলায় যোগ্য সংগঠকের সংখ্যা খুবই কম। হাতেগোণা যারা আছেন তারাও নানা ইস্যুতে সমালোচিত-বিতর্কিত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মন্দের ভালো হিসেবে সাবেক তারকা অ্যাথলেট শাহ আলমকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছে। আরো অনেক অ্যাথলেটের মধ্যে দুই মল্লিক ভাই জায়গা পাওয়ায় খানিকটা আলোচনা চলছে।
গতকাল ঘোষিত নয়টি ফেডারেশনেই অচেনা মুখ রয়েছে অনেক। পৃষ্ঠপোষকতার বিবেচনায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটিগুলোতে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়েছে। খেলাধুলায় তারা কেমন সহায়তা করেন সেটাই দেখার বিষয়। অচেনা থাকলেও রাজনৈতিক বা দলীয় প্রভাবে কাউকে দেখা যায়নি তালিকায়। কালকের ঘোষিত কমিটিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রতিফলন দেখা যায়নি। কয়েকটি কমিটিতে ছাত্র প্রতিনিধি থাকলেও আবার কয়েকটিতে নেই। ফেডারেশনের গুরত্ব অনুযায়ী কমিটির সদস্যের দৈর্ঘ্য ২-৩ জন কম বেশি হতে পারে তবে সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক একই মাত্রায় থাকলে আরো বেশি শোভনীয় হতো বলে ধারণা ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের।
এজেড/জেএ