মাঠ ও বাইরের তামিমকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা নাফিস ইকবালের

প্রায় ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতি টেনেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই গত শুক্রবার রাতে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দেশসেরা এই ওপেনার। যেখানে তামিম ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার দুঃসহ স্মৃতির কথা তুলে ধরেছেন। সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল তার পরিবারকেও। মাঠ ও মাঠের বাইরে তাকে নিয়ে আবেগঘন কিছু স্মৃতি স্মরণ করলেন ভাই নাফিস ইকবাল।
তামিমের অবসর ঘোষণার পর সতীর্থ ও সাবেক ক্রিকেটাররা সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন। ছোট ভাইকে নিয়ে সাবেক ক্রিকেটার নাফিসও স্মৃতি হাতড়ে তুলে ধরলেন বড় এক রচনা। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ছিল তামিমের জন্য ঘটনাবহুল ও অন্যতম স্মরণীয় সময়। অবসরের একদিন পর নাটকীয়ভাবে ক্রিকেটে ফেরার ঘোষণা এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং পজিশন বদলের প্রস্তাবসহ বেশকিছু কারণ দেখিয়ে স্কোয়াড থেকে নাম প্রত্যাহার করেছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক।
নাফিস ইকবালও ছোট ভাইয়ের অবসর ঘোষণার প্রাক্কালে সেই মুহূর্তটাই তুলে ধরলেন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ওর সঙ্গে যা হয়েছে, এটা ওর জন্য ছিল প্রচণ্ড এক ধাক্কা, যা সহ্য করার মতো নয়। ওই ব্যাপারটায় তখন আমি ভুগেছি, আমাদের পরিবার ভুগেছে। পুরো পরিবারকে দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছু মানুষ এসব জায়গা থেকে বের হতে পারে, কেউ পারে না। তামিমও হয়তো পারেনি।’
বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে আর দেখব না, এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য দিনটি...
Posted by Nafees Iqbal Khan on Saturday, January 11, 2025
বড় ওই পোস্টে নাফিস তামিমের ক্যারিয়ার শুরু ও শেষটা তুলে ধরলেন এভাবে, ‘বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে আর দেখব না, এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ও আমাদের পরিবারের জন্য দিনটি প্রচণ্ড আবেগময়। এই তো সেদিন, ছোট্ট তামিম প্রথমবার ব্যাট হাতে নিলো। সময়ের সঙ্গে আমাদেরকে চমকে দিতে থাকল। আমরা ক্রিকেট পরিবারের মানুষ, তারপরও সবাই বুঝতে পারছিলাম, তামিম আমাদের সবার চেয়ে আলাদা। ছোট থেকেই আগ্রাসী, ভয়ডর ছিল না। তখন থেকেই জানতাম, আমাদের সবাইকে ছাপিয়ে যাবে ও।’
তামিমকে যেমন সতীর্থ ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছেন, তেমনি প্রতিপক্ষ হিসেবেও খেলেছেন নাফিস, ‘মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবেও ওকে পেয়েছি আমি। খুবই কঠিন এবং আপসহীন প্রতিপক্ষ। আমার মনে আছে, পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগে আমার বিপক্ষ দলে ছিল তামিম। আমাকে প্রচণ্ড স্লেজিং করেছিল। আমি খুবই বিব্রত হয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি, ওর কাছ থেকে এ রকম কিছু পাব। সেদিন বুঝেছিলাম, মাঠের লড়াইয়ের ওর কাছে সবকিছুর আগে নিজের দল। আবার একসঙ্গে যতটুকু খেলতে পেরেছি জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে, ঢাকা লিগে ব্রাদার্স, মোহামেডান, বিমানে, দেখেছি ওর চেয়ে ভালো সতীর্থ আর হয় না।’
আরও পড়ুন
জাতীয় দলের ম্যানেজার হওয়ার পর নাফিসের দৃষ্টিতে তামিম যেমন, ‘পরে জাতীয় দলে আমি যখন ম্যানেজার, ওকে পেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে। আমার কাজের জায়গা থেকে বললে, খুবই আউটস্ট্যান্ডিং ছিল ও। সতীর্থদের তো বটেই, ম্যানেজমেন্টের যেকোনো প্রয়োজনেও ওকে দেখেছি পাশে থাকতে। এমন নয় যে সব সময় সবকিছুতে আমরা একমত ছিলাম। তবে আমি ম্যানেজার হিসেবে ওকে কিছু বোঝাতে চাইলে, বুঝত খুব ভালোভাবে।’
পরিবার নিয়ে দায়িত্বশীল তামিমের ভূমিকাও তুলে ধরলেন তার বড় ভাই, ‘তাদের পরিবারের যত বাচ্চা আছে, সবাই তামিমের ২৮ নম্বর জার্সি পরে খেলে। নাফিসের ভাষায় ‘ও যেমন আমাদের আপনজন, তেমনি আমাদের সুপারস্টার।’ নাফিস শেষটা করেছেন তামিমকে নিয়ে পরিবার ও স্বজনদের গর্ব করার বর্ণনা দিয়ে।
এএইচএস