পাকিস্তানের পর প্রোটিয়াবধ, টানা দুই জয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

অভিষিক্ত ম্যাথিউ ব্রিটজকের বিশ্বরেকর্ডটাও ধোপে টিকলো না! দক্ষিণ আফ্রিকার এই ওপেনার প্রথমবার ওয়ানডেতে খেলতে নেমেই ১১ চার ও ৫ ছক্কার মারে ১৪৮ বলে ১৫০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন। তার ব্যাটে ভর করে তিনশোর্ধ্ব রানের পুঁজি গড়ে প্রোটিয়া বাহিনী। সেটিকেই মামুলি বানিয়ে ছাড়লেন কেইন উইলিয়ামসন ও ডেভন কনওয়েরা।
১১৩ বলে ১৩৩ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন কেইন উইলিয়ামসন। ৮ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয়েছে কিউইদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটাও হয়েছে এদিন।
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পাকিস্তানে চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা দুই জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড। এর আগে ট্রাইনেশন সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক পাকিস্তানকে ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল মিচেল স্যান্টনারের দল। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি ম্যাচটি কার্যত নকআউট লড়াই। যারা জিতবে ফাইনালে তারাই কিউইদের মুখোমুখি হবে।
আজ (সোমবার) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে কিছুটা ধীরলয়ে শুরু করে আফ্রিকা। ২৩ বলে ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় টেম্বা বাভুমার বিদায়ে দলীয় ৩৭ রানে ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি।

দ্বিতীয় উইকেটে জেসন স্মিথকে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন ব্রিটজকে। স্মিথের রানআউটে ভাঙে ১০৫ বলে ৯৩ রানের জুটি। এরপর দ্রুত বিদায় নেন ভেরাইন্নে। তবে অন্য প্রান্তে সাবলীল ছিলেন অভিষিক্ত ব্রিটজকে। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মাত্র ১ টেস্ট আর ১০ টি-টোয়েন্টি খেলা ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটার আজ ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ১০০ তে পৌঁছাতে খেলেছেন ১২৮ বল। কিন্তু এরপরেই নিজের ব্যাটিং সক্ষমতার পুরোটা দেখালেন ব্রিটজকে। পরের ৫০ করতে খেলেছেন মোটে ১৯ বল। ১৪৭ বলে ১৫০ করেই নিজের নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।
৪৭ বছর আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসেরই এমন এক দিনে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে ইতিহাসের ৪৮তম ম্যাচে অভিষেক ঘটেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ডেজমন্ড হেইন্সের। সেদিন অজি বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ১৪৮ রান করে থেমেছিলেন হেইন্স। ওয়ানডে অভিষেকে এতদিন পর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন প্রোটিয়া তরুণ ব্যাটার। ১১ চার এবং ৫ ছক্কায় নিজের রেকর্ডগড়া ইনিংস সাজিয়েছেন ব্রিটজকে। অবশ্য দেড়শ পূরণের পরেই আউট হয়েছেন তিনি। ম্যাট হেনরির ব্যাক অব দ্য লেন্থ বলে মিডঅফে মিচেল ব্রেসওয়েলকে দিয়েছেন ক্যাচ।
ব্রিটজকের রেকর্ডগড়া দেড়শত রান আর উইয়ান মুল্ডারের ৬০ বলে ৬৪ রানের সুবাদে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৪ রানের বড় স্কোর দাঁড় করিয়েছিল তারুণ্যনির্ভর প্রোটিয়ারা। টার্গেট তাড়ায় জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো কিউইদের। কেননা এর আগে দলটির বিরুদ্ধে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই ব্ল্যাক ক্যাপসদের।

লাহোরে রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরু পায় নিউজিল্যান্ডও। তাদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে দলীয় ৫০ রানের মাথায়। দ্বিতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়ে ও কেইন উইলিয়ামসন মিলে গড়েন ১৫৫ বলে ১৮৭ রানের জুটি। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন দুজনই। তবে উইলিয়ামসন শতকের দেখা পেলেও ৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন কনওয়ে।
২০১৯ সালের পর সেঞ্চুরির দেখা পেলেন উইলিয়ামসন। ক্যারিয়ারের ১৪ তম শতক হাঁকালেন ৭২ বল খরচায়। যা তার দ্বিতীয় দ্রুততম শতকের রেকর্ডও। অন্যদিকে, ১০৭ বলে ৯৭ রান করে ক্যাচ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন কনওয়ে।
সঙ্গীকে হারালেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন উইলিয়ামসন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ১১৩ বলে ১৩৩ রানে। এ ছাড়া ৩২ বলে ২৮ রানে টিকেছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান গ্লেন ফিলিপস। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট শিকার করেছেন সেনুরান মুতুসামি।
এফআই