জাতীয় টেনিসের মধ্যেই ‘টেনিস বাঁচাও আন্দোলন’

দীর্ঘদিন পর জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে গতকাল (সোমবার)। রমনার জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সে যখন কয়েকটি কোর্টে খেলা চলছে, ঠিক সেই সময় কয়েকজন খেলোয়াড়-কোচ ‘টেনিস বাঁচাও’ শীর্ষক ব্যানার নিয়ে কমপ্লেক্স চত্ত্বরে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় টেনিসে কিছু অসঙ্গতির বিষয় তুলে ধরে সেগুলো দূর করতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
কয়েক মাস আগে টেনিস আলোচনায় এসেছিল হানিফ মুন্নাকে বাদ দিয়ে ডেভিস কাপ দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ায় পরবর্তীতে হানিফ মুন্না ডেভিস কাপে যান। সেই হানিফ মুন্না আজ ব্যানারের পেছনে দাঁড়িয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডেভিস কাপে আগের চেয়ে আমরা এবার ভালো ফলাফল করে এলাম, কিন্তু বর্তমান কমিটি আমাদের সেভাবে মূল্যায়নই করল না। আমি একজন জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়, কিন্তু টেনিস কমপ্লেক্সে আমার আবাসন ব্যবস্থা ভালো না। কষ্ট করেই থাকতে হয়।’
সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ রাশেদুল ইসলাম (রুমি) অ্যাডহক কমিটির কর্মকাণ্ডের অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, ‘বিগত সময়ে শৃঙ্খলাজনিত কারণে অনেক শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বর্তমান অ্যাডহক কমিটি পুনরায় নিয়োগ দিয়েছে। যোগ্যতাবিহীন কোচকে দলের সঙ্গে বাইরে পাঠানো হয়েছে। শর্ট সেট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ট্রায়ালও আইটিএফ রুলসের পরিপন্থী।’ চলমান জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতা খেলতে এসেছে রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স। সেই দলের খেলোয়াড় ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশে টেনিসে এখনও বৈষম্য চলছে। আমরা রাজশাহী ও অন্য দল শুধু দুপুরের খাবার পাচ্ছি, কিন্তু বিকেএসপিকে তিন বেলা–ই খাবার দেয় ফেডারেশন। এটা কি বৈষম্য নয়?’
১৪ নভেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। নতুন কমিটি মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাহরাইনে তিনটি, শ্রীলঙ্কায় একটি এবং কয়েকদিন পর মালয়েশিয়ায় দু’টি দল প্রেরণ করবে। পাশাপাশি বিজয় দিবস ও জাতীয় টেনিসও আয়োজন করেছে তারা। এরপরও নতুন কমিটির প্রতি আস্থা না রেখে ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণের কারণ সম্পর্কে রুমি ও হানিফ যৌথভাবে বলেন, ‘তারা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তবুও আমাদের সঙ্গে বসেনি। শুনেছি ফান্ডে আগের কমিটি এক কোটি টাকা রেখে গেছে, অথচ তারা খেলোয়াড়-কোচদের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কিছু করছে না। আমাদের বিষয়গুলো তাদের অনুরোধ করেছি কিন্তু শুনেনি, তাই ক্রীড়া উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা যোগ্য নেতৃত্ব চাই টেনিসে।’
নতুন কমিটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন মাস হয়েছে। জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতার মধ্যে খেলোয়াড়-কোচদের এমন আচরণ অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ কারেনের, ‘জাতীয় প্রতিযোগিতা চলমান অবস্থায় খেলোয়াড়-কোচরা এমন কথা বলতে পারে না। হাতেগোনা কয়েকজন খেলোয়াড় গোটা টেনিস সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় সরকার কর্তৃক কমিটিকে কেউ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমের উচিৎ সেটা অনুসন্ধান করা।’
খেলোয়াড়-কোচদের উত্থাপিত অভিযোগগুলো খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘ডেভিস কাপে অধিনায়ক আলমগীরকে বারংবার প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বললেও দেয়নি। ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট কমিটি বিচার-বিবেচনা করেই কোচ নির্বাচন করে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলকে শুধুমাত্র দুপুরের খাবারই প্রদান করা হচ্ছে।’
এজেড/এএইচএস