জেসিরা প্রিমিয়ার লিগে, এশিয়ার এলিটে থেকেও ম্যাচ নেই সালমার

এশিয়ার এলিট প্যানেলের সহকারী রেফারি বাংলাদেশের সালমা আক্তার মনি। বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে এশিয়ার এলিট প্যানেলে সালমা রয়েছেন গত দুই বছর। এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ সহকারী নারী রেফারি হওয়ায় নিয়মিত সাফ-এএফসির’র টুর্নামেন্ট পরিচালনা করছেন। সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত চার জাতির টুর্নামেন্টের ফাইনালেও ছিলেন সালমা।
সাফের বয়স ভিত্তিক ও সিনিয়র দলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নিয়মিতই ফাইনাল খেলে। বাংলাদেশ ফাইনাল খেলায় বাংলাদেশি রেফারির খেলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না। ২৬ ফেব্রুয়ারি নেপাল-মিয়ানমার চার জাতির টুর্নামেন্টের ফাইনালে সহকারি রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেশ উচ্ছ্বসিত সালমা, 'এই টুর্নামেন্টে আরো অনেক সহকারী রেফারি ছিল। এর মধ্যে আমাকে ফাইনালে বিবেচনা করেছে। অন্য ম্যাচের মতো ফাইনালেও সেরাটা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আমার প্রথম ফাইনাল ম্যাচ ঝামেলামুক্ত শেষ হওয়ায় ভালো লাগছে।’
এশিয়ার অন্যতম সেরা সহকারী রেফারি হলেও বাংলাদেশে ঘরোয়া শীর্ষ স্তরের লিগে ম্যাচই পান না সালাম। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম লেগ, ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে অর্ধ শতাধিকের বেশি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ম্যাচও পাননি সালমা। গত মৌসুমে লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক খেলা হলেও শুধুমাত্র গোপালগঞ্জে শেখ জামাল-ব্রাদার্স ইউনিয়ন ম্যাচ পেয়েছিলেন। এএফসির পরীক্ষার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট উত্তর বারিধারা ও আরামবাগ ম্যাচে সহকারী রেফারি ছিলেন কমলাপুর স্টেডিয়ামে। সেটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে প্রথম নারী রেফারির প্রতিনিধিত্বের ঘটনাও। প্রথম নারী ফিফা রেফারি হয়েও জয়া চাকমা এখনো প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ বা দেশের ফুটবলের শীর্ষ স্তরের কোনো ম্যাচ পাননি।

নারী ফুটবল লিগ বছরে মাত্র এক মাস। পুরুষদের প্রিমিয়ার লিগ ও অন্য টুর্নামেন্ট চলে বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে। ম্যাচ না পাওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় অলস বসেই থাকতে হয় সালমার। এজন্য তার আক্ষেপ, 'বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। তেমনি দেশেও আমি রেফারিং করতে চাই। আমি কেন লিগের ম্যাচ পাই না সেটা আমারও প্রশ্ন।’
ঘরোয়া লিগে রেফারিদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে প্রশ্ন রয়েছে। যোগ্যতা-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ পর্যায়ের ম্যাচ সালমা না পাওয়া এর অন্যতম উদাহরণও। সাবেক ফিফা রেফারি ও রেফারিজ কমিটির সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান তৈয়ব হাসান সালমার ম্যাচ মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, 'ঘরোয়া ফুটবলের প্রেক্ষাপটে অনেক বিষয় বিবেচনায় আনতে হয়। লেগের দ্বিতীয় অংশে তাকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’ একটি প্রেক্ষাপট সামনে এনে সাবেক এই রেফারি বলেন, 'এখন ফুটবলের অনেক খেলায় ঢাকার বাইরে হচ্ছে। যাতায়াত সহ আরো অনেক বিষয় এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।’
সালমা রাজধানী ঢাকায় উত্তরা থাকেন। চলতি লিগে অন্যতম ভেন্যু গাজীপুর ও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। এই দুই ভেন্যুতে যাতায়াতের তেমন সমস্যা নেই। তাছাড়া গত মৌসুমে মুন্সিগঞ্জেও ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। সালমাকে নিয়ে মূলত ফেডারেশনের সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা নেই সেটাই দৃশ্যমান।
ফুটবলে রেফারির তুলনায় সহকারী রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক-ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক অনেক কম। সেখানে ক্রিকেটে ফিল্ড আম্পায়ারকে অনেক সিদ্ধান্ত দিতে হয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে চার-পাঁচটি ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার নারী ছিলেন। সাথিরা জাকির জেসি ও মিশু চৌধুরি দু’টি ও ঢলি সরকার একটি ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন। ক্লাবগুলোর আপত্তি/বিরোধিতা সত্ত্বেও বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটি নারী আম্পায়ারদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৈরি করতে শীর্ষ লিগে সুযোগ দিয়েছেন। অন্য দিকে ফুটবলে এশিয়ার শীর্ষ হয়েও ঘরোয়া লিগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রেফারিং করতে পারছেন না সালমা। এ নিয়ে সালমার বক্তব্য, 'বাংলাদেশে ক্রিকেটে সম্ভব হলে ফুটবলে কেন নয়? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষতা-যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই টিকে রয়েছি। দেশেও আমাকে সুযোগ দিলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব।’
বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারমান ইফতেখার রহমান মিঠু গত মৌসুমে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ক্লাবের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেননি। বাফুফের রেফারিজ কমিটি মূলত এমন ঝুকি নিতে চায় না। বাফুফের নতুন কমিটির মেয়াদ চার মাস পার হয়ে লিগের অর্ধেকের বেশি শেষ হলেও রেফারিজ কমিটির চেয়ারমানই ঠিক হয়নি। সেই ফেডারেশনের কাছে আর কি প্রত্যাশা করতে পারেন রেফারিরা!
এজেড/এইচজেএস