তিন বছরে সৌদি সফরে বাফুফের কোটি টাকা ব্যয়, প্রাপ্তি কী?

বাংলাদেশের ফুটবলে গত তিন বছর সৌদি আরবে যাত্রার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। জাতীয় ফুটবল দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ২০২৩-২০২৫ টানা তিন বছর ফিফার মার্চ উইন্ডোতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করাচ্ছেন সৌদি আরবে। দেশটির ফুটবল ফেডারেশন থাকা-খাওয়া, অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যয় বহন করলেও, বাফুফের বিমান ও আনুষঙ্গিক খরচ তিন সফর মিলিয়ে কোটি টাকার কাছাকাছি।
এত অর্থ ব্যয় করে সৌদিতে ক্যাম্প করে বাস্তবিক অর্থে কোনো ফলাফলই আসেনি গত দুই বছর। ২০২৩ সালের মার্চ উইন্ডোতে বাংলাদেশ সিশেলসের বিপক্ষে সিলেটে দুটি ম্যাচ খেলেছিল। সিলেটে হোম ম্যাচ খেলার জন্য ক্যাবরেরা সৌদিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি ট্রেনিং করান। এরপরও সিলেশসের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ ১-০ গোলে জেতার পরের ম্যাচে একই ব্যবধানে সিলেশস বাংলাদেশকে হারিয়েছে। অথচ সিলেশসের অনেক ফুটবলার আদৌ পেশাদারই নন (অন্য পেশার পাশাপাশি ফুটবল খেলেন)।
গত বছর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মার্চের ম্যাচের জন্য সৌদিতে ক্যাম্প করে বাংলাদেশ। সুদানের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচও খেলেছিল তায়েফে। এরপরও কুয়েতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি। ৫-০ গোলে বড় ব্যবধানে হেরে দেশে ফেরে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পাঁচদিন পর তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ হোম ম্যাচে কিংস অ্যারেনায় ০-১ গোলে হারে।
এই বছর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য সৌদির তায়েফ শহরে অবস্থান করছে ক্যাবরেরার দল। সুদানের বিপক্ষে খেলার কথা থাকলেও ম্যাচটি হয়নি। একটি ম্যাচ খেলেছে সৌদির পঞ্চম স্তরের দলের সঙ্গে। এখন আরেক প্রতিপক্ষ খুঁজছে বাংলাদেশ। এরকম প্রস্তুতির জন্য সৌদি আরব যাওয়া এবং আদৌ এটা ভারতের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য পর্যাপ্ত কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে।
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও ঘরোয়া লিগে শতাধিক গোলদাতা ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব সৌদি আরব সফরের কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না, ‘তিন বছর ধরেই দেখছি সৌদি আরবে অনুশীলন। এতে পারফরম্যান্স ও ফলাফল তেমন দৃশ্যমান নয়। ভালো প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া এরকম সফরের কোনো স্বার্থকতা নেই। খেলা হবে শিলংয়ে, চাইলে সিলেটে অনুশীলন এবং বাংলাদেশের বসুন্ধরা, আবাহনী ও মোহামেডানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারত।’
বাংলাদেশ দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা অবশ্য সৌদি আরবে অনুশীলনের পেছনে ভালো মাঠের যুক্তি দাঁড় করান। সেই যুক্তি অবশ্য খুব একটা গ্রহণযোগ্য লাগছে না নকীবের কাছে, ‘ম্যাচ ভেন্যুর মাঠের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুশীলন করা প্রয়োজন। সৌদির মাঠ অনেক ভালো ও দ্রুতগতির সেই তুলনায় শিলংয়ের মাঠ ধীর হলে আর সেই অনুশীলনের উপযোগিতা কোথায়?’
আরও পড়ুন
কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদে শেষ দুই বছর সৌদি আরব দল পাঠিয়েছে অনুশীলনের জন্য। তাবিথ আউয়াল এসে সেই সংস্কৃতি অনুসরণ করছেন বলে মত নকীবের, ‘বিগত কমিটি পাঠিয়েছে সৌদি আরব। এরাও যেন সেই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে পাঠাল।’ জাতীয় দল কমিটির একাধিক সদস্য কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল পরিচালনা ও সৌদি সংস্কৃতি নিয়ে নাখোশ। তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, ‘জাতীয় দল কমিটির সভার আগেই তো সৌদিতে প্রস্তুতি চূড়ান্ত ছিল। কোচ ও আমাদের কর্মকর্তা (ফাহাদ করিম) উভয়ই এ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে। ২৫ মার্চের ম্যাচ দেখি, এরপর সভায় সব বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।’
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিজেই জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান। ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনের পর ৯ নভেম্বর প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। তিন মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পায়। এত দিন বিচার-বিশ্লেষণের পরও সেই কমিটি হয়েছে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত। ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দল কমিটির প্রথম সভার আগেই স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়েরের চুক্তি নবায়ন, মার্চ উইন্ডোর প্রস্তুতির পরিকল্পনা সম্পন্ন ছিল। ফেডারেশন সভাপতি ও কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাবিথ আউয়াল নিজেই এসব তত্ত্বাবধান করেছেন।
এজেড/এএইচএস