‘জাতীয় দলে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ সঠিক নয়’

সম্প্রতি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব শেষ হয়েছে। যেখানে ২০২৫ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটার হয়েছেন শারমিন আক্তার সুপ্তা। ৫ ম্যাচে তার ব্যাটে এসেছে ২৬৬ রান। সফল এই প্রতিযোগিতা শেষে সুপ্তা দেশে ফিরে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নারী দলের সাবেক কোচের করা ‘ড্রেসিংরুমে গ্রুপিং’য়ের অভিযোগ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। বাংলাদেশের এই তারকা ক্রিকেটারের পুরো সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করলেন, নিজের ব্যাটিংয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
সুপ্তা : দলের জন্য ভূমিকা রাখতে পারা সবসময়ই গর্বের বিষয়। তবে আরেকটু ভালো করতে পারতাম যদি...যে প্রস্তুতি ছিল আমার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে ম্যাচটা আমি ব্যাটিং করেছি হয়তো অনেক বেশি রান করিনি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমি খুব সাবলীল ছিলাম মাঠে। ওটাতে যদি সেঞ্চুরি করতে পারতাম, এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে দুইটা বড়ই ইনিংস মিস করেছি। দলের জন্য যদি আরেকটু করতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।
ব্যাট হাতে আপনার পাশাপাশি ফারজানা হক পিংকী, অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি কিংবা রিতু মনিদের প্রত্যেকেই রানের ধারায় আছেন...
সুপ্তা : যে নামগুলো আপনি বললেন তাদের মধ্যে আমি হয়তো ৪০-৪৫টা ম্যাচ খেলেছি। ম্যাচের হিসেবে দেখতে আমি খুব অভিজ্ঞ না। তারা অনেকদিন ধরে খেলছে, তো আমার কাছে মনে হয়েছে এই দলটাকে যদি আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রত্যেকের ভেতর একটা জেদ কাজ করছিল যে ভালো কিছু করতে হবে, চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না এটুকু আমি বলতে পারি।
তারপরও নিশ্চয়ই ব্যাটিংয়ে উন্নতির জায়গা দেখছেন, বড় দলের বিপক্ষে আবার রান পাননি অনেকে…
সুপ্তা : আপনি যদি দেখেন আমাদের ওখানে মোটামুটি সবাই কিন্তু বড় দল। স্কটল্যান্ডকে কিন্তু ছোট দল বলতে পারেন না, ওরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে। দুটো ম্যাচ হারার কারণেই বাদ পড়েছে তারা। পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমাদের জন্য বড় নাম ছিল। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা একটা ম্যাচ খুবই খারাপ করেছি সেটা পাকিস্তানের বিপক্ষে। তারা আমাদের সঙ্গে যে ডমিনেট করে জিতেছে এটা আসলে গ্রহণযোগ্য না।
আগে আমরা ২০০ ক্রস করতে পারতাম না, এখানে আমরা চারটা ম্যাচেই ২০০ ক্রস করেছি। আমার কাছে মনে হয় যে ব্যাটিং ইউনিট এই জায়গায় একটু উন্নতি করছে, এটা পজিটিভ হিসেবে নিচ্ছি।
‘ইমরান স্যার আসার পরে যে কাজটা করেছেন, উনি কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেননি। যে তোমাকে পুরোটা খেলতে হবে শেষ করতে হবে এরকম না। যখন এমন মানসিকতা থাকবে তখন কিন্তু ডিফেন্সিভ এপ্রোচটা চলে আসবে। উনার কথা হচ্ছে টিম গেমে সবাইকে কন্ট্রিবিউট করতে হবে। যখন যে সুযোগ পাবে তার জায়গায় সর্বোচ্চটা দিতে হবে। তিনি সবসময় ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলতে বলেন।’
ক্রিকেট দুনিয়ায় ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’ শব্দটার এখন খুব প্রচলন। বিশ্বকাপে কি ভক্তরা এরকম মেন্টালিটির প্রত্যাশা রাখতে পারে বাংলাদেশ দলের ওপর?
সুপ্তা : যদি এমন মেন্টালিটি না থাকে, তাহলে তো শুধু অংশগ্রহণ করার জন্য খেলতে হবে। আমি একজন খেলোয়াড় হিসেবে কখনোই চাই না যে টুর্নামেন্টটাকে শুধু অংশগ্রহণ হিসেবে নেব। এটা কখনোই চাই না আমি। আমি চাই যে অন্তত দুই-তিনটা ম্যাচ যেন আমরা জিততে পারি। এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ফিয়ারলেস ক্রিকেটের বিকল্প কোন কিছু নেই।
মাত্র ২টা ম্যাচ জয়ের কথা বললেন, কেন সেমি বা ফাইনাল নয়?
সুপ্তা : আপনাকে তো বাস্তবতা মানতেই হবে। আমাদের দেশের রিসোর্স ও ক্রিকেটারদের এবিলিটি আছে কি না দেখতে হবে তো। একটা দল কিন্তু রাতারাতি বা অভারনাইটে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। তার জন্য আলাদা করে অনেক প্লেয়ার লাগে বা এক-দুজন দিয়েও কিন্তু হবে না। এ ছাড়া বাংলাদেশে আমরা খুব বেশি স্পোর্টিং উইকেটে খেলি না যেটা আইসিসি ইভেন্টে খেলতে হয়।
আরও পড়ুন
নারী ক্রিকেট একবার আমাদের এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। কিন্তু ২০১৮ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে নিজেদের অগ্রগতি নিয়ে আপনারা কি সন্তুষ্ট?
সুপ্তা : ২০১৮ সালে আমাদের ভালো ক্রিকেটার ছিল অনেক। সে সময় আমাদের বোলিং ইউনিটটা অনেক ভালো ছিল, সালমা খাতুন–জাহানারা আলম–রোমানারা ভালো ছিল অনেক। সে সময় পিংকি-জ্যোতিসহ এরাই ভালো খেলেছে। যদিও আমাদের হয়তো ধারাবাহিকতা ছিল না। সেই ডেভেলপমেন্ট আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি একটা টুর্নামেন্টের পর।
জাতীয় নারী দলে ড্রেসিংরুম কেন্দ্রিক নেতিবাচক অনেক কথাই শোনা গিয়েছিল অতীতে। কোচ হাসান তিলকারত্নে যাওয়ার আগে বলে গেছেন আগে গ্রুপিং ছিল....আপনিও কি তাই মনে করেন? নাকি আদতেই গ্রুপিং সংক্রান্ত বিষয়টি গুঞ্জন...
সুপ্তা : উনি একজন লিজেন্ডারি ক্রিকেটার ছিলেন, এরপর কোচ হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। উনি থাকাকালে আমি খুব একটা খেলার সুযোগও পাইনি, মাত্র দুটো সিরিজ খেলেছিলাম। আর যে গ্রুপিংয়ের কথা বললেন আমি আমার নিজের খেলা ছাড়া, নিজের মাঠ ছাড়া, আমার ভেতরে ওই অবজারভেশনের চিন্তাটা নেই। এটা বলা উচিৎ হয়নি উনার, কিন্তু আমার আসলে এরকমটা কখনও চোখে পড়েনি। এখন যে অবস্থায় আছে ড্রেসিংরুম অনেক ভালো।
হাসান তিলেকারত্নের কোচিংয়ে বাংলাদেশ নারী দলে একটা ডিফেন্সিভ অ্যাপ্রোচ ছিল। এখন কিছুটা আগ্রাসী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বর্তমান কোচ সরোয়ার ইমরান এদিকটা নিয়ে কাজ করেছেন কি না…
সুপ্তা : ইমরান স্যার আসার পরে যে কাজটা করেছেন, উনি কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেননি। যে তোমাকে পুরোটা খেলতে হবে শেষ করতে হবে এরকম না। যখন এমন মন-মানসিকতা থাকবে তখন কিন্তু ডিফেন্সিভ এপ্রোচটা চলে আসবে। স্যারের কথা হচ্ছে টিম গেমে সবাইকে কন্ট্রিবিউট করতে হবে। যখন যে সুযোগ পাবে তার জায়গায় সর্বোচ্চটা দিতে হবে। তিনি সবসময় বলেছেন যে আমরা ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলব। হারলে হারব, বাট যেদিন থেকে জিতব সেদিন যেন আমরা ডমিনেট করে জিততে পারি। কোচ হিসেবে এসেই উনার পরাজয়টাকে গ্রহণ করে নেওয়ার বিষয়টি টিমের মধ্যে অনেক বুস্টআপ করে।
জাতীয় দলের ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতার কথা আপনি নিজে কতটা মানেন বা দেখেছেন?
সুপ্তা : ফিল্ডিংয়ে স্কটল্যান্ড ছাড়া বাকি সব দলের বিপক্ষে কিন্তু ভালো হয়েছে। আর যা হয়েছে তা ফ্লাডলাইটের কারণে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই-তিনটা ক্যাচ মিস হয়েছে। ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে, ওই দিনটা খারাপ গেছে আমাদের। আপনি যদি পরের ম্যাচটা দেখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, মারুফা যে দুইটা ক্যাচ নিয়েছে আমার মনে হয় টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ। ফিল্ডিং খুব বেশি খারাপ হয়নি। ফিল্ডিংয়ে আরও এক্সট্রা সময় দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন ইমরান স্যার, আশা করি পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।
এসএইচ/এএইচএস