বাটলার-সাবিনাদের রিপোর্টের ৩ মাস পার, বাস্তবায়ন কোথায়?

সাবিনা-মাসুরাদের সঙ্গে বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের দ্বন্দ্বে বাফুফে বিশেষ কমিটি করেছিল। সেই কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন পেশ করেছিল। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ফেডারেশনের মধ্যেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ কমিটির এক সদস্য বলেন, 'সেই প্রতিবেদনে কয়েকজন খেলোয়াড়কে শাস্তির পাশাপাশি কোচকে সতর্কের সুপারিশ ছিল। আমাদের সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে কি না বোধগম্য নয়।' বিশেষ কমিটির প্রধান ছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান। প্রতিবেদন বাস্তবায়ন নিয়ে তার মন্তব্য, 'আমাদের কমিটির প্রত্যেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। আমরা একটি সুষ্ঠ ও নিরপক্ষে প্রতিবেদন পেশ করেছিলাম সভাপতির নিকট। সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা বা পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণই সভাপতির।'
বিশেষ কমিটির রিপোর্ট বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে রয়েছে এক কপি। আরেক কপি কমিটি প্রধান ইমরুল হাসানের কাছে। কমিটির অন্য সদস্যের কাছেও নেই। সেই কমিটিতে বাফুফের নির্বাহী কমিটির চার জন ছাড়া তিন জন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। বাফুফে নির্বাহী কমিটি ২১ জনের। ফলে সিংহভাগ কর্মকর্তাদের আকর্ষণ রয়েছে সেই প্রতিবেদন নিয়।
'নারী ফুটবলে ফুটবল ফেডারেশন একটি বিশেষ প্রতিবেদন রয়েছে শুনেছি তবে আমরা অনেকেই সেটা এখনো দেখেনি বা জানার সুযোগ পাইনি', বলেন নির্বাহী কমিটির একজন। প্রতিবেদন পেশের পর ২০ মার্চ বাফুফে নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভাতেও নারী ফুটবলারদের বিশেষ প্রতিবেদন আলোচ্যসূচিতে উঠেনি। আগামীকাল আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে ফুটবলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছাপিয়ে একমাত্র আলোচ্যসূচি ফুটসাল এতে অনেক কর্মকর্তাই বিস্মিত হয়েছেন।
বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারকে ১৮ জন নারী ফুটবলার এড়িয়ে চলছিলেন। অনেক আলোচনার পর দুই পক্ষের মধ্যে বরফ খানিকটা গলেছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হলেও কোচ-খেলোয়াড় দুই পক্ষেরই ভুল ছিল। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি এড়াতে ফেডারেশনের দুই পক্ষকে কোনো রকম সতর্ক বা শাস্তি কোনো কিছুই করেনি বলে জানা গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনের স্বার্থকতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে। ফেডারেশনের অনেকের মতে, প্রতিবেদন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভবিষ্যতে এ রকম তদন্ত কমিটিতে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে অনেকেই।
ফেডারেশন এখনো নারী ফুটবল নিয়ে রাখঢাক করেই চলছে। সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি করেছে। সেই চুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানায়নি। বাফুফের নতুন কমিটির ছয় মাস পার হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ নারী উইং প্রকাশ করতে পারেনি। নারী ফুটবল উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণই সকল কিছু দেখভাল করছেন (আগে কমিটি থাকলেও তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা)।
নারী ফুটবলে উদ্ভুত সংকটে নারী উইংয়ের দায়ও দেখেছিলেন অনেকে। নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের এক মন্তব্য বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। কিরণ বরাবরই বাটলারকে কোচ রাখার পক্ষে গণমাধ্যমে মন্তব্য দিয়ে আসছিলেন শুরু থেকেই। আকস্মিকভাবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কিরণ গণমাধ্যমে ইউটার্ন নিয়ে বলেন তিনি বাটলারকে না রাখার সুপারিশ করেছিলেন বাফুফের শীর্ষ কর্তারা বাটলারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এমন মন্তব্য ফেডারেশনের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এমন মন্তব্য করার পরও কিরণকে ফেডারেশনের কোনো জেরার মুখে পড়তে হয়নি। উল্টো বাফুফে সভাপতির সঙ্গে প্যারাগুয়েতে ফিফার সভায় বাফুফের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। এ নিয়ে ফেডারেশনের এক পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আবার অন্য পক্ষের তথ্য, ফিফা থেকেই নাকি নারী সদস্যকে সভায় যোগ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
এজেড/এইচজেএস