ঘরোয়াতে উজ্জ্বল, জাতীয় দলের জার্সিতে নিভু প্রদীপ তারা

ঘরোয়াতে পারফর্ম করেন, কিন্তু জাতীয় দলে তেমন কিছুর দেখা মেলে না। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ কি এই বাক্যটাই? দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছিল যাদের ব্যাটে, তাদেরকেই জাতীয় দলে এনে হতাশ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এমন চিত্রটা একদিনের না। দীর্ঘদিনের। ‘বিকল্প ভালো খেলেন না’– কেবল এই অজুহাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেকের ক্যারিয়ার হয়েছে লম্বা।
পুরাতন সেই কথাগুলোকে নতুন করে বলতে হচ্ছে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স শেষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বেশ শক্তপোক্ত দলই দাঁড় করিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের নির্বাচকরা। সম্ভবত হেরে যাওয়ার ভয় কিংবা পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা না থাকার একটা প্রমাণ ছিল এবারের ‘এ’ দল।
কিন্তু অভিজ্ঞ সেই মুখেদেরই চিত্রটা যে বেশ নাজুক। ডিপিএলে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নাইম শেখ লাল-সবুজের জার্সিটা গায়ে চাপাতেই যেন ব্যাটিং ভুলে গেলেন পুরোদমে। সিলেটে ৩ ওয়ানডে মিলিয়ে করেছেন মোটে ৬২ রান। আজ শেষ ওয়ানডেতে আউট হয়েছেন ৪ রান করে।
৩ ম্যাচ দিয়েই বিবেচনা করা উচিত না, এমন মন্তব্য মনে উঁকি দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে নাইমের ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত একবার দেখে নেয়া যেতে পারে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নাইমের গড় যেখানে ৪৫। জাতীয় দলে সেটা মাত্র ১৩.৫৭। অবশ্য জাতীয় দলে নাইমের অধ্যায়টাই বেশ ছোট। তাই নজরটা ফেরানো যাক অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয়ের দিকে।
চলতি সিরিজে ৩ ম্যাচে করেছেন ৭৯ রান। রান এসেছে ৩৮, ৩৯ এবং ৩৮। কাকতালীয়ভাবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে একবার ব্যাট করতে নেমেও বিজয় আউট হয়েছেন ৩৯ রানে। এ যেন ৪০ রান করতে না পারার তীব্র চেষ্টা। অথচ এই বিজয়ই লিস্ট ‘এ’ একের পর এক বড় ইনিংস খেলতে সিদ্ধহস্ত। সেখানে তার গড় ৪০.৭৬। সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেমে এসেছে ২৯.৩৯–এ।
‘এ’ দলের খেলা অবশ্য লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট নামেই পরিচিত। কিন্তু, ঘরোয়া ক্রিকেটে দেশি বোলারদের বিপক্ষে যারা সাহসী ব্যাটিংয়ের প্রতিশব্দ, তারাই বিদেশের বোলারদের বিপক্ষে ব্যাপক আকারে নড়বড়ে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটা হেসেখেলে জিতলেও এই ধ্রুব সত্য বদল হচ্ছে না।
ধ্রুব শব্দ থেকেই পরিসংখ্যানের এই খাতা টেনে নেয়া যাক আফিফ হোসেন ধ্রুবর কাছে। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকছেন নিয়মিত। কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ের সেই আফিফকে আর খুঁজে পাওয়া গেল কই! আজও ৩ বলে ১ রান করে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ মিস করেছেন। ঘরোয়া জার্সি আর আন্তর্জাতিক জার্সিতে তার পার্থক্যটা অবশ্য খুব বেশি বড় নয়। তবু ৩৪.৭৩ থেকে ২৮ এর নিচে নেমে আসা গড়কে ভালো বলারও সুযোগ থাকছে না।
দেশের ক্রিকেটের আরেক আক্ষেপ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আবাহনী দলের এক পরিচিত সৈনিক। বাংলাদেশের একমাত্র বহুজাতিক সিরিজের ট্রফিটাও এসেছিল তার ব্যাটে ভর করে। তবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে মোসাদ্দেক লাল-সবুজের জার্সিতে অনিয়মিত। নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষেও ধরে রেখেছেন সেই ধারা। ২ ম্যাচে করেছেন ১৭ রান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যার গড় ৪১.৫১। জাতীয় দলের হয়ে তার গড়টা ছিল ২৫.৩৬।
‘এ’ দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যেও একই কথা প্রযোজ্য। জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলছেন এমন তারকাদের অনেকেই দেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি। এর পেছনে আসলে দায় কি ওই লাল-সবুজ জার্সিটার? দেশের জার্সির ভারের কারণেই কি যুগ যুগ ধরে এমন নুইয়ে পড়া পারফরম্যান্স দেশি ব্যাটারদের?
এই উত্তর দেয়ার অবশ্য কেউ নেই। সংবাদ সম্মেলন থেকে বারবারই ক্রিকেটাররা কথা বলেছেন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে, নয়ত বলেছেন ভালো করার প্রচেষ্টার কথা। এই চক্র থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট কবে বেরুতে পারবে– সেই উত্তরটাও অবশ্য কারো জানা নেই।
জেএ