প্রিমিয়ারে ফিরল আরামবাগ

ঘরোয়া ফুটবলে বেশ পরিচিত এক নাম আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। গত কয়েক বছর ফিফার শাস্তি, ফিক্সিং নানা নেতিবাচক ইস্যু সঙ্গী ছিল ক্লাবটির। দুঃসময় পেরিয়ে আরামবাগ আবার বাংলাদেশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে ফিরছে। আজ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুশীলন গ্রাউন্ডে পিডব্লিউডির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে। এতে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দ্বিতীয় স্থান সুসংহত হওয়ায় প্রিমিয়ার লিগে খেলাও নিশ্চিত হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর বিসিএল থেকে শীর্ষ দু’টি দল বিপিএল খেলে। আগের রাউন্ডে পিডব্লিউডি প্রিমিয়ার নিশ্চিত করেছিল।
১৬ ম্যাচ শেষে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের পয়েন্ট ৩৪। সমান ম্যাচে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা সিটি ক্লাবের পয়েন্ট ২৭। শেষ দুই ম্যাচে আরামবাগ হারলে এবং সিটি ক্লাব জিতলেও পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান হের-ফের হবে না। এতে আবার চার বছর পর পুনরায় দেশের ফুটবলে শীর্ষস্তরে খেলার সুযোগ হয়েছে আরামবাগের।
আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল ক্লাবের এই সাফল্য সম্পর্কে বলেন, 'খুব স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আমরা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই সাফল্যের জন্য সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব ভাই, কোচ রিদনের অবদান অনেক। বিশেষ করে ফুটবলাররা যারা মাঠে সেরাটা দিয়েছেন তাদের কৃত্তিত্ব সর্বাধিক। লিগের অনেক রাউন্ড আমরা শীর্ষস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে পিছিয়ে পড়েছিলাম। এ নিয়ে আক্ষেপ নেই প্রিমিয়ারে উঠেছে দল এটাই স্বার্থকতা।’
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলীর প্রতিক্রিয়া, 'আরামবাগ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। মাঝে আমাদের ক্লাব ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছিল। প্রিমিয়ারে ফেরার মাধ্যমে আমরা ক্লাবের সেই পুরনো ইমেজ পুনরুদ্ধার অনেকটাই করতে সক্ষম হয়েছি।'
২০২১-২২ ফুটবল মৌসুমে ফিক্সিং কান্ডে জর্জরিত ছিল আরামবাগ। আরামবাগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা, কোচ ফিফার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছিল। বাফুফে আরামবাগকে দুই ধাপ নামিয়ে সিনিয়র (প্রথম) ডিভিশন লিগে খেলার সিদ্ধান্ত দেয়। আরামবাগ সিনিয়র ডিভিশন থেকে উত্তীর্ণ হয়ে উপরের ধাপ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে উঠেছে গত মৌসুমে। এবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রানার্স আপ হয়ে ফের প্রিমিয়ারে উঠল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালে নেপালের আনফা কাপে রানার্স আপ হয়েছিল আরামবাগ। আশি-নব্বইয়ের দশকে আরামবাগ জায়ান্ট কিলার হিসেবে অত্যন্ত খ্যাত ছিল। প্রিমিয়ারে আবার সেই পুরনো খ্যাতিই ফিরে পেতে চান ক্লাবের নতুন সভাপতি, 'প্রিমিয়ারে টিকে থাকা এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আশা করি আরামবাগ তার সেই হারানো ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাতি আবার পুনরুদ্ধার করবে। আমরা ক্লাব কর্র্তৃপক্ষ সেই লক্ষ্যে কাজ করব।'
৪০-৫০ লাখ টাকায় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ দল গড়া গেলেও প্রিমিয়ারে ন্যূনতম দল গড়তে ও বছর ব্যাপী পরিচালনা করতে ৩-৪ কোটির উপর ব্যয় হয়। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে উঠে অনেক ক্লাবই প্রিমিয়ার লিগ খেলেনি। চলমান বিসিএল থেকে প্রিমিয়ারে উত্তীর্ণ হওয়া পিডব্লিউডি ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ কী করে সেটাই দেখার অপেক্ষায়। বাফুফে সভাপতির নিজস্ব ক্লাব নোফেল স্পোর্টিংই এবার বিসিএলে অংশ নেয়নি। যা ফুটবলাঙ্গনে অত্যন্ত বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছিল।
বাফুফে নতুন কমিটি আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের বুলি আওড়ালেও বাস্তবে খুব বেশি দৃশ্যমান হয় না। বিসিএলের খেলোয়াড় তালিকা-ফলাফল বাফুফে নিয়মিতভাবে মিডিয়ায় সরবারহ করেছে এত দিন। আজ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচের ফলাফল ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়ায় অবহিত করেনি। রাতে ফেসবুক পেজে আজকের তিন ম্যাচের ফলাফল একটি পোস্ট আকারে প্রকাশ করেছে। এরপর পয়েন্ট টেবিল ও বাইলজ ঘাটাঘাটি করে রেলিগেশন-প্রমোশনের হিসাব মেলাতে হয় সাংবাদিকদের।
এজেড/এইচজেএস