হামজাদের ম্যাচ দেখতে বিড়ম্বনায় দর্শকরা

ঈদের আগে আজ শেষ কর্মদিবস। গুলিস্তান-মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় এমনিতেই বাড়তি ব্যস্ততা। সেই ব্যস্ততা ছাপিয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামমুখী মানুষের ভিড়। জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য চারটি বড় গেট। প্রতি গেটই ছিল ভিড়। ম্যাচের সময় যত ঘনিয়ে আসছিল। ততই ভিড় বাড়ছিল।
অনলাইন টিকিটিং হওয়ায় গেটগুলোতে সমর্থকদের টিকিট স্ক্যানিং হচ্ছিল। এক সমর্থক বলেন, 'অনেক লম্বা লাইন স্ক্যানিং ও নিরাপত্তা বেস্টনী বেরিয়ে যেতে সময় লাগছিল। সাতটায় খেলা শুরু হয়ে যাওয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সবাই গড়মড় করে ঢুকে পড়ে বেস্টনী পেরিয়ে।' পূর্ব গ্যালারীতে এক সঙ্গে কয়েকশ দর্শক প্রবেশ করতে দেখা যায় ম্যাচের দশ মিনিটের সময়।
স্টেডিয়ামে প্রবেশের ৩ এবং ৪ নম্বর গেটে নির্দিষ্ট লাইন এবং গেইটের পুরোটা ভেঙে প্রবেশ করেন কয়েকশ সমর্থক। নিরপত্তা নিশ্চিত করতে গ্যালারিতে প্রবেশের সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে দেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। মূল ফটক পেরিয়ে আসা সবাই তখন গ্যালারিতে প্রবেশের রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত।
এদের মাঝে অনেকেই ছিলেন টিকেট ছাড়াই। ভেতরে এসে টিকেটের সন্ধান করেছেন অনেকে। আবার অনেকে টিকেট পেয়েও স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারেননি। সমর্থকদের মাঝে অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ ছিল স্পষ্ট।
স্টেডিয়ামে টিকেট নিয়ে প্রবেশ করা একাধিক সমর্থক জানান, ৩ নম্বর গেইট দিয়ে পুলিশ দর্শকদের শান্ত করতে লাঠিও ব্যবহার করেছে। একপর্যায়ে দর্শকদের চাপ সামাল দিতে না পেরে পুরো গেইট খুলে দেয়া হয়। এই সময়েই মাঠের মূল চত্বরে চলে আসেন সকলে। ততক্ষণে অবশ্য গ্যালারিতে প্রবেশের সব রাস্তাই বন্ধ।
বাফুফে প্রথমবারের মতো অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা করেছে। টিকিফাই নামক প্রতিষ্ঠান বাফুফের এই ম্যাচের টিকিট ম্যানেজম্যান্ট করছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল টিকিট স্ক্যানিং ও ব্যবস্থা নিয়ে। আজ সেই সিস্টেম খানিকটা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ফলে সিঙ্গাপুর ম্যাচে আরো বড় শঙ্কা থাকছে।
ঘরোয়া ফুটবল সংস্কৃতিতে নারী দর্শকরা গ্যালারীতে তেমন আসেন না। হামজা-ফাহমিদুলের খেলা দেখতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া অনেক নারীও। তাদের সঙ্গী ছিলেন মায়েরাও। পঞ্চাশ বছর বয়সী হেলেনা খাতুন স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে প্রবেশের মুহুর্তে বললেন, 'ফুটবল নিয়ে অনেক আলোচনা। তাই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আসলাম খেলা দেখতে। স্টেডিয়ামের পরিবেশও ভালো হয়েছে। তাই সপরিবারেই এলাম।' হেলেনা খাতুনের মেয়ে আইডিয়াল কলেজে পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে এসে তিনি বলছেন, 'মাঠে বসে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিব। আর হামজা-ফাহমিদুলের খেলা দেখতে বেশি আগ্রহী।’
ঈদের সময় আন্তঃজেলা বাস, রেলের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই নরসিংদীর পলাশ থেকে পাঁচ জন কলেজ পড়ুয়া এসেছেন। পাঁচ বন্ধু একসুরেই বলেন, 'সিঙ্গাপুরের ম্যাচ দেখার অনেক ইচ্ছে ছিল। সেই ম্যাচের টিকিট পাইনি। ভুটান ম্যাচ পাওয়ায় আমরা আগেভাগেই নরসিংদী-ঢাকা ও ঢাকা নরসিংদী টিকিট কেটেছিলাম।'
জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের তীর্থস্থান হলেও দোকানপাটের জন্য পরিবেশ থাকত অন্যরকম। এই ম্যাচ উপলক্ষ্যে আজ সকাল থেকে ভিন্ন রকম আবহ। পুলিশ ছাড়াও ফেডারেশন এই ম্যাচের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছিল। দর্শকরা খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর গ্যালারীতে হুড়মুড় ঢোকা ছাড়া তেমন বড় ধরনের অব্যবস্থাপনা হয়নি।
টিকিফাই ও বাফুফে উভয় বলেছিল বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচের সাধারণ গ্যালারী টিকিট সম্পূর্ণ বিক্রিত। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবাহনী গ্যালারীর অর্ধেকের বেশি অংশ ফাকাই রয়েছে। মোহামেডানের গ্যালারী অর্ধেকের বেশি পূর্ণ ছিল। পূর্ব দিকের গ্যালারী অবশ্য ছিল প্রায় পরিপূর্ণ। ভিআইপি ও ক্লাব হাউজ ভরপুরই রয়েছে।
এজেড/জেএ/এইচজেএস