‘দলগত ইভেন্টেও অলিম্পিক খেলতে চাই’

এশিয়া কাপ আরচ্যারি স্টেজ-২ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের আরচ্যার আব্দুর রহমান আলিফ রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন। টুর্নামেন্ট শেষেই সিঙ্গাপুরে থাকা বিকেএসপির দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আলিফের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়ের।
দেশ ছাড়ার আগে কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক বলেছিলেন, ‘অন্তত দু’টি পডিয়াম (পদক) চান’। সিঙ্গাপুরে এশিয়া কাপ আরচ্যারিতে কেউই পদক পায়নি। আপনি টুর্নামেন্টের সর্বশেষ ইভেন্টে স্বর্ণ জিতে বাংলাদেশের উৎসবের উপলক্ষ্য করলেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে স্বর্ণের লক্ষ্য ছিল কি?
আলিফ : অবশ্যই স্বর্ণের লক্ষ্য নিয়ে আসিনি। রিকার্ভ এককে ভালো শুরু হয়ে যাওয়ার পর আশা বাড়তে থাকে। যখন সেমিফাইনালে উঠেছি তখনই মূলত স্বর্ণের চিন্তা করেছি।
আপনার ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে দুই দিন আগে। এই দুই দিন বাংলাদেশ দলীয় ও মিশ্র বিভাগে ব্যর্থ হয়েছে। আজ সকালে কম্পাউন্ড ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ মিস হয়েছে। এতে আপনার চাপ বাড়ছিল কি না?
আলিফ : আমরা এই টুর্নামেন্টে আরো পদক পেতে পারতাম। তিনটি ব্রোঞ্জের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আমাদের রিকার্ভ পুরুষ দলগত ইভেন্টেই ব্রোঞ্জ মিস করেছি। তাই বাড়তি প্রতিজ্ঞা ছিল ফাইনালে জিততে হবে। চাপ সেভাবে নয় কিন্তু বেশ সতর্ক ছিলাম।
ফাইনালে আপনার শুরুটা দারুণ ছিল। প্রথম দুই সেট জিতে খেলায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। এরপর আবার টানা দুই সেট হারলেন। শেষ সেট স্বর্ণ পদক নির্ধারক ছিল। ঐ সময় স্নায়ুচাপ কীভাবে সামাল দিলেন?
আলিফ : জাপানী আরচ্যারও বেশ ভালো মানের। সে দারুণভাবে খেলায় ফিরে এসেছে। শেষ সেট হারলেই স্বর্ণ হাতছাড়া তাই অতিরিক্ত চাপ নেইনি। কোচের পরামর্শে স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেছি। আমি কখনো হাল ছাড়ি না। থাইল্যান্ডে এশিয়া কাপে দল থেকে বাদ পড়েছিলাম। আবার চেষ্টায় এক নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ফিরে এসেছি।
রোমান সানার পর এশিয়ান কাপ আরচ্যারিতে বাংলাদেশের আরেকটি স্বর্ণ জয়। রোমান ও রুবেল এখন প্রবাসী। আপনি এই স্বর্ণ জয়ের পর এখন আরচ্যারির তারকা ও রিকার্ভের ভরসা। সাগর ও আপনার হাতেই এখন মূলত বাংলাদেশের রিকার্ভ আরচ্যারি। টিন এজার হিসেবে এত বড় দায়িত্ব ও তারকাখ্যাতি কি বাড়তি চ্যালেঞ্জ?
আলিফ : এশিয়ান কাপে বাংলাদেশকে স্বর্ণ এনে দিতে পেরেছি এজন্য বেশ ভালো লাগছে। অনেক পরিশ্রম করেছি। সেটার একটা সাফল্য পেলাম। জাতীয়-আন্তর্জাতিক যে কোনো আসরেই চেষ্টা করি দলকে সেরাটাই দিতে। ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগছে বাংলাদেশকে একটি স্বর্ণ এনে দিতে পারছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমার প্রথম স্বর্ণ পদক একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে সামনে আরো এগিয়ে যেতে চাই সবার দোয়া ও সমর্থন চাই। নিজের সেরাটা দিয়ে দেশ-বিদেশের মাটিতে যেন আরো বেশি জাতীয় সঙ্গীত বাজে (স্বর্ণপদক) সেটাই চাইব।
এশিয়ার বিশটি দেশ অংশগ্রহণ করেছে এই টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশ একটি ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছে; বড় সাফল্যই। ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলার খেলোয়াড়রা বড় মঞ্চে সাফল্য আনলেও সম্মানী-সুযোগ সুবিধায় তাদের চেয়ে পিছিয়ে। এ নিয়ে কোনো আফসোস বা ফেডারেশন-সরকারের কাছে কোনো বার্তা দিতে চান?
আলিফ : বাংলাদেশের জার্সিতে যে খেলার খেলোয়াড়ই খেলুক না কেন সবাই দেশের জন্যই খেলে। দেশের সম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যই থাকে সবার। সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আমার শুধু এটুকুই চাওয়া আমরা যেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আরো বেশি খেলতে পারি। তাহলে নিজেদের পারফরম্যান্স আরো বৃদ্ধি পাবে। র্যাংকিং ভালো আমাদের আরচ্যারি আরো উপরের স্তরে যাবে।

আপনার বিকেএসপির সতীর্থ সাগর ইসলাম গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। আপনার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে আপনি ও সাগরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে। আপনি নিজেকে কোথায় দেখেন?
আলিফ : আমি শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, পুরো রিকার্ভ টিম নিয়েই স্বপ্ন দেখি। আমরা রিকার্ভ টিম হিসেবেই অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে চাই। গত দুই বার আরচ্যারি ব্যক্তিগত ইভেন্টে কোয়ালিফাই করেছিল বাংলাদেশ। এখনো কখনো কোনো দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশ অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেনি। রিকার্ভ পুরুষ দলগতে আমরা সেটি পারব এই বিশ্বাস রাখি। এই টুর্নামেন্টেই আমরা ফাইনালের দাবিদার ছিলাম।
আপনি যখন সিঙ্গাপুরে খেলছেন তখন বিকেএসপির ডিজি আপনি ও সাগরকে নিয়ে ২০২৮ অলিম্পিকের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছিলেন। এইচএসসির পরই মূলত বিকেএসপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক চুকে যায়। সেখানে আপনারা দুই জন আরো দুই বছর বিকেএসপির সঙ্গে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। এট কীভাবে দেখছেন?
আলিফ : বিকেএসপিতে আমার আরচ্যারির হাতেখড়ি। এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি। আমি বিষয়টি শুনেছি। দেশে ফিরে ডিজি স্যার ও বিকেএসপির স্যাররা আরো বিস্তারিত নিশ্চয়ই বলবেন। বিকেএসপি আমাদের রাখলে সেটা তো অবশ্যই দারুণ ব্যাপার হবে।
তরুণরা সাধারণত ফুটবল, ক্রিকেটেই আগ্রহী হয়। আপনি আরচ্যারিতে আসলেন কীভাবে?
আলিফ : আমিও ছোট বেলায় ফুটবল খেলতাম। খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ি। তখন আমার আব্বুর এক বন্ধু বললেন ফুটবলে যেহেতু ব্যথা পেয়েছ আরচ্যারি খেল। পরে বিকেএসপিতে আরচ্যারিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। চান্স পেলাম এরপর থেকেই আরচ্যার।
আপনার এই সাফল্যের পেছনে জাতীয় দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক না বিকেএসপির কোচের অবদান বেশি?
আলিফ : আমার ক্যারিয়ারের পেছনে অনেকের অবদান। একক কারো নাম বলা যাবে না। আমার পরিবার, ফেডারেশন ও বিকেএসপির কোচ, কর্মকর্তা আরো অনেকে আছেন। সবার কাছেই আমি ঋণী ও সবার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এজেড/এইচজেএস
