‘কোচিংয়ের’ নতুন চ্যালেঞ্জে বিকেএসপি ছাড়লেন কোচ জয়া

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ হলেও জয়া চাকমার ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ পরিচিতি দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী ফিফা রেফারি হিসেবে। রেফারিং তার নেশা হলেও কোচিং মূলত পেশা। তবে এবার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোচের চাকুরি থেকে সরে এসেছেন নিজ ইচ্ছেতেই।
বিকেএসপি ছাড়ার নেপথ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠিতে জয়া ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন। তবে এর পাশাপাশি আরেকটি কারণ হিসেবে বলেন, ‘সম্প্রতি আমি এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স করেছি। আমি দেশে এবং দেশের বাইরে কোচিং করাতে চাই। আরও অধিকতর কোচিংয়ের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্যই আমার এই সিদ্ধান্ত।’
বিকেএসপি ক্রীড়াঙ্গনের আতুড়ঘর। সেই আতুড়ঘরে কোচরাই জাতীয়-আন্তর্জাতিক তারকা তৈরি করেন। অথচ সেই কোচরা পদোন্নতি ও নানা বিষয়ে থাকেন উপেক্ষিত। এজন্য সাবেক দ্রুততম মানব আব্দুল্লাহ হেল কাফী বিকেএসপি ছেড়েছেন। আরও কয়েকজন কোচ বিকেএসপি ছেড়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) কর্ণেল মো. গোলাম মাবুদ হাসান বলেন, ‘জয়া চাকমা আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল কোচ ছিলেন। তার মাধ্যমে সুব্রত কাপে বিকেএসপি তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ও একবারের রানার্স আপ। ব্যক্তিগত কারণেই তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন কোচ পদ থেকে। তার অব্যাহতির আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন হয়েছে হয়েছে সম্প্রতি।’
২১ ডিসিপ্লিনের জন্য বিকেএসপিতে শতাধিকের বেশি কোচ রয়েছেন। অবসর, বদলি, স্বেচ্ছায় চাকুরি ত্যাগ মিলিয়ে পদ শুন্য হয় প্রায়ই। সেই পদ পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে বিকেএসপি। ‘আমাদের এখন প্রায় ১২০ জনের মতো কোচ রয়েছে। রাজস্ব খাতে ১৩ জন কোচের পদ শূন্য ছিল। সেটা পূরণের প্রক্রিয়া চলছে’, বলেন পরিচালক গোলাম মাবুদ (প্রশিক্ষণ)।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার জয়া চাকমা দেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম নারী ফিফা রেফারি হয়েছেন। আবার কোচিংয়ে এক ইতিহাসের সঙ্গী। এশিয়ার ফুটবলে কোচিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সনদ এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স। সেখানে তিনি ও লিনা চাকমা দুই জনই ‘এ’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স করেছেন। প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে কোচিং করাতে পারেন ‘এ’ লাইসেন্স কোচরা। বিকেএসপিতে জয়া তরুণীদের কোচিং করিয়েছেন। এখন তার লক্ষ্য পেশাদার পর্যায়ে নিজেকে কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
কোচিং ও রেফারিং খানিকটা বিপরীতমুখী অবস্থান। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে প্রায়ই কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। জয়া একদিকে রেফারি আবার আরেকদিকে কোচ। দুই ক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়েছেন বড় উচ্চতায়। নিজের কোচিং-রেফারিং নিয়ে বলেন, ‘কোচিং আমার পেশা এবং রেফারিং নেশা। এখনও রেফারিং করে যাচ্ছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। রেফারিং অনেকটা ফিটনেস নির্ভর। বয়স বাড়লে এটা কষ্টসাধ্য। কোচিং জ্ঞান আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে ফুটবলার তৈরি করা সম্ভব। আমৃত্যু ফুটবলের সঙ্গে থেকে কোচিং করাতে চাই।’
জয়া শুধু কোচিং-রেফারিংয়ে ননস একাডেমিক পড়াশোনাতেও উচ্চ শিক্ষিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেছেন। ভারতে শারীরিক শিক্ষার ওপর আরেকটি উচ্চতর মাস্টার্স করেছেন। সেই সুবাদে ভারতে কোচিং ও রেফারিংয়ে সুযোগ দেখছেন জয়, ‘ভারতে উচ্চশিক্ষা থাকায় সেখানের পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি। ফুটবলের সার্কেলে আমার পরিচিতি আছে। সেখানে বিভিন্ন ক্লাব, একাডেমিতে যোগাযোগ থাকায় সেখানেও কোচিংয়ের একটি সম্ভাবনা আছে।’
এজেড/এইচজেএস