বক্সিংয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আমেরিকান প্রবাসী জিনাত

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদক এসেছিল বক্সিংয়ে। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়াডে মোশাররফ হোসেন ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এরপর বাংলাদেশের আর কোনো বক্সার মহাদেশীয় পর্যায়ে কোনো পদক জিততে পারেননি। আমেরিকান প্রবাসী জিনাত ফেরদৌস বাংলাদেশকে সেই আশারা আলো দেখাচ্ছেন আবার।
চলমান জাতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সুদূর আমেরিকা থেকে এসেছেন। গত দুই বছর যাবৎ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশে কোনো আসরে খেলবেন। ১৯৯৪ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করলেও বাংলাদেশি হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য জিনাতের, 'আমি বাংলাদেশি। বাংলাদেশের মেয়ে, বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলছি। বাংলাদেশে কখনো খেলিনি। এবার সুযোগ পেয়েছি তাই খেলতে এলাম।'
জিনাত সাধারণত ৫০ কেজিতে খেলেন। ঢাকায় জাতীয় আসরে খেলবেন ৫২ কেজিতে। ঢাকার মুহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামের রিং, গ্যালারী পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে পিছিয়ে। এরপরও তার মুখে কোনো অভাব-অভিযোগ নেই, 'পরিবেশ ভালোই, আশা করি ভালোই ফাইট হবে।' এটা বলতে বলতে ভাঙা-ভাঙা বাংলায় বললেন, 'আমার ডিফেন্স ভালো, আপনারা কাল খেলা হলেই দেখবেন।'
২০২৩ সালের চীনের হাংজু এশিয়ান গেমসে জিনাত বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলেন। এখন তাকে ঘিরেই বাংলাদেশের বক্সিংয়ের আশা-ভরসা। জিনাত নিজেকে নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন এভাবে, 'আগামী বছর এসএ গেমস, কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমস রয়েছে। আমি প্রতি আসরেই বাংলাদেশের হয়ে পদক জিততে চাই। আমি যখনই কোনো গেমে নামি প্রতিটি জয়ের চেষ্টা করি। বাংলাদেশে খেলার পেছনে মামুন (জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি) আঙ্কেলের অবদান অনেক। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।'
জিনাত সাম্প্রতিক সময়ে সাতটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। সাতটির মধ্যে পাঁচটিতে তিনি পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে তিনটি স্বর্ণ ও দু’টি ব্রোঞ্জ। এই টুর্নামেন্টগুলো তার এশিয়ান-কমনওয়েলথকে আশা দেখালেও ২০২৩ সালের পারফরম্যান্স অবশ্য হতাশারই। জিনাতের পরিবর্তে সেলিম কোয়ার্টারে উঠে পদকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। এশিয়ান গেমস প্রসঙ্গে জিনাতের ব্যাখ্যা, 'খেলাধূলায় স্পোর্টসম্যানদের এক দিন বাজে সময় আসতেই পারে। এশিয়ান গেমসে আমার যে প্রতিপক্ষ ছিল সে অত্যন্ত উচু মানের। তার সঙ্গে আমি লড়াই করেই হেরেছি। আপনাদের ফলাফল দুই দিক দিয়েই বিশ্লেষণ করা উচিত।'
গত বছর প্যারিস অলিম্পিকে বক্সিং বাছাই টুর্নামেন্টে এন্ট্রি জটিলতা করেছিল ফেডারেশন। থাইল্যান্ডে এশিয়ান বাছাইয়ে খেলতে পারলে সেখানে ভালো ফলাফল করলে সম্ভাবনা ছিল সরাসরি অলিম্পিকে খেলার। এ নিয়ে খানিকটা আফসোস রয়েছে তার, 'একটু তো খারাপ লাগেই যাই হোক পাস্ট ইজ পাস্ট। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক নিয়ে চিন্তা করছি।'

জিনাতের বয়স এখন ৩১। তিনি বক্সিংয়ে এসেছেন মাত্র বছর চারেক। মালয়েশিয়ান স্বামীর অনুপ্রেরণায় তার বক্সিং শুরু ২৭ বছর বয়সে। চার বছরের মধ্যে নিজেকে বেশ উন্নত করেছেন। নিজের বক্সিংয়ে আগমন নিয়ে বলেন, 'আমি ছোট বেলা থেকে বক্সিং নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিলাম না। আমার স্বামী মালয়েশিয়ান আমেরিকান। তার মাধ্যমে বক্সিংয়ে আগ্রহী এবং নিজেকে গড়ে তুলেছি।' আমেরিকা বিশ্বের উন্নত দেশ। খেলাধূলাতেও অনেক এগিয়ে। আমেরিকার চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার কারণ সম্পর্কে জিনাত বলেন, 'আমেরিকায় আমার র্যাংকিং ৭-৮ হলেও সেটা সেখানে তেমন ম্যাটার করে না। বাংলাদেশের হয়ে আমি খেললে সেটা অনেক। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আমি যখন বাংলাদেশেল হয়ে খেলি তখন অনেকেই জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশ। কারণ আগে কখনো সেভাবে কেউ যায়নি। আমি আমেরিকান হলেও বাংলাদেশকেও ধারণ করি। আমার বাসায় বাবা-মা বাংলায় কথা বলি। আমার স্বামী মালয়েশিয়ান আমেরিকান হলেও বাংলা বুঝে।'
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য ফেডারেশনগুলোর আর্থিক সঙ্কট প্রচুর। জিনাত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করলেও ফেডারেশন সেভাবে সহায়তা করতে পারে না। নিজ খরচেই খেলতে হয় জিনাতকে এ নিয়ে অবশ্য আক্ষেপ নেই তার, 'আমি আমেরিকায় গুগলে জব করি। বক্সিং আমার নেশা। আমার একজন ভালো কোচও রয়েছেন যা বেশ ব্যয়বহুল। তিনি সব সময় আমার সঙ্গী হন শুধু এবার ঢাকায় আসেননি।'
৩১ বছর বয়সে অনেক খেলায় খেলোয়াড়রা অবসরে যান। বক্সার জিনাত বর্তমান সময়ে নিজেকে পরিপক্ব মনে করছেন, 'এটা সত্যি যে কোনো খেলায় ২৭ বছরে শুরু করা অনেক বিলম্ব। তবে সেই বয়সটা বেশ পরিপক্ব। এখনো খেলা উপভোগ করছি, যত দিন পারব খেলব।'
এজেড/এইচজেএস