‘নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা প্রেস রিলিজে আটকে থাকব না’

দীর্ঘ এক দশক পর ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—কোয়াবের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলার একাডেমি ভবনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিকেটার মোহাম্মদ মিঠুন।
কোয়াবের নির্বাচন শেষে আজ (শুক্রবার) বাকি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে নবনির্বাচিত সভাপতির। যারা সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারবেন না তারা অংশ নেবেন অনলাইনে। তার আগে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে আলাপে নতুন দায়িত্ব এবং কোয়াব নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন মোহাম্মদ মিঠুন।
ক্রিকেটারদের সংগঠনের সভাপতি হয়ে কেমন লাগছে?
মিঠুন : এটা আমার জন্য একটা সম্মানের। সবাই আমাকে চিন্তা করেছে যেহেতু, আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। এত অল্প বয়সে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি, একই সাথে আমি এটা চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব মনে করছি। এখানে সভাপতি হওয়াটা তো মূল বিষয় না, এখানে মূল দায়িত্ব হলো কাজ করা।
১২০ ভোটে জিততে পারবেন ভেবেছিলেন?
মিঠুন: না দেখেন আসলে এগুলো নিয়ে আমার এত চিন্তা ছিল না। জিততে হবে কিংবা এত ভোট পেতে হবে আমার এরকম কোনো মাথাব্যথা ছিল না। আমি এভাবে কখনো চিন্তাও করিনি, আমার একটাই চিন্তা ছিল আমি যদি দায়িত্বে আসতে পারি কিভাবে ক্রিকেটারদের সাহায্য করতে পারি আরও কাছ থেকে। তাদের সমস্যাগুলো ডিটেইলস জানা সে অনুযায়ী কাজ করা। তো এগুলো আসলে ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়, আমি সভাপতি না হলেও কষ্ট পেতাম জিনিসটা এরকম না।

নির্বাচন করার চিন্তাটা কিভাবে আসল?
মিঠুন: দেখেন নির্বাচনের আগে কিন্তু গেল কয়েক মাস ধরে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছিলাম। আমরা যারা এখন রানিং ক্রিকেটার তারা জড়িত ছিলাম। বেশ কয়েকটি আলোচনা, মিটিং করেছি। অনেকের কাছে গিয়েছিলাম কোয়াবের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। সবাই ফিরিয়ে দিয়েছিল কেউ আসলে দায়িত্ব নিতে চায় না। একটা সময় এমন হয়েছিল কেউ আসতে চাচ্ছে না, অনেকে মনঃক্ষুন্ন। গা-ছাড়া একটা ভাব হয়ে গিয়েছিল। তো তখন আমি চিন্তা করেছিলাম যে ক্রিকেট আমাকে আমার জীবনে অনেক কিছুই দিয়েছে। আমার একটা সুন্দর জীবন উপভোগ করার পেছনে বা আজকের মিঠুন হওয়ার পেছনে ক্রিকেটের অবদান সবচেয়ে বেশি। তখন ভাবলাম যে ক্রিকেটকেও তো আমার কিছু দেওয়ার আছে। এখান থেকে সরে যাওয়া সহজ, কারণ এখানে কোনো স্বার্থ নেই, টাকা পয়সা কিছু নেই ঝামেলার মধ্যে যাব না এমন।
পরে সিদ্ধান্তটা আসলো কিভাবে?
মিঠুন : এরপর আসলে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে তামিম ভাই। উনার চিন্তা আর আমার চিন্তাটা একসাথে মিলে গিয়েছিল। আসলে তামিম ভাইয়ের সব ক্রিকেটারদের এক করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি এবং উনি প্রতিটা ক্রিকেটারকে ফোন করেছেন দাওয়াত করেছেন। সবাই সবার মতামত দিয়েছে এরপরে ডিসিশান নিতে হবে যে সভাপতি কে হবেন। তো অনেককেই অনুরোধ করা হয়েছিল যখন কেউ রাজি হচ্ছিল না। তখন একটা সময় এসে আর সময় ছিল না, পরে কিছু ক্রিকেটারদের থেকে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়। তামিম ভাইও বললেন, পরে আমি বললাম যদি কেউ না করতে চায়.... তো কাউকে না কাউকেতো সামনে আসতে হবে। আমি বললাম যে আপনারা যদি চান তাহলে আমি করব। ওই থেকেই আসলে শুরু।
তরুণ প্রজন্মের ভোটারের ভোটে জিতলেন, দায়িত্বটা বেশি
মিঠুন: ভোটার ছিল ২১৫ জন টোটাল। কিছু ভোটার অনুপস্থিত ছিল। টোটাল ৮৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে দুটা ভোট নষ্ট হয়েছে। তো এখানে শুধু জুনিয়র না সিনিয়রদেরও অনেকের হেল্প ছিল। এটা ঠিক যে, জুনিয়রদের ভোটের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল তারা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
কী কী কাজ করার লক্ষ্য
মিঠুন: লক্ষ্য অনেক। এই কোয়াবকে আমরা আসলে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে উন্নত করার স্ট্রাকচার যেটা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন তারপরে যে খেলা হয় তো এদেরকে আরো কিভাবে ফ্যাসিলিটি দেয়া যায় সেই চিন্তা রয়েছে। এদেরকে আর্থিকভাবে আরো কিভাবে ভালো করা যায় সেই চিন্তাও রয়েছে। খেলা কিভাবে বাড়ানো যায়, জেলা পর্যায়ে সব লীগ বন্ধ, সেই লীগগুলো চালু করা। কাজ অনেক বেশি এটা আসলে এক সাথে করা সম্ভব নয়। স্টেপ বাই স্টেপ আগাতে হবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সবকিছু আসলে সমস্যা যদি বের করতে চান তো ১০০ সমস্যা কিন্তু বের করা যায়। এটা বুঝতে হবে যে একসাথে ১০০ কাজ করা যায় না।
তামিম (ইকবাল) ভাই আর আমার চিন্তাটা একসাথে মিলে গিয়েছিল। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি এবং উনি প্রতিটা ক্রিকেটারকে ফোন করেছেন। সবাই সবার মতামত দিয়েছে এরপরে ডিসিশান নিতে হবে যে সভাপতি কে হবেন। তো অনেককেই অনুরোধ করা হয়েছিল যখন কেউ রাজি হচ্ছিল না। তখন একটা সময় এসে আর সময় ছিল না, পরে কিছু ক্রিকেটারদের থেকে আমার নাম প্রস্তাব করা হয়। আমি বললাম যে আপনারা যদি চান তাহলে আমি করব। ওই থেকেই আসলে শুরু।
যা বললেন এগুলো হবে নাকি শুধু একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে নিন্দা জানানো বা প্রতিবাদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন থাকবে
মিঠুন: আমি আসলে এতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি, আমরা প্রেস রিলিজের মধ্যে আটকে থাকবো না। আগে আমরা ফিজিক্যালি চেষ্টা করব তারপরে প্রেসে যাব। আমি আসলে এত প্রচারণায় বিশ্বাসী না কাজে বিশ্বাসী। আমি কাজ করে তারপরে জানাবো যে আমি এটা করেছি।
অনেক সময় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার বা অন্যরা ইনজুরিতে পড়লে টাকা বা সুযোগের অভাবে ব্যাক করতে পারে না এটা নিয়ে কী ভাবছেন?
মিঠুন : আমাদের প্রত্যেকটা বিষয় মাথায় আছে। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় কাজ হলো যখন কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়ে। বোর্ড থেকে তো একটা সাপোর্ট পাই প্রথম শ্রেণীর যারা চুক্তিতে রয়েছে। এরপর ইনজুরি হওয়ার ছয় মাস পরে আসলে তার চিকিৎসা শুরু হয়। এটা কিন্তু অনেক বেশি সময়, আমরা চেষ্টা করব এই জিনিসটা যেন ইনজুরিতে পড়ার দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা হয়। চিকিৎসা শুরু হতে যেন ৬ মাস সময় না লাগে। একটা ক্রিকেটার ইনজুরি পড়ার ছয় মাসের মধ্যে ফিরতে পারে যদি ঠিক সময়ে অপারেশন হয়। আর ফার্স্ট ডিভিশন বা সেকেন্ড ডিভিশন বা থার্ড ডিভিশন সবগুলো কিন্তু একটা লম্বা প্রসেস। এটা অনেক সময় লাগবে তো এগুলো আমাদের প্রায়োরিটি লিস্টে থাকবে।

মিরপুরে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছাড়া অনুশীলনের সুযোগ নেই, এটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি না
মিঠুন: দেখেন ফ্যাসিলিটির বিষয়টা কিন্তু আজ থেকে কথা উঠছে না। এটা কিন্তু সবাই স্বীকার করে যে বাংলাদেশের ফ্যাসিলিটিজ খুব একটা ভালো না। ফ্যাসিলিটিজ না দিলে কিন্তু ক্রিকেটাররা উঠে আসবে না এটা খুব স্বাভাবিক। এটা ক্রিকেট বোর্ডও এখন চেষ্টা করছে বিভিন্ন ভেন্যুতে প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন। এটা কিন্তু বোর্ডের মাথায়ও আছে, যে জিনিসগুলো বোর্ড থেকে অটোমেটিক হবে সেটা নিয়ে তো আমাদের কথা বলার দরকার নেই। আমরা বোর্ডের কাছে যাব যেগুলো করা উচিত বোর্ড দিচ্ছে না সেগুলো নিয়ে। যেগুলো দিচ্ছে সেগুলো নিয়ে আসলে বাজার গরম করে লাভ নেই।
কোয়াব কি অ্যাওয়ার্ড নাইটের মতো কোনো আয়োজন করে ক্রিকেটারদের পুরস্কৃত করবে?
মিঠুন: আমাদের নতুন যে গঠনতন্ত্র হয়েছে সেখানে এই পুরস্কারের কথা রয়েছে যেটা বললেন। কিন্তু কোয়াব লাভজনক প্রতিষ্ঠান না এটা একটা সেবামূলক জায়গা। ফান্ডিং দরকার আমরা তো আসলে কোনো ফান্ড ছাড়াই শুরু করেছি। এখন একটু ভালো অবস্থায় আছে ব্যালেন্সড মেম্বারের মাধ্যমে। এটাকে আমরা দিনকে দিন বাড়ানোর চেষ্টা করব। আর মেইনলি দেখানো যে কাজগুলো সেগুলো আমরা পরে করব। আসলে যে কাজগুলো করলে অনেক হাইলাইটস হবে সেই কাজের থেকে ব্যক্তিগতভাবে চাই, যে জায়গায় ক্রিকেট উন্নতি করবে ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ হবে সেটা করতে।
কোয়াবকে রোল মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখেন কি না
মিঠুন: দেখেন ভাই আমি কিন্তু মাঠের মানুষ ক্রিকেটটা ভালো বুঝি। কিন্তু সাংগঠনিক কাজে আমার প্রচুর সাহায্য দরকার মানুষের। কারণ আমি সাংগঠনিক লাইনের না, এটা খুবই স্বাভাবিক। আমার একটা টিম আছে, আমাদের সিনিয়র জুনিয়র যারা আছে সবাইকে বলেছি সবার সহযোগিতা লাগবে। সবাইকে এই প্রতিষ্ঠানকে ধারণ করতে হবে যে এটা আমার নিজের। যখন সবাই নিজের মনে করবে তো এই জায়গাটা অনেক বড় হবে। যারা অনেক সিনিয়র রয়েছে তাদের সাথে কথা বলেছি তাদের সাহায্য চেয়েছি।
এসএইচ/এফআই
