১৪ বছর পর মাত্র এক জিএম, ৭ বছর ধরে নেই নারী দাবাড়ু

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ৪৯তম জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। এবারের জাতীয় দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টারদের মধ্যে শুধুমাত্র নিয়াজ মোর্শেদই অংশগ্রহণ করছেন। অন্য চার গ্র্যান্ডমাস্টারদের কেউই আসন্ন জাতীয় দাবায় অংশগ্রহণে আগ্রহী নন। ২০১০ সালের পর এবারই মাত্র একজন গ্র্যান্ডমাস্টার জাতীয় দাবায় অংশগ্রহণ করছেন।
উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ। বয়স প্রায় ৬০। এখনো দাবার বোর্ডে অনেকটাই সক্রিয়। মাত্র একজন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়ে জাতীয় দাবা আয়োজন সম্পর্কে নিয়াজ বলেন, 'জিয়া ও রাজীব নিয়মিতই জাতীয় দাবা খেলত। জিয়া গত বছর জাতীয় দাবা খেলতে খেলতেই বিদায় নিয়েছে। রাজীব এখন প্রবাসে। রিফাত পেশাগত কাজে ব্যস্ত আর রাকিব দাবা থেকে দূরে। একমাত্র আমিই খেলছি।'
দাবা ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক আরবিটার হারুনুর রশিদ মাত্র একজন গ্র্যান্ডমাস্টারের জাতীয় দাবার সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে বলেন, 'জিয়া গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার অধিকাংশ সময়ই দুই এবং পরবর্তী সময়ে ততোধিক জিএম খেলেছে। ২০১০ সালে শুধু রিফাত বিন সাত্তার খেলেছিল। মাঝের ১৪ বছর একজন গ্র্যান্ডমাস্টার জাতীয় দাবা খেলেছে এমন আর ঘটেনি।'
দাবার সর্বোচ্চ টাইটেল গ্র্যান্ডমাস্টার। এক সময় বাংলাদেশে জাতীয় দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মও হয়েছে। এখন গ্র্যান্ডমাস্টাররা নিয়মিত না খেলায় জিএম নর্ম হওয়ার সুযোগ সেই অর্থে নেই। এবার মাত্র একজন গ্র্যান্ডমাস্টার খেললেও তরুণদেরই জাতীয় দাবায় ভালো করার সম্ভাবনা বেশি দেখছেন নিয়াজ মোর্শেদ, 'বাস্তবিক অর্থে এখন গ্র্যান্ডমাস্টারদের চেয়ে নীড় ও ফাহাদের রেটিং ভালো। তারাই এখন শীর্ষ পর্যায়ের দাবাড়ু।'
জাতীয় দাবায় পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার সরাসরি খেলার সুযোগ পেতেন। পাঁচ জনের কেউ না খেললে তখন বাছাই থেকে ৯ জনের পরিবর্তে দশ বা ১১ জন সুযোগ পান। এবার শুধু একজন গ্র্যান্ডমাস্টার খেলায় গত আসরের চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড় ও রানার আপ আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন। জাতীয় দাবা বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন প্রয়াত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের পুত্র তাহসিন তাজওয়ার জিয়া, রানার আপ আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল। এ ছাড়া ফিদে মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ তৃতীয়, আন্তর্জাতিক মাস্টার মোঃ মিনহাজ উদ্দিন চতুর্থ, ফিদে মাস্টার সুব্রত বিশ্বাস পঞ্চম, ফিদে মাস্টার মোঃ শরীফ হোসেন ষষ্ঠ, ফিদে মাস্টার মোহাম্মদ জাভেদ সপ্তম, মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ অষ্টম, ক্যান্ডিডেট মাস্টার মোঃ আবু হানিফ নবম, ফিদে মাস্টার খন্দকার আমিনুল ইসলাম দশম এবং অনত চৌধুরী একাদশ স্থান পেয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। জাতীয় দাবায় নিয়মিত মুখ ফিদে মাস্টার আমিনুল অনেক দিন পর এবার স্থান হারিয়েছেন।
জাতীয় দাবার বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়ন নোশিন আঞ্জুম। তিনি গতকাল শেষ রাউন্ডে জিতলে জাতীয় দাবায় প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পেতেন। জাতীয় দাবায় নারী দাবাড়ু সর্বশেষ অংশগ্রহণ ২০১৭ সালে। মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার শামীমা আক্তার লিজার পর আর কেউ জাতীয় দাবায় নিজেদের নাম লেখাতে পারেননি। টানা তিন বার জাতীয় দাবা মিস হওয়ায় খানিকটা আফসোস নোশিনের, 'এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো শেষ রাউন্ডে আমার জাতীয় দাবা মিস হলো। দুভার্গ্যক্রমে তিন বারই শেষ রাউন্ডে শক্তিশালী দাবাড়ুর সঙ্গে পড়েছেন। জাতীয় দাবায় খেলতে পারলে নারী দাবাড়ুদের আরো অভিজ্ঞতা বাড়বে। জাতীয় দাবা বাছাইয়ে এবার আমি, রাণী আন্টি, ওয়াদিফা ও খুশবু অংশগ্রহণ করেছি। নারী দাবাড়ুদের মান বাড়াতে আরো বেশি খেলা প্রয়োজন।’
মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার রাণী হামিদ এক সময় জাতীয় উন্মুক্ত দাবায় খেলেছেন। এমনকি তিনি দাবা অলিম্পিয়াডেও উন্মুক্ত বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তনিমা, নিপা এবং লিজার পর আর কোনো নারী দাবাড়ু জাতীয় দাবায় আসতে পারেননি।
এজেড/এইচজেএস