হতশ্রী মোহামেডানকে বাস্তবতা দেখাল মুশফিকের আবাহনী

দুই দলের লড়াইয়ের সেই ঝাঁঝ আর নেই! ঐতিহ্যও মলিন হয়েছে। আবাহনী লিমিটেডের সঙ্গে বিবর্ণ মোহামেডানের স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠের লড়াইটা এখন আর জমে না আগের মতো। শেষ কয়েক বছর দুই দলের মুখোমুখি লড়াই একেবারে নিরুত্তাপ, রাজত্ব আকাশী-নীলদের দখলে। তবে চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে এবার খানিক ব্যাতিক্রম মোহামেডানকে দেখা গেছে। ডিপিএলে লিগ পর্বের ম্যাচে বাজিমাত করে সাদাকালোরা।
সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে প্রায় ৫ বছর পর আবাহনীর বিপক্ষে জয় পায় মোহামেডান। সে ম্যাচে টাইগার অলরাউন্ডার সাকিবের স্টাম্প ভাঙা আর উপড়ে ফেলা ঐতিহ্যের লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে অনেকেই ভেবেছিলেন। তবে সুপার লিগ পর্বে হতশ্রী মোহামেডান, বিবর্ণ পারফরম্যান্স। সাকিববিহীন মোহামেডানকে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বাস্তবতা বোঝাল মুশফিকুর রহিমের আবাহনী লিমিটেড।
এ ম্যাচে আগে ব্যাট করে অধিনায়ক মুশফিকের ফিফটির ওপর ভর করে ১৯৩ রানের পুঁজি পায় আবাহনী। ১৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে মোহামেডানের ব্যাটিং লাইনআপ। ১৩৩ রানে থামে তারা। সাদাকালোদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৩ রানের ইনিংস আসে আবু হাওয়দার রনির ব্যাট থেকে। এটি তার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৮ রান। আবাহনীয় হয়ে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
টার্গেট টপকাতে নামা মোহামেডানের ব্যাটসম্যানদের শুরু থেকেই সুবিধা করতে দেননি আবাহনীর বোলাররা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান অভিষেক মিত্র ও শামসুর রহমানকে। সুবিধা করতে পারেননি আব্দুল মাজিদও। ১০ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি।
ইরফান শুক্কুর হাত খুলে খেললেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৪টি চার ও ১টি ছয়ের মারে ১৮ বল খেলে ২৭ রান করে আউট হন তিনি। তাকে ফেরান স্পিনার মোসাদ্দেক। একই ওভারে মোসাদ্দেকের দ্বিতীয় শিকার নাদিফ চৌধুরী। পরের ওভারেই শূন্য হাতে ফেরেন অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরী। এতে দলের হার একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়।
৭ ওভার শেষে ৪২ রানে ৬ উইকেট হারানো মোহামেডানের হারের ব্যবধানে কমে আবু হায়দার রনি ও মাহমুদুল হাসান লিমনের ব্যাটে। সপ্তম উইকেটে ৭৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন দুজন। লিমন ৩৬ বলে ৩৭ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। লিমনের আউটের পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন আবু হায়দার। তার ৪২ বলে ৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ১৩৩ রানে থামে মোহামেডানের ইনিংস। ৬০ রানের জয় পায় আবাহনী।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে আবাহনী। এই ম্যাচ দিয়ে চোট কাটিয়ে ডিপিএলে প্রথমবারের মতো মাঠে নামেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস। আবাহনীর হয়ে ওপেন করতে নেমে রুয়েল মিয়ার বলে আউট হওয়ার আগে ৪ রান করেন তিনি। আরেক ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে টেনে তোলেন।
শান্ত ঝড়ো শুরুর আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি, ১৭ বলে ২৭ রান করে আউট হন। আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে মুনিমকে। ৪৩ রান করে রুয়েল মিয়ার বলে বোল্ড হন এবারের ডিপিএল দিয়ে আলোচনায় আসা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ওপেনিংয়ে জায়গা হারিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামা নাইম শেখ আউট হন ২৪ রান করে। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি বাড়ানোর কাজ করে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
শেষদিকে আফিফ হোসেন ১০ রান করে আউট হওয়ার পর চলতি ডিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। তার অপরাজিত ৫৭ রানের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৯৩ রানের সংগ্রহ পায় আবাহনী। ৩২ বলের ইনিংসটি মুশফিক সাজান ৮টি চার ও ১টি ছয়ের মারে। মোহামেডানের হয়ে রুয়েল মিয়া ও আসিফ হাসান ৩টি করে উইকেট নেন।
টিআইএস