বারবারই নেইমারকে নিয়ে প্রশ্ন, যে জবাব দিলেন আনচেলত্তি

পূর্ণ মেয়াদে ব্রাজিলের প্রথম কোনো বিদেশি কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কার্লো আনচেলত্তি বারবারই একটি কমন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। আর তা হচ্ছে– নেইমার কবে জাতীয় দলে ফিরবেন! কিছুদিন পরপর একই প্রশ্নের সামনে পড়ে কি বিরক্ত আনচেলত্তি? এবার এমন প্রশ্ন করা হয় সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ টেকটিশিয়ানকে। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন, কারণ আনচেলত্তির মতে– নেইমার ব্রাজিলের কিংবদন্তি!
সাম্প্রতিক সময়ে যত বারই ব্রাজিলের স্কোয়াড ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসে, প্রতিবারই চোটে পড়েন নেইমার। ফলে দলটির সর্বকালের সর্বোচ্চ এই গোলদাতার জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হলেও, সেটি অন্ধকারে মেলাতে সময় লাগে না। তাই প্রতিবারই আনচেলত্তি জানিয়ে আসছেন দলে ফিরতে ‘শতভাগ ফিটনেস’ লাগবে। সম্প্রতি আনচেলত্তির কাছে জানতে চাওয়া নেইমারকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রশ্নে তিনি বিরক্ত কি না। জবাবে ব্রাজিল কোচ বলেন, ‘না, সমস্যা নেই। (মানুষ) নেইমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা স্বাভাবিক। কারণ তিনি ব্রাজিলের কিংবদন্তি।’
আনচেলত্তি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকেই নেইমারের শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ), কোচ এবং টেকনিক্যাল স্টাফ প্রত্যেকেই চায় নেইমার যেন নিজের সেরা অবস্থায় জাতীয় দলে ফেরেন। সত্যি বলতে বর্তমান ফুটবল অনেক কিছু চায়। প্রতিভাই কেবল যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি শারিরীক অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি নেইমার তার সেরা ছন্দ নিয়ে ফিরবে।’

৩৩ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান এই তারকা ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় দলের ম্যাচে অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (এসিএল) ইনজুরিতে পড়েছিলেন। যা কাটিয়ে মাঠে ফিরতে তার সময় লেগে যায় এক বছর। তবে জাতীয় দলের জার্সি আর গায়ে তোলা হয়নি। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে চোটপ্রবণ অধ্যায় শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে যোগ দেন নেইমার। যেখানে একের পর এক চোট তো আছে–ই, পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মেজাজ হারিয়ে রেফারি কিংবা সাংবাদিকদের সঙ্গে বিবাদে জড়ানো মতো বিতর্কও বাড়িয়েছেন।
গত রোববার ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায় সান্তোস। সেদিন ৮৫ মিনিটে সান্তোস কোচ বদলি হিসেবে উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টি মানতে পারেননি নেইমার। কোচ হুয়ান পাবলো’র প্রতি এমন প্রতিক্রিয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়েন এই তারকা। এ সময় অবশ্য তার প্রশংসা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন সান্তোসের নির্বাহী পরিচালক আলেক্সান্দ্রে মাতোস, ‘প্রতিভাবানদের ভুল ভাবা হয়, এটা মানব ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য। কারণ তারা (তারকা ফুটবলার) সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকে, যেকোনো কিছু তারা ভিন্নভাবে করে, অন্যদের সঙ্গে পার্থক্য থাকে…তারা চ্যালেঞ্জের মুখে অতৃপ্ত থাকে। যাতে আরও গোল ও ক্ষুধা মেটাতে পারে।’
‘তার লিগ্যাসি রেখে যায়, ইতিহাস তৈরি করে…কিন্তু তারাও তো মানুষ। তারাও সঠিক-ভুল করতে পারে, হাসে-কাঁদে, অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়, তাদেরও হৃদয় আছে, শ্বাস নেয়, আমাদের মতো করেই জীবন যাপন করে। তুমিও (নেইমার) সেরকমই প্রতিভা, তবে যারা তোমাকে চেনে– তারা জানে তুমি কেমন মানুষ, বাবা-বন্ধু ও আশপাশের সবাইকে নিয়ে কতটা ভাবো। তারা তোমাকে হারাতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। মুষড়ে দিতে চাইলেও তুমি উঠে দাঁড়াও, হয়ে ওঠো নিজের চেয়ে আরও বড়। বিশ্বের বিলিয়ন মানুষ তোমার মতো হতে চায়, তুমি এসবই প্রাপ্য। কঠিন সময় মানুষকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।’
প্রসঙ্গত, ব্রাজিল জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭৯) সান্তোসের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তার গোল ৩টি। অবশ্য বেশিরভাগ সময়েই চোট কাটিয়ে ছন্দে ফেরার চ্যালেঞ্জ সামলেছেন বার্সেলোনা ও পিএসজির সাবেক এই ফরোয়ার্ড। এদিকে, ব্রাজিলের শীর্ষ লিগে অবনমন ঠেকাতে লড়ছে সান্তোস।
এএইচএস