মেলবোর্নে বোলারদের উৎসব, ‘গিরিখাতে’ ২০ ব্যাটার

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) রীতিমতো উৎসবে মেতেছে বোলাররা। চলমান অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্ট মাঠে গড়াতেই প্রথম দিনে পতন হয়েছে ২০ উইকেট। প্রতিপক্ষ পেসারদের গতিতে দিশেহারা ব্যাটাররা যেন একের পর এক গিরিখাতে পড়েছেন। বোলারদের এই দ্বিমুখী লড়াইয়ের মাঝেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে অবস্থানে রয়েছে ইতোমধ্যে সিরিজ নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষে তাদের লিড ৪৬ রান।
মেলবোর্নের নাটকীয়তা এখানেই শেষ নয়, দুই দলই যখন প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে তখনও দিনের আরও কিছু সময় বাকি। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ন্যূনতম ১ ওভার ব্যাট করতে হবে। তখন স্বাগতিকরা নাইটওয়াচম্যান হিসেবে এমন একজনকে ক্রিজে পাঠায়, যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কখনোই ওপেনিংয়ে ব্যাট করেননি। পেসার স্কট বোল্যান্ড সেই ওভারে বিপদে পড়তে পড়তেও বেঁচে গেছেন। যদিও গাস অ্যাটকিনসনের বলে কয়েকবারই আউটের সম্ভাবনা জেগেছিল। শেষমেষ ৪ রানে অপরাজিত থেকে ক্রিজ ছাড়েন বোল্যান্ড।
তার সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন ট্রাভিস হেড। তবে তিনি ছিলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। যেন বোলারদের রাজত্বের বিপরীতে এক বোলারকে দিয়েই অজিরা শেষ ওভারটি মোকাবিলা করল। মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে জশ টাংয়ের ফাইফারে অস্ট্রেলিয়া ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে আরও বড় বিপর্যয়ে পড়ে ইংলিশরা। মাইকেল নেসার ও বোল্যান্ডের দাপটে তারা ১১০ রানে থামে। ফলে ৪২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দিন শেষে সেটি দাঁড়াল ৪৬–এ।

এর আগে টস জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। ২০০০ সালের পর এ নিয়ে তৃতীয়বার অ্যাশেজে ন্যূনতম ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। এর আগে ২০১০ সালে একই ভেন্যু এমসিজিতে ৪২.৫ ওভারে স্রেফ ৯৮ রানে তারা অলআউট হয়েছিল। চলমান সিরিজের পার্থ টেস্টে ৪৫.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। এবার ১৫২ রান করার পথে ৪৫.২ ওভার খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজে ২০০০ সালের পর চতুর্থ সর্বনিম্ন রানে অলআউট হলো স্টিভ স্মিথের দল।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিক ব্যাটারদের ওপর ইংলিশ পেসাররা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন। দলীয় ২৭ রানে ট্রাভিস হেডকে (১২) ফেরানোর পর জ্যাক ওয়েদারল্ড (১০) এবং মার্নাস লাবুশেন (৬) আউট হয়েছেন স্রেফ ৭ রানের ব্যবধানে। শুরুটা করেছিলেন গাস অ্যাটকিনসন, এরপর একের পর এক উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন জশ টাং। প্যাট কামিন্সের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব পাওয়া স্মিথও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৯ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটারকে সুইং ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন টাং।

মিডল অর্ডারে নামা উসমান খাজার ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। মধ্যাহ্ন বিরতির পর নেমে তিনিও দ্রুত ফেরেন। এ নিয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুম শুরুর পর থেকে ডানহাতি পেসারদের বলে ২০তম বার আউট হলেন খাজা। যদিও ক্রিজ ছাড়ার আগে তিনি টেস্টে আট হাজার রানের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন। ২০ রানে ফিরেছেন সিরিজের অন্যতম সেরা ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি। অস্ট্রেলিয়ার পুঁজিটা কিছুটা বেড়েছে সপ্তম উইকেটে ক্যামেরন গ্রিন ও মাইকেল নেসারের গড়া ৪৫ রানের জুটিতে। তবে ১৭ রান করে দুর্ভাগ্যের রানআউটে কাঁটা পড়েন গ্রিন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে নেসারের ব্যাটে। ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ইংলিশদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছেন জশ টাং। টেস্টে এটি তার তৃতীয় ফাইফার। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম মেলবোর্ন টেস্টে কোনো ইংলিশ বোলার এই কীর্তি গড়লেন। এ ছাড়া অ্যাটকিনসন ২ এবং ব্রাইডন কার্স ও স্টোকস একটি করে শিকার ধরেন। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডও প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে। ১৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর তাদের পঞ্চম উইকেট পড়ে ৬৬ রানে। টপ অর্ডারে নামা জ্যাক ক্রাউলি (৫), বেন ডাকেট (২), জ্যাকব বেথেল (১) ও জো রুটের (০) কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। হ্যারি ব্রুক বিপর্যয় কাটানোর লড়াই শুরু করলেও তিনি থেমেছেন ৪১ রানে।

এরপর দলীয় খাতায় আর মাত্র ৪৪ রান যোগ করতেই বাকি ৫ উইকেট হারায় ইংলিশরা। অ্যাটকিনসন ২৮ এবং স্টোকসের ১৬ রান ছাড়া দুই অঙ্কের দেখা পাননি আর কেউই। এর মধ্য দিয়ে ২০০০ সালের পর অ্যাশেজে তৃতীয় সর্বনিম্ন ১১০ রানে অলআউট ইংল্যান্ড। ২০২১ সালে একই ভেন্যুতে ৬৮ এবং ২০০২ সালে গ্যাবায় তারা ৭৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। বিপরীতে ইংলিশদের পক্ষে মাইকেল নেসার ৪, স্কট বোল্যান্ড ৩ ও স্টার্ক ২ উইকেট নিয়েছেন।
চলমান অ্যাশেজের পার্থ টেস্টে ১০০ বছরে প্রথমবার একদিনে ১৯ উইকেট পড়েছিল। আজ সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এর আগে ১৮৯৪-৯৫ অ্যাশেজে সর্বশেষ ২০ উইকেট পতনের নজির দেখা গিয়েছিল। ১৩০ বছর পর একই কীর্তি দেখা গেল পুনরায়।
এএইচএস