কর্মকর্তাদের কারণে আম্পায়াররা গালি খায়, ‘আমি ভয় পাই না’

ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটের আম্পায়ারিং প্রশ্নবিদ্ধ অনেক দিন ধরেই। বলা হয়ে থাকে আম্পায়াররা নাকি অন্যের চিত্রনাট্যে মাঠে শুধু অভিনয় করে থাকেন! বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাঠে নামেন তারা। এ নিয়ে ক্রিকেটারদের মনে অনেক দিন ধরেই আছে ক্ষোভ।
তারই বহিঃপ্রকাশটাই নাকি সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ঘটিয়েছেন সাকিব আল হাসান! এরপর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে দৃষ্টিকটুভাবে প্রতিবাদ জানালেন আরেক তারকা ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এই দুই ঘটনার সঙ্গে গল্প এগিয়ে নিয়ে একদিন আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের আম্পায়ার মুনিরুজ্জামান টিংকু জানালেন ‘প্রতিবাদ’, ইতি টানলেন আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারের।
যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ খেলা পরিচালনায় কোণঠাসা আম্পায়াররা, সেখানেই কি না দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিদায় বলছেন এক আম্পায়ার। ক্রিকেটারদের আচরণে মর্মাহত হয়েই আম্পায়ারিং থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুনিরুজ্জামান। বিসিবির আম্পায়ার ও সাবেক ক্রিকেটার বিদায়ের আগে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন দুই সিনিয়র ক্রিকেটারকেও।
তবে শুধু এই সাকিব-রিয়াদ প্রসঙ্গই বিদায়ের একমাত্র কারণ নয়, সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন আরও কিছুদিন আগে থেকেই। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তেমনটাই জানালেন মুনিরুজ্জামান টিংকু। বললেন, ‘সম্মান একটা বড় বিষয়, কাজের পরিবেশটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটো কারণেই আমি আম্পায়ারিং ছাড়ছি। আর খারাপ লাগাটা তো শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। নিজের বিবেকের কাছে বারবার প্রশ্ন করেছি, ছাড়ব কি না। পরে আমি চিন্তা করলাম, টুর্নামেন্ট চলাকালীন যদি ছাড়ি তাহলে ব্যাপারটা নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হবে। যার কারণে আমি চাইনি!’
টুর্নামেন্ট শেষ হতেই আম্পায়ারিং থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন মুনিরুজ্জামান। যদিও তিনি বিসিবির বেতনভুক্ত আম্পায়ার নন। আবার তার সঙ্গে কোনো ক্রিকেটার অপ্রীতিকর কোনো ঘটনাও ঘটাননি। চলতি লিগে ১৩ ম্যাচে আম্পায়ারিং করা সাবেক এই ক্রিকেটার তারপরও কেন বিদায় বললেন?
তবে বিবেকের জায়গা থেকে পরিষ্কার থাকতে গিয়ে শুধু ক্রিকেটারদেরই নয়, আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং নিয়েও সরব থাকলেন মুনিরুজ্জামান, ‘প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিকেটে বায়াসড আম্পায়ারিং...এটা তো আপনারা সবাই জানেন। সেটার একটা প্রভাব তো অবশ্যই আছে। সবাই যে ভালো না, আবার সবাই খারাপ না, এটা তো ঠিক। দুইটা মিলিয়েই এই জগৎ।’
ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটে বলা হয় আম্পায়ারদের ‘নাচের পুতুল’ বানিয়ে রেখেছেন কিছু ক্লাব কর্মকর্তা। তাদের চিত্রনাট্যে নাকি মাঠে শুধু অভিনয় করে থাকেন কিছু আম্পায়ার। এমন সব ব্যাপার যখন বারবার প্রমাণিত তখন মুনিরুজ্জামানও স্বীকার করলেন তেমনটা হয়, ‘খেলা পরিচালনার আগে আমাকে কখনো কেউ কিছু বলে দেয়নি। তবে আপনি যেটা বললেন, তেমনটা হয়। আমরা যখন খেলতাম তখনো কিন্তু এসব ছিল। শুধু একটা দুইটা ম্যাচ। এখন যেটা হয়েছে, একটু বেড়ে গেছে। যেটা আরেকটু কম হতে পারে।’
সাকিব-রিয়াদের মতো ক্রিকেটারদের এভাবে মাঠে হুটহাট রেগে যাওয়া, তর্কে জড়ানো- এসবের পেছনে কিছু ক্লাব কর্মকর্তার দায় আছে বলেও মনে করেন মুনিরুজ্জামান। বলছিলেন, ‘কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড প্রভাব তো ফেলেই। ওই সব কারণেই কিন্তু আম্পায়ারদের গালি দেওয়া হয়। অনাস্থাটা সৃষ্টি হয়েছে ওনাদের কারণে। এটা কিন্তু আজকের না, আগের। আজকে যা হচ্ছে আগামীতে আরও খারাপ হতে পারে। এটাই আসলে আমার কনসার্ন ছিল।’
সেই দুশ্চিন্তা থেকেই সরে দাঁড়ালেন তিনি। বিসিবির আম্পায়ার্স বিভাগকে জানিয়েছেন নিজের সিদ্ধান্তের কথা। যদিও তিনি বিসিবির বেতনভুক্ত নন, তাই ঠিক অফিশিয়ালি পদত্যাগপত্র দিতে হবে কি হবে না এটা জানেন না। তবে এটুকু বুঝতে পারছেন মঙ্গলবার রাতে তার একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন।
খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের কানেও নাকি গেছে এই খবর। রাজশাহী ও বরিশালের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান বলছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রতিবাদ... হ্যাঁ বলতে পারেন যে এটা এক ধরনের প্রতিবাদ। কিন্তু আমার নিজের আত্মমর্যাদাবোধ রক্ষার একটা চেষ্টাও বলতে পারেন। প্রতিবাদের একটা ফল আমি ইতোমধ্যেই পেয়েছি। ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো আইসিসি প্যানেলভুক্ত আম্পায়ারদের সঙ্গে বসেছেন। কিছুটা কাজ হয়েছে। প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচেও চেঞ্জ আনার কথা বলা হচ্ছে।’
তবে সাকিব-রিয়াদদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ করা মুনিরুজ্জামানকে নিয়েও কিছু কথা ভাসছে বাতাসে। বেক্সিমকো ফার্মার মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি। যেটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোদ বিসিবি প্রধান। এই পদত্যাগের আড়ালে ঘটনা অন্যদিকে মোড় ঘুরাতে চাইছেন না তো মুনিরুজ্জামান টিংকু?
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর দিকে আঙুল তুলে ‘গুডবাই আম্পায়ারিং’ বলে আপাতত অবশ্য প্রমাণ দিলেন ভয় পেয়ে সরে যাচ্ছেন না তিনি!
এটি/এমএইচ
