সেই মারুফের কৌশলে ফের হারল বসুন্ধরা

ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে বসুন্ধরা কিংসের হার খুবই কম। তিনবারের ফুটবল লিগ মিলিয়ে (পরিত্যক্তসহ) কিংসের হার ছিল মাত্র তিনটি। আজ (রোববার) চতুর্থ হারের তেতো স্বাদ পেল কিংস। এই চার হারের মধ্যে দুই বারই চট্টগ্রাম আবাহনীর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম আবাহনী বলতে মূলত দেশের সেরা কোচ মারুফুল হকের কাছেই পরাজয় কিংসের। আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ২-১ গোলে বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালে নীলফামারীতে কিংস ৩ গোলে এগিয়ে থেকেও চার গোলে হেরেছিল এই মারুফুলের দলের কাছেই। প্রিমিয়ার লিগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এটিই প্রথম হার বসুন্ধরা কিংসের।
এই হারে কিংসের শিরোপা জেতায় খানিকটা বিলম্ব হলো। ১৮ ম্যাচে কিংসের পয়েন্ট ৪৯। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ জামালের ১৬ ম্যাচে পয়েন্ট ৩৫। কিংসের চেয়ে তাদের ব্যবধান ১৪ বেশি হলেও দুই ম্যাচ কম খেলেছে। দুই ম্যাচ জিতলে এবং কিংসকে হারাতে পারলে আবার শিরোপা রেসে আসার মৃদু সম্ভাবনা রয়েছে জামালের। এরপরও কিংস ঢাকা আবাহনী ও জামালের চেয়ে পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে।
উড়তে থাকা বসুন্ধরা কিংসকে শেষ পর্যন্ত থামালো চট্টগ্রাম আবাহনী। থামালেন চিনেদু ম্যাথিউ। তার অসাধারণ দুই গোলে বসুন্ধরা কিংসকে ২-১ গোলে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। গোলপোস্ট বাধা না হলে হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন চিনেদু ম্যাথিউ। এবারের মৌসুমে প্রথম পরাজয়ের মুখ দেখলো বসুন্ধরা। সব মিলে টানা ২২ ম্যাচ পর হারলো বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা শেষবার হেরেছিল এই চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছেই। গত বছর ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ৪-৩ গোলে হেরেছিল বসুন্ধরা কিংস।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ২ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বসুন্ধরা। কিন্তু ইব্রাহিমের বা পায়ের শট ফিরিয়ে দেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। ১৩ মিনিটে ক্ষিপ্ত গতিতে চট্টগ্রাম আবাহনীর রক্ষণ সীমানায় ঢুকে গিয়েছিলেন রবসন। জোরালো শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রস্তুত ছিলেন নাঈম। ৩১ মিনিটে গোল করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ। ডান পায়ের জোরালো শটে বসুন্ধরার জাল কাপিয়েছেন তিনি। তবে এক মিনিট পরই গোল পরিশোধের সুযোগ হাতছাড়া হয় বসুন্ধরার। চট্টগ্রাম আবাহনীর ১-০ গোলের লিডে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
তবে বিরতি থেকে ফিরেই ম্যাচে সমতা আনার সুযোগ হাতছাড়া করে বসুন্ধরা কিংস। ৪৯ মিনিটে পেনাল্টি পায় বসুন্ধরা। কিন্তু স্পট কিক থেকে গোল করতে পারেননি বসুন্ধরার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল অস্কার বেসেরা। তার শট ক্রসবারে লেগে উপর দিয়ে চলে যায়। ৫৫ মিনিটে মনে হচ্ছিল গোল পেয়েই যাচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী। মাঝ মাঠ থেকে আচমকাই শট নেন নিক্সন। বল যখন জালে ঢুকেই যাচ্ছিল, তখন গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো সে যাত্রায় দলকে রক্ষা করেন।
৫৭ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর নিক্সনকে বাজেভাবে ফেলে দেন বসুন্ধরার খালেদ শাফি। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে রবিউলের জায়গায় এলিটা কিংসলেকে মাঠে নামায় বসুন্ধরা। ৭৯ মিনিটে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় চট্টগ্রাম আবাহনী। বাধা হয়ে দাড়ায় ক্রসবার। চিনেদু ম্যাথিউ দুর্দান্তভাবে বল নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন বসুন্ধরার রক্ষণ দূর্গে। কিন্তু যে শটটা তিনি নিলেন তা ক্রসবারে লেগ ফিরে আসে। ম্যাচে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয় মারুফের দলের। ৮৩ মিনিটে সুযোগ নষ্ট হয় বসুন্ধরার। কিংসলের ক্রস থেকে হেড নিয়েছিলেন রাউল অস্কার। কিন্তু বল জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি।
তবে ৮৮ মিনিটে অবশেষে ম্যাচে সমতা আনে বসুন্ধরা কিংস। আবারও নিজের ক্লাস দেখিয়েছেন বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন। দারুণ শটে বল জালে জড়ান তিনি। তবে বসুন্ধরার এই আনন্দ এক মিনিটও টেকেনি। এক মিনিট পরই বিশ্বমানের এক গোল করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথিউ। মাঝ মাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে বসুন্ধরার ডি বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন চিনেদু ম্যাথিউ। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অন্যতম সেরা গোল এটি। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে অস্কারের দলকে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে মারুফের দল।
প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরার যতো হার
মৌসুম প্রতিপক্ষ ভেন্যু
২০১৮-১৯ শেখ রাসেল সিলেট
২০১৯-২০ চট্টগ্রাম আবাহনী নীলফামারী
২০১৯-২০ মোহামেডান কুমিল্লা
২০২০-২১ চট্টগ্রাম আবাহনী ঢাকা
এজেড/এটি/টিআইএস