রিয়ালকে আরও শূন্যতা দিয়ে ইউনাইটেডে যাচ্ছেন ভারান

কোচ জিনেদিন জিদান দল ছেড়েছেন গেল মৌসুমের শেষে। সে শূন্যতা নাহয় রিয়াল মাদ্রিদ পুষিয়ে নিয়েছে আরেক ঋদ্ধ কোচ কার্লো অ্যানচেলত্তিকে দিয়ে। এরপর খানিকটা আক্ষেপ নিয়েই ক্লাব ছেড়েছেন দলটির দীর্ঘদিনের নেতা সার্জিও রামোস। এবার ক্লাবটির শূন্যতাকে আরও বাড়িয়ে দল ছাড়ছেন দলের আরেক পরীক্ষিত সেনানী রাফায়েল ভারানও। ইংলিশ ফুটবলের স্বাদ নিতে তিনি পাড়ি জমাচ্ছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।
সব মিলিয়ে সময়টা ভালো কাটছে না রিয়াল মাদ্রিদের। সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের ভাবমূর্তি কিছুটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল সেই ইউরোপিয়ান সুপার লিগের ঘোষণা দিয়েও ব্যর্থ হবার পরই। এরপর এল কনফিদেন্সিয়ালের ফাঁস করা বেশ কিছু ফোনকল পরিস্থিতিটা আরও কঠিন করে তুলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতির জন্য, যেখানে ক্লাব কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেস, ইকার ক্যাসিয়াস, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের নিয়ে বেফাঁস কথা বলতে তাকে শোনা গেছে।
এর আগেই অবশ্য রিয়ালে বাজছিল বিষাদমাখা বিউগল। জিনেদিন জিদান দল ছেড়ে গিয়েছিলেন, অধিনায়ক রামোসও ফ্রি ট্রান্সফারে পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইঁতে। সে বিচ্ছেদের সুরটা এবার আরও জোরালো হচ্ছে রিয়ালের শেষ চার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারানের দল ছাড়ার খবরে।
রামোসের মতো দীর্ঘদিনের এক ভরসা নেই দলে, এমন পরিস্থিতিতে রিয়াল রক্ষণের নেতা হয়ে ওঠার কথা ছিল ভারানের। কিন্তু একই সময়ে ‘দীর্ঘদিনের ইচ্ছা’ বাস্তবায়নের সুযোগও এসে ধরা দেয় ফরাসি এই ডিফেন্ডারের হাতে, তাকে দলে পেতে মরিয়া হয়েই মাঠে নামে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। শেষমেশ ভারান সাড়া দিয়েছেন শেষটাতেই।
ভারানের চলে যাওয়ার ইচ্ছাটাও বেশ যুক্তিযুক্ত। সান্তিয়াগো বের্নাবিউতে এক কোপা দেল রে ছাড়া বাকি সবকিছুই জিতেছেন। চারটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পাশে আছে দুটো লিগ শিরোপা। এ সময়ে আবার জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপও। এমন ‘প্রায়’ সর্বজয়ী ঠিকুজি বানিয়ে ফেলার পর ‘নতুন চ্যালেঞ্জের’ পানে ছোটাটা খুব একটা অমূলক কিছুও নয় বটে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি, তবে ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যমের শীর্ষ কিছু সূত্র জানাচ্ছে এমন কিছুই। ইউরোপীয় ফুটবলের দলবদল বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র ফ্যাব্রিজিও রোমানোও জানাচ্ছেন, চুক্তিটা শতভাগ নিশ্চিত এখন। ইউনাইটেড তাকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে উপস্থাপন করবে আসছে সপ্তাহে। করোনা মহামারির কারণে ইংল্যান্ডে চলমান বিধিনিষেধই পিছিয়ে দিয়েছে প্রক্রিয়াটা, ভারান-পক্ষ যদিও কাজ করছে বিষয়টা নিয়ে, সেটা ঠিকঠাক শেষ করতে পারলে হয়তো চলতি সপ্তাহেই আসবে চূড়ান্ত ঘোষণা।
রিয়ালের সঙ্গে চুক্তির আরও এক বছর বাকি ছিল ভারানের। তাই তাকে পেতে দলবদল অর্থ গুণতে হবে ইউনাইটেডকে। বিভিন্ন সূত্র মারফতে খবর মিলছে, এ সংখ্যাটা সাড়ে চারশ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে কিছু শর্ত পূরণ করলে ভবিষ্যতে আরও পঞ্চাশ কোটির কিছু বেশি টাকা পেতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ।
উল্লেখ্য, ভারানের সঙ্গে ইউনাইটেডের যোগটা হতে পারত আরও দশ বছর আগেই। ২০১১ সালে লেঁস থেকে তাকে প্রায় দলে ভিড়িয়েই ফেলেছিল রেড ডেভিলরা। শেষ মুহূর্তে জিদানের কথাতেই রিয়ালে যোগ দেন তিনি। এরপর মাদ্রিদের হয়ে যা করেছেন এক দশকে, তাতে তার আক্ষেপ থাকার কোনো কারণই নেই।
দশ বছর পর সেই ইউনাইটেডই হতে যাচ্ছে তার নতুন ঠিকানা, যদি না শেষ মুহূর্তে অভাবনীয় কোনো পরিবর্তন আসে দৃশ্যপটে। ‘নতুন চ্যালেঞ্জে’ ভারান সফল হন কিনা, সেটাই তখন হয়ে থাকবে দেখার বিষয়।
এনউই