সানিয়া না আমি সেরা, সেটা মানুষ বলবে

সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশে নারী ব্যাডমিন্টনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন হায়দ্রাবাদের পিভি সিন্ধু। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে জিতেছিলেন রৌপ্য। এবার টোকিও অলিম্পিকে পেলেন ব্রোঞ্জ। টোকিওর উদ্দেশ্যে ভারত ছাড়ার আগে সিন্ধু ঢাকা পোস্টের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার আরাফাত জোবায়েরের সঙ্গে ব্যাডমিন্টনের নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ঢাকা পোস্ট : অলিম্পিকের প্রস্তুতি এবার কেমন ছিল?
সিন্ধু : ২০২০ সালেই অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ছিলাম। যেহেতু করোনার কারণে খেলা এক বছর পিছিয়েছে। প্রস্তুতিতে আরো সময় পেয়েছি। টোকিও অলিম্পিকে পদকে চোখ আমার।
ঢাকা পোস্ট : আপনার বাবা ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। আপনার ব্যাডমিন্টনে পা রাখলেন কিভাবে?
সিন্ধু : বাবা খেলোয়াড় ছিলেন সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা পছন্দ করতাম। আমার ব্যাডমিন্টন ভালো লাগতো। বাবাও উৎসাহ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। সেই থেকে পথ চলা।
ঢাকা পোস্ট : আপনার বাবা আপনার ম্যানেজার। আপনার বাবা আপনাকে অনেক সময় দেন। আজকের অবস্থানে আসার পিছনে আপনার বাবার অবদান কতোটুকু?
সিন্ধু : বলতে পারেন প্রায় পুরোটাই অবদান। বাবা শুধু ম্যানেজারই নন, আমার পথ প্রদর্শকও। বাবা ভলিবল খেলোয়াড় হলেও ব্যাডমিন্টন ভালো বোঝেন। ট্যাকনিক্যাল বিষয়ে অনেক সাহায্য করেন। সংকটময় মুহূর্তে বাবার পরামর্শে আমি সিদ্ধান্ত নেই।
ঢাকা পোস্ট : ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্যাডমিন্টনে অলিম্পিকে পদক পাওয়া অনেক কঠিন। আপনি সেই দুর্গম পথ কিভাবে সুগম করলেন?
সিন্ধু : অবশ্যই অলিম্পিকে পদক পাওয়া অনেক কঠিন। বিশেষ করে এই উপমহাদেশের নারীদের অলিম্পিকে সেভাবে পদক খুব কম। আমি মনে করি অলিম্পিকে পদক পেতে হলে প্রথমে স্বপ্ন দেখতে হবে। এরপর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রাথমিক সাফল্য না পেলেও অবিচল থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বোর্ড, পরিবার ও রাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। এখন আমি কোরিয়ান কোচের অধীনে অনুশীলন করি। দিনে ৭-৮ ঘন্টা কাটে আমার শুধু কোর্টে। এরপর অনলাইনেও অনেক কাজ থাকে।
ঢাকা পোস্ট : উপমহাদেশের নারীরা ক্রীড়াঙ্গনে আসতে যেমন বাধার সম্মুখীন হয় আসার পরেও বাঁধাগ্রস্ত হয়। আপনি এ রকম কোনো সমস্যার শিকার হয়েছেন কিনা?
সিন্ধু : আমার বাবা যেহেতু খেলোয়াড় ছিলেন ফলে আমি পারিবারিকভাবে কখনোই কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হইনি পাশাপাশি সামাজিকভাবেও না। এটা ঠিক ভারতবর্ষে নারীদের এখনো অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ভারতবর্ষের নারীরা ক্রীড়াঙ্গনে বেশ দাপটের সাথে উঠে আসছে এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : ব্যাডমিন্টনে ভারতে পারিশ্রমিক কেমন। পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে নারী পুরুষ বৈষম্য আছে?
সিন্ধু : আমি আমারটা বলতে পারি আমি বেশ ভালো আছি। আমাকে স্পন্সর করে প্রতিষ্ঠান। স্পন্সর অর্থ, সাইও (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) আমাকে সাহায্য করে ফলে সবকিছু মিলিয়ে বেশ স্বাচ্ছল্য রয়েছে। ব্যাডমিন্টনে সম্মানীর ক্ষেত্রে আমি কোনো নারী পুরুষ ভেদাভেদ দেখিনি। পারফরম্যান্স অনুযায়ী সম্মানী হয়।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের সাথে কোন পরিচয় বা যোগাযোগ আছে কি?
সিন্ধু : সেভাবে নিয়মিত যোগাযোগ নেই। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বেশ আন্তরিক।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমান ও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত নারী ক্রীড়াবিদ সানিয়া মির্জা। টেনিস তারকা সানিয়া অধিক জনপ্রিয় হলেও অলিম্পিকে পদক নেই যেখানে আপনার আছে। সেরার ক্ষেত্রে কে এগিয়ে?
সিন্ধু : আমি ব্যাডমিন্টনে সে টেনিসে। দুই খেলার সঙ্গে তুলনা সেভাবে করা যায় না। দুইজনই দেশকে দিতে চেয়েছি। সানিয়া না আমি সেরা সেটা ভারতের মানুষ বলবে। এটা নিয়ে আমার কোনে ভাবনা নেই।
ঢাকা পোস্ট : ব্যাডমিন্টনের কোর্টে সেটের পর সেট খেলে চলছেন। জীবনের কোর্টে দ্বিতীয় সেট শুরু করবেন কবে?
সিন্ধু : আমি এখনো ব্যাডমিন্টন নিয়েই ভাবছি। কাউকে ভালো লাগলে হয়তো ভেবে দেখব। এখন পর্যন্ত আমার ভাবনায় শুধু ব্যাডমিন্টন।
এজেড/এটি
