ক্যারিবীয়দের অপেক্ষা বাড়িয়ে জিতল পাকিস্তান

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ৩০২-৯ ডিক্লে. (ফাওয়াদ ১২৪*, বাবর ৭৫; রোচ ৩-৬৮)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ১৫০ (বোনার ৩৭, আফ্রিদি ৬-৫১)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস ১৭৬-৬ ডিক্লে. (ইমরান ৩৭, বাবর ৩৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস ২১৯ (হোল্ডার; আফ্রিদি ৪-৪৩, নুমান ৩-৫২)
ফলাফল: পাকিস্তান ১০৯ রানে জয়ী।
সিরিজ: ১-১ ড্র।
ম্যাচসেরা: শাহিন শাহ আফ্রিদি।
সিরিজসেরা: শাহিন শাহ আফ্রিদি।
২০০৫ সালে হয়নি, ২০১১ সালের সিরিজেও নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গিয়েই শেষমেশ সিরিজটা আর জেতা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে সদ্যসমাপ্ত জ্যামাইকা টেস্টের চারেরও বেশি সেশন বৃষ্টি, ভেজা আউটফিল্ড, আর আলোকস্বল্পতার কারণে ম্যাচটা ড্র আর উইন্ডিজের সিরিজ জয়ের আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল দারুণভাবে।
সে আশায় পানি ঢাললো পাকিস্তানের ‘পজিটিভ অ্যাপ্রোচ’; আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, শাহিন শাহ আফ্রিদির আগুনঝরা বোলিং। উইন্ডিজকে পুরো টেস্টেই আন্ডারডগ বানিয়ে শেষমেশ ম্যাচটা জিতেছে ১০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। এর ফলে ২০০৫ আর ২০১১ এর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পাকিস্তান আরও একটা টেস্ট সিরিজ ড্র করে ফিরেছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে।
সফরকারীদের নায়ক নিশ্চিতভাবেই শাহিন শাহ আফ্রিদি। দশ উইকেট তুলে নিয়েছেন দুই ইনিংস মিলিয়ে। তবে পাকিস্তানের এই জয়ে পার্শ্বচরিত্রও নেহায়েত কম নেই। প্রথম ইনিংসে ফাওয়াদ আলম যদি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে না যেতেন, না করতেন অনবদ্য, রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরি, কিংবা তাকে যোগ্য সঙ্গ না দিতেন বাবর আজম, অথবা শেষ দিনে নুমান আলির তিন উইকেট যদি সঙ্গ না দিত আফ্রিদিকে, তাহলে কি এমন দাপুটে জয় ধরা দিত পাকিস্তানের হাতে? হয়তো, হয়তো নয়!
বাবর আজমের দলের এমন অলরাউন্ড আক্রমণের সামনে নাকাল হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ২০০১ সালের পর নিজেদের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজ হারানোও আর হয়ে উঠল না স্বাগতিকদের।
অথচ দিনের শুরুতে দলটির সামনে সমীকরণটা ছিল বেশ সোজা। ৯০ ওভারে ২৮০ রান দরকার ছিল ক্যারিবীয়দের। তার চেয়ে বরং তিনটে সেশন ঠেকিয়ে ড্র করাটাই যেন বেশি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য ছিল ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দলের। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আলজারি জোসেফ আর অধিনায়ক মিলে যখন প্রথম সেশনের শুরুটা যখন ‘ভালো’ই করেছিল উইন্ডিজ, তখন তো সেটা সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। বল তার ‘শাইন’ হারাচ্ছিল, উইকেট থেকেও সকালের আদ্রতা উবে যাচ্ছিল; হোক পঞ্চম দিনের ফাটা উইকেট, তবু ড্রয়ের আশাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল ক্যারিবীয় শিবিরে।
তবে এরপরই ‘নায়ক’ আফ্রিদির আবির্ভাব। থিতু হয়ে যাওয়া জোসেফকে ফেরালেন তিনি। এরপর আক্রমণে যোগ দিলেন হাসান আলি। পুরো সিরিজটা ভালো না কাটলেও শেষ দিনে এনক্রুমাহ বোনারকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের জয়কে আরও একটু কাছাকাছি এনে দেওয়ার দায়িত্বটা সামলেছেন ভালোভাবেই। এরপর অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটের দুটো ক্যাচ ফসকাল, মনে হচ্ছিল ম্যাচটাই বুঝি হাত ফসকে বেরিয়ে গেল পাকিস্তানের।
তবে রস্টন চেজের ভাগ্যটা অতো সুপ্রসন্ন ছিল না। ক্যাচ তুললেন, ইমরান বাটের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা হাত থেকে ফসকাল না সেটা। ১ উইকেটে ৬৫ থেকে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪ উইকেটে ৭৩ বনে গেল উইন্ডিজ।
এরপর জের্মাইন ব্ল্যাকউডকে সঙ্গে নিয়ে ব্র্যাথওয়েট প্রতিরোধ গড়েন কিছুটা। তবে তা স্থায়ী হলো কেবল একটা ঘণ্টাই। দুজনের জুটি যখন রীতিমতো চোখ রাঙানি দিচ্ছিল পাকিস্তানের জয় ছিনতাই করার, তখনই ‘অপ্রত্যাশিত নায়ক’ নুমান আলির আবির্ভাব। তার দারুণ ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়ে ব্ল্যাকউড চলে এলেন সামনের পায়ে, বলটা তার ব্যাট ছুঁয়ে গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের হাতে।
ব্র্যাথওয়েট ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন বেশ নিখুঁত। তার ব্যাটে ভর করেই স্বাগতিকরা আশা দেখছিল ম্যাচ ড্র আর সিরিজ জয়ের। কিন্তু হঠাৎই যেন মনোযোগ সরে গেল তার, খেললেন একটা আলগা শট। তাতেই সর্বনাশ। নুমান আলির অফ স্টাম্পের বাইরের এক বলে ব্যাট চালিয়ে ধরা পড়লেন পয়েন্টে, প্রথম ইনিংসের নায়ক ফাওয়াদ আলমের বলে।
জয়ের বন্দরটা তখনই প্রায় দেখে ফেলেছে পাকিস্তান। তবে কাইল মেয়ার্স আর জেসন হোল্ডার ছিলেন, তাই কাজটা সহজ ছিল না। পুরো সিরিজে ব্যর্থ মেয়ার্স যেন কিছুটা ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন শেষ দিনে, সঙ্গে হোল্ডার তো ছিলেনই। রান আসছিল, কিন্তু ততক্ষণে সেটা গৌণ এক লক্ষ্য হয়ে গিয়েছে উইন্ডিজের।
পাকিস্তান পেসারদের ওপর ক্লান্তি ভর করেছিল কিছুটা, নুমানের কার্যকরিতাও কমছিল। এমনই এক সময় দিনের দ্বিতীয় ক্যাচটা ছাড়লেন আবিদ, মেয়ার্সের ব্যাটের ভেতরের কোণা ছুঁয়ে বেরিয়ে আসা বলটা জমাতে পারলেন না হাতে।
এমন পরিস্থিতিতে আবারও দায়িত্বটা এসে পড়ে আফ্রিদির কাঁধে। তার অফস্টাম্পের বাইরের বলে তাড়া করতে গিয়ে মেয়ার্স ধরা পড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। তখনই আরেক প্রস্থ নাটক। জ্যামাইকার আকাশ ঝকঝকে রোদ থেকে কালো মেঘে ছেয়ে যেতে সময় নিল না বেশিক্ষণ। পাকিস্তানের চোখেমুখে তখন চিন্তার ভাঁজ। বৃষ্টি তো বটেই, সেখানকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও যে খুব একটা ভালো নয়।
তবে সেটা তেমন ভারী বৃষ্টি ছিল না। তাই একটু এগিয়ে আনা চা বিরতির পর পাকিস্তানের জিততেও সমস্যা হয়নি তেমন। হোল্ডারের প্রতিরোধের পরও। দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় পাকিস্তান। এর ফলে নিজেদের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে উইন্ডিজের সিরিজ জয়ের অপেক্ষাটা দীর্ঘ হয় আরও।
এনইউ