৩৬ বছর বয়সেও রোনালদোর এমন ফিটনেসের রহস্য কী

লিওনেল মেসির প্যারিস যাত্রা ছাপিয়ে আলোচনায় এখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ফের ঘরে ফেরা। লাখো ভক্তের স্বপ্নের ট্রান্সফার সত্যি করে আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শিবিরে এই পর্তুগিজ ফুটবলার। ২০০৮ সালে নিজের প্রথম ব্যালন ডি অর যখন জয় করেন তখন তিনি ২৩ বছরের যুবক।
দেখতে দেখতে পর পার হয়ে গেছে ১৩ টি বছর। ৩৬ বছর বয়সী রোনালদো এখন বুট তুলে রাখার ক্রান্তিলগ্নে। কিন্তু ত্রিশোর্ধ্ব আর দশজন ফুটবলারের সঙ্গে ফিটনেস পারফরম্যান্সে যোজন যোজন এগিয়ে সিআর সেভেন। এই বয়সেও রোনালদোর গতি ও ফিটনেস দেখে মনে হতেই পারে তিনি হয়তো ভিনগ্রহের কেউ।
ইউরো চলাকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে কোকাকোলার বোতল দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন এই সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টার। বোতলগুলো শুধু সরিয়ে রাখেননি তিনি বরং ভক্তদের কোকাকোলা পান না করে পানি পান করার উপদেশ দেন পাঁচবারের ব্যালন ডি অর জয়ী এই তারকা। এই ঘটনা থেকেই আঁচ করা সম্ভব ফিটনেসের ওপর কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ক্রিশ্চিয়ানো।
মাঠে নিজের সেরাটা দিতে যে ফিটনেসের বিকল্প নেই তা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। তাই রিয়ালে থাকাকালীন সময় থেকেই নিয়মিত ব্যক্তিগত ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করেন রোনালদো। তার পরামর্শেই দিনে ছয়বার অল্প পরিমাণে লো ফ্যাট ও হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে থাকেন তিনি।
এ বিষয়ে পর্তুগিজ তারকা বলেন, ‘নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করুন। এনার্জি লেভেল ধরে রাখতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ সকালের নাস্তায় রোনালদো বেশি পছন্দ করে থাকেন পনির, শুকরের মাংস এবং লো ফ্যাটসম্পন্ন দই। অন্যান্য খাবারের মধ্যে মাছ বেশ পছন্দ করেন রোনালদো। এছাড়াও তার খাদ্য তালিকায় থাকে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি।
নিজেকে সুস্থ রাখতে সকল প্রকার ক্ষতিকর পানীয় পান থেকে বিরত থাকেন সিআর সেভেন। কখনোই মদ্যপান করেন না তিনি। এমনকি সফট ড্রিংকস ও স্ন্যাকসও তার অপছন্দের তালিকায়। এমনকি ঘুমের ক্ষেত্রেও মেনে চলেন আজব এক নিয়ম। টানা না ঘুমিয়ে ৯০ মিনিট করে দৈনিক ৫ বার বিশ্রাম নিয়ে থাকেন সুপার ফিট রোনালদো।
নিজের সেরাটা দিতে এতটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রোনালদো যে দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই হয় জিমে নয়ত নিজের মত ট্রেনিং করে সময় কাটান তিনি। নিজেকে সুস্থ রাখতে অর্থ ও প্রযুক্তির যথার্থ ব্যাবহারেও পিছিয়ে নেই সিআর সেভেন। ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন ক্রিওথেরাপি চেম্বার। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ৫৯ লাখ টাকা। রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে রোজ ১৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩ মিনিট ক্রিওথেরাপি চেম্বারে কাটান এই তারকা। এছাড়াও নিয়মিত সাঁতার কাটেন তিনি।
এমন পরিশ্রম ও শৃংখলাবদ্ধ জীবনযাপনের সুফল রোনালদো ভোগ করেছেন তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই। ইংলিশ ডিফেন্ডার ফিকায়ো তোমারি নতুন রেকর্ড গড়ার আগ পর্যন্ত রোনালদোর ৮ ফুট ৫ ইঞ্চিই ছিল কোন ফুটবলারের দেয়া সবচেয়ে উঁচু লাফ। জুভেন্তাসে থাকাকালীন তার ডাক্তারি পরিক্ষার ফলাফল ছিল তাক লাগিয়ে দেয়ার মত।
পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় বয়স ৩৬ হলেও তার ফিটনেস ২০ বছরের কিশোর ফুটবলারের মত। এছাড়াও তার শরীরে মোট চর্বির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ ও তার ৫০ শতাংশ পেশি ভর রয়েছে।
এআইএ/এটি