ক্যাম্প, অর্থ কিছুই নেই মালদ্বীপের ফুটবলে!

নতুন কেউ মাজেদে মাগু সড়কের শেষ মাথায় এসেছেন। তাহলে কিছুক্ষণের জন্য তাকে দাঁড়াতেই হবে। দুই পাশের কয়েকটি ভবন সবুজ। তার ওপর সবুজ ছোট পতাকা দিয়ে রাস্তা টানানো। ক্লাবের পতাকা দিয়ে সাজানো সেই রাস্তা হচ্ছে মাজিয়া স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের।
এই ক্লাবটি মালদ্বীপের সবচেয়ে স্বচ্ছল ক্লাব। অর্থের ঝনঝনানি থাকলেও ক্লাব ভবনে তেমন চাকচিক্য নেই। সবুজ রঙয়ের একটি বিল্ডিংয়ের এক পাশের কক্ষে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চলে।
মালদ্বীপের অন্য ক্লাবগুলোর যখন ‘দিন এনে দিন খাওয়ার’ মতো অবস্থা। মাজিয়া সেখানে ব্যতিক্রম। ক্লাবটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজিদ দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী। তিনিই মূলত এই ক্লাবের খরচ যোগান। মাজিয়া সাংগঠনিক এবং আর্থিক দিক থেকে অন্য ক্লাবের চেয়ে এগিয়েছে।
আজ (শনিবার) বিকেলে মাজাদা রেস্টুরেন্টে ক্লাবটির ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ক্লাবের পরিচালনা সম্পর্কে বলছিলেন, ‘আমাদের ব্যয়ের সিংহভাগ (৮০-৯০ শতাংশ) ক্লাব চেয়ারম্যানই দেন। বাকি খরচটুকু আমাদের স্পন্সরদের কাছ থেকে আসে।’
দেশের আরেক শীর্ষ ক্লাব টিসি স্পোর্টস। টিসি স্পোর্টসের সভাপতি ৩৩ বছর বয়স্ক আব্বাস বললেন, ‘আমরা ফেডারেশনের অনুদানের ওপরই নির্ভর করি। ফেডারেশন লিগের আগে একটা ভালো অঙ্ক দেয়। বাকি অর্থ আমরা নিজেরা যোগাড় করি আবার অনেক সময় নিজেরাই দেই।’
আব্বাস মালদ্বীপের ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। এত কম বয়সে তার অর্জনও কম নয়। ইতোমধ্যে ঘরোয়া লিগ ও দেশের বাইরের লিগে ট্রফি জিতেছে তার ক্লাব। ২০১৭ সালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে রাজ্জাকের দল টিসি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
মালদ্বীপের ফুটবলে এমনিতেই অর্থের সংকট। এর মধ্যে টিসিকে সেই সংকটে আরো ফেলেছে এএফসি, ‘২০১৮ সালে আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এএফসি কাপে খেলার কথা ছিল। করোনার জন্য খেলা হয়নি। এতে আমাদের কয়েক লাখ রুপি খরচ হয়েছে। সেই ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’ বলেন ক্লাবটির সভাপতি।
মালদ্বীবিয়ানরা ফুটবলপ্রিয় জাতি। এরপরও কেন মালদ্বীপের ক্লাব ফুটবলে আর্থিক সংকট। এই প্রসঙ্গে টিসির সভাপতি বলেন, ‘সবাই ফুটবল ভালোবেসে খেলতে ও দেখতে। ক্লাব পরিচালনার জন্য আর্থিক সাহায্য করে না।’
মালে ছোট শহর হলেও এখানে ক্লাবগুলো গড়ে উঠেছে এলাকাভিত্তিক। মাজেদে মাগুর ক্রীড়াপ্রেমী বাসিন্দারা তৈরি করেছেন মাজিয়া স্পোর্টস ক্লাব। এই ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড়রাই মূলত এটা পরিচালনা করেন। চেয়ারম্যান সাজিদ শুধু এই ক্লাবের খেলোযাড় ছিলেন না। তিনি এই রোডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবৎ এই ক্লাবকে অর্থায়ন করছেন।
মূলত তার কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে মাজিয়া অন্য ক্লাবের থেকে ভিন্ন। টিসি স্পোর্টসও ভাইলেট মাগুর ক্রীড়াপ্রেমীরা গড়ে তুলেছেন। এলাকার লোকজনই ক্লাব চালান।
টিসি শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে নতুন ক্লাব। মাজিয়াও খুব বেশি দিনের নয়। মালদ্বীপের পুরনো দুই ক্লাব রেডিয়েন্ট ও ভিক্টোরি আর ফুটবলে নেই। দুই ক্লাবই দেনা-পাওনা ইস্যুতে নিষিদ্ধ।
রেডিয়েন্ট ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্টাতার সন্তান জিয়াম বলেন, ‘ফেডারেশন আমাদের অনেকটা একপাক্ষিকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এটা মালদ্বীপ ফুটবলেরই ক্ষতি হয়েছে।’
রেডিয়েন্টের ১০ জন খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক বাকি ছিল। বিষয়টি বহুদূর গড়ায়। শেষ পর্যন্ত তারা বহিষ্কার হয় ফুটবল কর্মকাণ্ড থেকে। টিসি ও মাজিয়ার কর্মকর্তারা অবশ্য বর্তমান ফেডারেশনের সভাপতি বাসানের প্রশংসা করেছেন, ‘বাসানের নেতৃত্বে মালদ্বীপের ফুটবল এগিয়ে যাচ্ছে।’
মালদ্বীপের ফুটবলের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর পার্থক্য অনেক। বাংলাদেশ-ভারতে ফুটবল মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকে ক্লাব টেন্টে ক্যাম্প শুরু হয়। মালদ্বীপে ক্লাব টেন্ট নেই ফলে সেভাবে ক্যাম্পও হয় না। লোকাল খেলোয়াড়রা বাসা থেকে এসে অনুশীলন করেন।
বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের জন্য ক্লাবগুলো অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে। খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে না রাখার কারণ সম্পর্কে মাজিয়া ও টিসির কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমাদের ক্লাবগুলোর আবাসন জায়গা নেই। ভাড়া করে রাখতে গেলেও খরচ অনেক। খেলোয়াড়রা নিজ বাসায় থাকে এবং অনুশীলনের সময় আসে।’
মালেতে যে সকল ফুটবলারদের বাসা নেই তারা লিগের সময় ভাড়া নিয়ে থাকেন। ক্লাবে খাবার-দাবারেরও সেই রকম ব্যবস্থা নেই। খেলোয়াড়দের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাই করতে হয়।
এজেড/এমএইচ
