মাশরাফির চিত্রা নদীতে সেরা টুম্পা ও ফয়সাল

নড়াইলের পরিচিতি ছিল আগে শুধু শিল্পী এসএম সুলতানের জন্য। হাল আমলে নড়াইল জনপ্রিয়তার শীর্ষে জাতীয় ক্রিকেটার মাশরাফির জন্য। সেই মাশরাফির জেলা নড়াইলের চিত্রা নদীতে শেখ রাসেল ১৮তম জাতীয় দূরপাল্লা সাঁতার প্রতিযোগিতায় আজ ছেলেদের বিভাগে ১০ কি.মি. সাঁতরে সেরা হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁতারু ফয়সাল আহমেদ এবং মেয়েদের বিভাগে ৮ কি.মি. সাঁতরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাঁতারু সোনিয়া আক্তার টুম্পা। চিত্রা নদীর রথডাঙ্গা হাই স্কুল থেকে শুরু হয়ে প্রতিযোগিতা শেষ হয় রূপগঞ্জ বাজারের বাঁধাঘাট পয়েন্টে।
গত বছর এই প্রতিযোগিতা গোপালগঞ্জের মধমুতি নদীতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও ছেলেদের বিভাগে সেরার মুকুট পরেন ফয়সাল আহমেদ। প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন হয়ে দারুণ খুশি ফয়সাল, ‘প্রতিযোগিতা বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। আমার বাহিনীকে সেরা (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) করতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। প্রতিযোগিতা সামনে রেখে আমি অনুশীলন করেছি। প্রথমে বলা হয়েছিল বাঁধাঘাট থেকে সাঁতার শুরু হবে। শেষ হবে গোবরা মিত্র ঘাটে। কিন্তু পরে আয়োজকরা উল্টো দিক থেকে এটা শুরু করেছেন। এর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে। নৌবাহিনীর সাঁতারুরা দুইবার আমার চোখে ঘুষি দিয়েছে। আমি যাতে জিততে না পারি তারা সেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি সব বাঁধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের মুকুট ধরে রাখতে পেরেছি।’
প্রতিযোগিতা মেয়েদের বিভাগে সেরাদের সেরা হতে পেরে খুশি নৌবাহিনীর সাঁতারু সোনিয়া আক্তার টুম্পাও। এই ধারাবাহিকতা জাতীয় খেলাতেই অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড সাঁতরে ছেলেদের বিভাগে সেরা হন ফয়সাল। আর মেয়েদের বিভাগে ৫৮ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সাঁতরে সেরা হন সোনিয়া আক্তার টুম্পা। এছাড়া ছেলেদের বিভাগে ১ ঘণ্টা ৪ মিনিট সাঁতরে দ্বিতীয় হন নৌবাহিনী পলাশ চৌধুরী এবং পলাশের চেয়ে এক মিনিট বেশি সময় নিয়ে তৃতীয় হন নৌবাহিনীর কাজল মিয়া। এছাড়া মেয়েদের বিভাগে ১ ঘণ্টা ৪৩ সেকেন্ড সাঁতরে দ্বিতীয় হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুক্তি খাতুন এবং ১ ঘণ্টা ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে তৃতীয় হন নৌবাহিনীর সুরাইয়া আক্তার।
প্রতিযোগিতা সামনে রেখে পুরো নড়াইল শহরের আনন্দের ঢেউ জাগে। নড়াইলবাসীর আনন্দের এ মাত্রাকে দ্বিগুণ করে তুলে পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ারটেক। আয়োজন সামনে রেখে পুরো শহর রঙিন ব্যানার-পোস্টারে ছেঁয়ে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। শহরের মোড়ে, অলিতে-গলিতে শোভা পায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যার নামে এই প্রতিযোগিতা সেই ছোট্ট শিশু শহীদ শেখ রাসেলের রঙ-বেরঙয়ের পোস্টার। এমনকি নদীর দু’পাড়েও পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়ে। প্রতিযোগিতা দেখতে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকাল থেকেই চিত্রা নদীর পাড়ে এসে জড়ো হোন। অনেকে বাড়ি থেকে চেয়ার-টেবিল এনে তাতে বসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ সাতার ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুইমিং ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু, সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ মোল্লাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সাইফ পাওয়ারটেকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
এমন আয়োজনে সন্তোষপ্রকাশ করেন সুইমিং ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। এ ধরনের প্রতিযোগিতা বছরে শুধু একবার নয়; একাধিকবার আয়োজনের ইচ্ছাও পোষণ করেন। এজন্য পৃষ্ঠপোষকদের আরো বেশি বেশি এগিয়ে আসার অনুরোধও রাখেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের নামে এই আয়োজন। চিত্রা নদীতে এই ধরনের আয়োজন আরো বেশি যাতে হয়, সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে হয় এজন্য আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সভাপতি।
ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য ছোট ভাইয়ের নামে এই প্রতিযোগিতা আমরা আয়োজন করেছি। আমাদের ফেডারেশনের সম্মানিত সভাপতি ও নৌবাহিনীর প্রধানের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং পরামর্শক্রমে আমরা দূর পাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতাটি করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই আয়োজন বছরের একবার নয়; দু’বার করব। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সাঁতারুরা আরো বেশি উঠে আসবে। আমরা তৃণমূলে জোর দিতে চাই। তৃণমূল ফুটবলসহ আরো অনেক কিছু নিয়েই আমরা কাজ করছি। সাঁতারেও সেটা করতে চাই। যেখানেই নদী সেখানেই সাঁতার- এই ব্রত নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এজেড/এনইউ