দারুণ শুরুর পর অস্বস্তিতে দিন শেষ

আগের দুদিনের তুলনায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি পূর্ণতা পায়নি। প্রতিদিন পাঁচ হাজার টিকিট বিক্রি হলেও চটগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন সব মিলিয়ে হাজার দেড়েক দর্শক এসেছেন খেলা দেখতে। দিনের প্রথম দুই সেশনে সংখ্যাটা আরো কম ছিল। সমর্থক কম থাকলেও মুমিনুল হকের দলকে উৎসাহিত করতে গোটা স্টেডিয়ামে কম্পন ওঠে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনিতে। শেষ বিকেলে এসে ক্রমশ মিলিয়ে যায় সেই আওয়াজ।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম দুই সেশনে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের ১০ উইকেট তুলে নিয়ে অলআউট করে বাংলাদেশ দল। ১৪৬ রানে কোনো উইকেট না হারানো দলটি ২৮৬ রান তুলতেই গুটিয়ে যায়। মাঠে যেমন টাইগাররা লড়েছেন, গ্যালারিতে গলা ফাটিয়েছেন সমর্থকরা। তবে তৃতীয় ও শেষ সেশনে এসে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী আরেকবার দেখা গেল। নাজমুল হোসেন শান্ত আর সাইফ হাসানের ব্যাটিং কৌশল হতাশ করে সাগরিকার দর্শকদের।
প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান তোলা বাংলাদেশ তাইজুল ইসলামের (৭ উইকেট) দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীদের আটকে দেয় ২৮৬ রানে। এতে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ব্যাট করতে নেমে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলিদের আগুনে বোলিংয়ে খেই হারাল বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার। অসহায় আত্মসমর্পণে ২৫ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট।
যদিও দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি রাব্বি। তৃতীয় দিনে ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ দল। সম মিলিয়ে দিন শেষে ৮৩ রানের লিড টাইগারদের। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে আগামীকাল (সোমবার) মুশফিক (১২) ও রাব্বি (৮) চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবেন।
পাকিস্তানকে তিনশর আগে অলআউট করতে পারায় বাংলাদেশের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছিল চট্টগ্রাম টেস্টের ড্রাইভিং সিটে বসার। তবে এই স্বপ্নের শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি আর হাসান আলি একেবারেই স্বস্তি দেননি বাংলাদেশ টপঅর্ডারকে। শুরুটা হয় সাদমানকে দিয়ে। ক্রমাগত শট বলে ভীতি ছড়াতে থাকা আফ্রিদি হঠাৎ খাটো লেন্থের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাদমানকে। ১ রান করে আউট হন এই ওপেনার।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে সাদমান আউট হলে ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে আজ যেন সাজঘরে ফেরার তাড়া ছিল তারও! নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে আফ্রিদির আউট সুইংগার পড়তে পেরেও খোঁচা দিলেন, স্লিপে বল গিয়ে জমা পড়ে আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে। রানের খাতা খোলাই হলো না শান্তর। পরের বলেই একই পথে হাঁটেন অধিনায়ক মুমিনুল হক, তবে এ যাত্রায় বাবর ক্যাচ নিতে পারেননি।
মুমিনুলের তাড়া যেন আরো বেশি। হাসান আলির পরের ওভারে নিজের খেলা প্রথম বলটি সফট হ্যান্ডে খেলে মিড উইকেটে তুলে দেন। আজহার আলি সেটি তালুবন্দি করলে কোনো রান না করেই ফেরেন মুমিনুল। সাইফ হাসান আগ্রাসী শুরুর ইঙ্গিত দিলেও পরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকেন। তার ফুটওয়ার্ক আবারও উঠল কাঠগড়ায়। প্রথম ইনিংসের মতো আফ্রিদির ছোড়া বাউন্সারে একইভাবে ক্যাচ তুলে দেন। ফেরেন ১৮ রানে।
২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদশ দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি। পার্টনারশিপ গড়ে প্রায় ৯ ওভার ব্যাটিং করেন দুজন। অবিচ্ছেদ্য জুটিতে যোগ করেন ১৪ রান। তৃতীয় দিনে ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৩৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়ে ৮৩ রানের লিড এখন টাইগারদের।
টিআইএস/এটি/জেএস