বাফুফের শোকজেও স্বার্থের সংঘাত

সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলাঙ্গনে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ও বাফুফে সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানের শোকজের ঘটনাটি বেশ আলোচিত। এই দু’টি শোকজেরই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বাফুফের লিগ্যাল অফিসার অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান লাজুক। যিনি নিজেই বাফুফের অধীভুক্ত সংস্থা মাগুরা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থের সংঘাত পরতে পরতে জড়িয়ে। ফুটবলেও স্বার্থের সংঘাত রয়েছে, সেই স্বার্থের সংঘাতে এবার নতুন আলোচনা এই লিগ্যাল ইস্যু। বাফুফে অধিভুক্ত সংস্থার সদস্য হয়ে আরেক সংস্থা/ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া কতটুকু আইন সিদ্ধ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। তাছাড়া লাজুক সাহেব অনেক দিন থেকেই লিগ্যাল অফিসারের কাজ করে আসছেন। তার নিয়োগ, সম্মানী, কর্মপরিধি সব কিছুই নির্বাহী কমিটি থেকে অনুমোদিত।’
সাবেক ফুটবলার ও সংগঠক লাজুক একজন আইনজীবীও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র এই সাবেক ফুটবলার। তিনি এখন মাগুরা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি, সর্বশেষ বাফুফে নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। সংগঠক, আইন সেবার পাশাপাশি তিনি বাফুফের লিগ্যাল অফিসার হিসেবেও আছেন। মাগুরায় সাংগঠনিক কাজে ও আইন পেশার জন্য লাজুক অনেক সময় লিগ্যাল অফিসারের দায়িত্ব ছাড়তে চাইলেও বাফুফের অনুরোধে পারেননি। ফুটবলসংশ্লিষ্টদের মতে, অন্য আইনজীবী স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিলে বাফুফের অনেক অর্থ ব্যয় হতো, এই ব্যয় সংকোচনের জন্য সাবেক ফুটবলার ও সংগঠকের কাছে দায়িত্ব দিয়েছে।
ক্লাব,বিভিন্ন সংস্থার শৃঙ্খলা জনিত চিঠি আগে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের স্বাক্ষর থাকত। ২০১৫ সালে ক্রীড়াঙ্গনের দুই প্রভাবশালী সংগঠক মঞ্জুর কাদের ও লোকমান হোসেন ভূইয়াকে বাফুফে শোকজ করেছিল। সেই শোকজের চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল সাধারণ সম্পাদকের। এখন অবশ্য ক্লাব, ডিএফএর শোকজগুলো হয় লিগ্যাল অফিসারের মাধ্যমে। এর কারণ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফিফা-এএফসি লিগ্যাল বিষয়ে লিগ্যাল ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার বিষয় জোরদার করেছে। এজন্য আমরা এই চর্চা করছি। লিগ্যাল চিঠিগুলো লিগ্যাল বিভাগ থেকেই ইস্যু হয়।’
কোচদের চুক্তি, চুক্তিচ্ছেদের বিষয়গুলো এখন ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি দেখেন। জেমি ডে’র সঙ্গে বাফুফের দুই বছর চুক্তি। এমন চুক্তি হয়েছে যে এখন নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে সম্পর্কছেদ করতে হলে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জেমির এই চুক্তি এবং নতুন কোচের বিভিন্ন লিগ্যাল বিষয়ও দেখছেন পল। লিগ্যাল অফিসার থাকতে টেকনিক্যাল ব্যক্তি পল কেন এই চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ের সমন্বয়ে এই প্রশ্নের উত্তরে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, ‘চুক্তির বিষয়গুলো লিগ্যাল বিভাগই দেখে মূলত। পল কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও মতামত দিয়ে থাকে।’
শোকজ শুধু অধিভুক্ত সংস্থা/ব্যক্তিদের মধ্যে নয় বাফুফে প্রশাসনেও চলছে শোকজের হিড়িক। ছোটখাটো বিষয়ও কারণ দর্শানোর নোটিশ পাচ্ছেন অনেকে। গত কয়েক মাসে বাফুফের অনেক এক্সিকিউটিভ শোকজ পেয়েছেন, তন্মধ্যে কেউ কেউ ততোধিকবার। এসব চিঠিতে অবশ্য লিগ্যাল অফিসার নয় সাধারণ সম্পাদকই স্বাক্ষর করেন। শোকজ প্রাপ্তির সঙ্গে অনেকের আর্থিক দণ্ডও হয়। এ নিয়ে বাফুফে প্রশাসনে খানিকটা চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এজেড/এটি