ব্যাডমিন্টন নির্বাচন : ক্রীড়া গণতন্ত্রের ‘কালো’ দিন

‘আর পাঁচ মিনিট আছে, কেউ ভোট না দিয়ে থাকলে দেয়ার অনুরোধ রইল’ -রিটার্নিং অফিসার কবিরুল হাসানের ঘোষণা। প্রার্থী, ভোটার মিলিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ব্যাডমিন্টন-সংশ্লিষ্ট ৫০ জনের বেশি উপস্থিতি। একজনও আজকের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। নির্ধারিত কক্ষে ভোটের বক্সটি ঘণ্টা পাঁচেক শূন্যই পড়ে রইল।
১৯৯৮ সাল থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনের প্রচলন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আইন কর্মকর্তা প্রায় সকল নির্বাচনের সঙ্গেই যুক্ত থাকেন। দুই যুগে তার পেশাগত জীবনে আজকের দিনের মতো পরিস্থিতি দেখেননি- ‘এটা আমার পেশাগত জীবনে বিরল এক অভিজ্ঞতা। একটি ভোটও পড়েনি, অথচ প্রার্থী-ভোটার সবাই উপস্থিত আছেন!’
কোনো ভোট না পড়ায় নির্বাচন কমিশন ভোটাভুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কমিটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করবে। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।’
ব্যাডমিন্টন নির্বাচন নিয়ে জটিলতা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পর থেকেই। শেষটা হলো কিছুটা কলঙ্ক যোগ করে। কোনো ক্রীড়া নির্বাচনে এরকম আনুষ্ঠানিক ভোটের দিন ভোট না হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
১০২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৭০ জন জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের। নির্বাচনের ফলাফলের চাবিকাঠি অনেকটা এই সংগঠনের ওপর। সেই সংগঠনের মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু ‘কালো’ দিবসের মধ্যেও ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করছেন, ‘এবারের ব্যাডমিন্টনের নির্বাচনে তিনটি ধারা ছিল। একটি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানার, আরেকটি অপর সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহার ও বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবিরুল শিকদারের। নির্বাচন হলে অনেকের জয়-পরাজয়ের ব্যাপার থাকে। তাই সবাই সম্মিলিতভাবে নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবার মধ্যে ঐক্য রয়েছে সেটারই বহিঃপ্রকাশ। ব্যাডমিন্টনের স্বার্থে একক প্যানেলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এই উদ্যোগ আরও আগে নেওয়ার সুযোগ ছিল। মনোনয়ন প্রত্যাহার করার আগে নির্বাচনের দুই পক্ষই জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়েছিলেন বারংবার। কিন্তু তারা কোন সমাধান দিতে পারেননি পারিপার্শ্বিক কারণে। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা নির্বাচন নিয়ে দোটানায় ছিলেন বিভিন্ন কারণে। এজন্য করোনার দোহাই দিয়ে ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন স্থগিতের অনুরোধ জানায়।
এনএসসি তাদের যৌক্তিক আবেদন গ্রহণ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ভোটাভুটির দিন চূড়ান্ত করে। বিদ্যমান চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় তাদের সমঝোতার আর সুযোগ নেই, এজন্য আবার পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানায়। এনএসসি এই অযৌক্তিক দাবী না মেনে আজ বুধবার নির্বাচন আয়োজন করেছে এবং প্রার্থী-ভোটাররা সেটি বর্জন করেছে। যা ক্রীড়াঙ্গনে একটি ‘কালো দিবস’ হিসেবে বিবেচনা হবে।
এজেড/এটি/এনইউ