বিশ্বকাপের আগেই ছিটকে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় আসরেও তারা ফাইনালে উঠেছিল। সেই দলটির এত বড় অধঃপতন হবে, তা নিশ্চয়ই কেউ ভাবতে পারেনি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গ্রুপপর্বে জিম্বাবুয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিল ক্যারিবীয়রা। সেই সময়ই তাদের বিশ্বকাপ খেলা সংশয়ে পড়ে যায়। তবে তার ষোলোআনা পূর্ণতা দিয়েছে স্কটল্যান্ড। বাছাইয়ের সুপার সিক্সের ম্যাচে তারা ড্যারেন সামির দলকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে।
ফলে দুইবারের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলটিকে ছাড়াই প্রথমবারের মতো হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এদিন ক্যারিবীয়দের একাই হারিয়ে দিয়েছেন স্কটিশ অলরাউন্ডার ব্রেন্ডন ম্যাকমুলান। মিডিয়াম পেসে তিনি প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন, এরপর ব্যাটিংয়ে খেললেন কার্যকরী এক ইনিংস।
আজ (১ জুলাই) জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে নেমেছিল দল দুটি। বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সুপার সিক্স পর্বের তিনটি ম্যাচই ক্যারিবীয়দের জিততে হতো। এরপর তাকিয়ে থাকতে হতো অন্য দলগুলোর দিকে। কিন্তু আজ সুপার সিক্স পর্বের প্রথম ম্যাচেই হেরে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের পরাজয়ে বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে স্কটল্যান্ড।
এদিন আগে ব্যাট করতে নেমেই ক্যারিবীয়রা পথ হারিয়েছিল। স্কটিশ ইতিহাস গড়ার মঞ্চটা তৈরি করেছেন তাদের বোলাররা। ক্যারিবীয়দের ৪৩.৫ ওভারে ১৮১ রানে অলআউট করার পর ব্যাটারদের শুধু ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলতে হতো। সেটিও তারা অনায়াসেই সম্পন্ন করেছে। ম্যাচের মাত্র ৫.২ ওভারে ২৫ রান তুলতেই উইন্ডিজদের প্রথম তিন ব্যাটারের বিদায়। এর মধ্যে চার্লস ও ব্রুকস আউট হন শূন্য রানেই।
৫টি চারে ২২ বলে ২২ রান করা কিং ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার বিদায়ের পর টপ-অর্ডারের আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ইনিংসের সপ্তম ওভারেই ক্রিস সোলের বলে বোল্ড হন কাইল মায়ার্স। পাওয়ার প্লে-র ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ৪৩ রান, যা হারারের সকালের কন্ডিশন বিচারে খারাপ নয়। কিন্তু এই রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলাটাই তাদের সর্বনাশ করেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সুফিয়ান শরিফ লম্বা হতে দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক হোপের ইনিংস। ১৩তম ওভারে ১৩ রানে কট বিহাইন্ড হন হোপ। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫ উইকেটে ৬০। সেখান থেকে ক্যারিবীয় ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন নিকোলাস পুরান (২১), জেসন হোল্ডার (৪৫) ও রোমারিও শেপার্ড (৩৬)। তবে তা যথেষ্ট ছিল না। হোল্ডার ও শেপার্ডের ৯৬ বলে ৭৭ রানের জুটির সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান দেড়শ ছাড়ায়। তবে এরপর জিততে হলে অবিশ্বাস্য বোলিং অথবা স্কটিশদের খুব বাজে ব্যাটিং করতে হতো। তবে সেটি আর হয়নি।
রানতাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় স্কটল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রিডকে ফেরান জেসন হোল্ডার। তবে ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ম্যাকমুলান আরেক ওপেনার ম্যাথু ক্রসকে নিয়ে সেই ধাক্কা সামলে নেন। তাদের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৭৫ বলে আসে ১২৫ রান। দ্রুত রানের তাড়া না থাকায় দুজনই সময় নিয়ে খেলেছেন, অপেক্ষা করেছেন ক্যারিবীয়দের বাজে বোলিংয়ের। সেটি এসেছেও। আলজারি জোসেফের প্রথম স্পেল বাদ দিলে ক্যারিবীয় পেসারদের নিশানা ঠিক ছিল না। এলোমেলো বোলিংয়ের সে সুবিধাটা নিয়েছেন ম্যাকমুলান।
৮৫ বলে ৫০ পূর্ণ করে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে আসার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। ৩০তম ওভারে শেফার্ডকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট না হলে হয়তো তা-ই হতো। আউট হওয়ার আগে ১০৬ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৯ রান করেছেন ম্যাকমুলান। বাকি কাজটা করেছেন ক্রস। জর্জ মানসি ৩৩ বলে ১৮ রান করে আউট হলেও ১০৭ বলে ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন ক্রস।
২০১৯ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষ ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৫ রানে হেরে শেষ হয়েছিল স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা। এবার স্কটিশদের কাছে হেরে নিশ্চিত হলো বাছাইয়েই ক্যারিবিয়ানদের থেমে যাওয়া। ওয়ানডে সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে চারবারের দেখায় এটিই স্কটল্যান্ডের প্রথম জয়।
এএইচএস