লিটনের ফিফটিতে বাংলাদেশের সহজ জয়

Dhaka Post Desk

স্পোর্টস ডেস্ক

১১ জুলাই ২০২৩, ০১:৩৫ পিএম


লিটনের ফিফটিতে বাংলাদেশের সহজ জয়

ফাইল ছবি

গত মার্চে ৭ বছর পর ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই সিরিজের পর অবশ্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফেরে টাইগাররা। কিন্তু এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছিল স্বাগতিকরা। তবে শেষ ম্যাচ জিতে সান্ত্বনার জয়ে সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (বাংলাদেশ ২৩.৩ ওভারে ১২৯/৩)  (আফগানিস্তান ২৬/১০) 

লিটনের ফিফটিতে বাংলাদেশের জয়

গত দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও শেষ ম্যাচে দলের মতোই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক লিটনও। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান করেছেন অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত  ২৩ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ জয়ে ৯ বছর দেশের মাটিতে ধবলধোলাই না হওয়ার রেকর্ডটা টিকে থাকল বাংলাদেশের। 

সাকিবকে ফেরালেন নবি

তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন সাকিব-লিটন। মনে হচ্ছিল, তারাই ম্যাচ শেষ করে আসবেন। সেটি আর হলো না। মোহাম্মদ নবির বলে ক্যাচ তুলে ফিরলেন সাকিব। শর্ট লেংথে দেখে টেনে তুলে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে যেদিকে চেয়েছিলেন, সেদিকে সেভাবে খেলতে পারেননি। ৩৯ বলে ৩৯ রান করে থেমেছেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথেই বিশ্বের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান আর ৬০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন। 

শান্তকেও বোল্ড করলেন ফারুকি 

নাঈম দ্রুত ফিরলেও লিটন-শান্ত জুটি আক্রমণাত্মক শুরুই করেছিল। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে ফারুকিকে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন। একবল পর এই পেসারকে আরও একবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন শান্ত। কিন্তু পরের বলেই তার স্টাম্প উপড়ে গেছে। সোজা বলে লাইন মিস করে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ১১ রান। 

ডাক খেলেন নাঈম

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। তামিমের বিশ্রামে একাদশে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখ আবারও ব্যর্থ। এবার ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারলেন না এই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ফারুকির লেন্থ বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি টিকেছে কেবল ১৪ বল, স্কোরবোর্ডে যোগ হয়েছে ২ রান। 

কোনোরকমে একশ পার করলো আফগানিস্তান

উইকেটে আসার পর একও প্রান্তে দেয়াল হয়ে ছিলেন ওমরজাই। শেষ পর্যন্ত সেই দেয়াল ভেঙেছনে তাসকিন আহমেদ। ৪৬তম ওভারে এই অলরাউন্ডারকে ৫৬ রানে ফিরিয়েছেন এই পেসার। তাতে আফগানিস্তান অলআউট হয়েছে ১২৬ রান করে।

রইলো বাকি এক

ওমরজাইকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুজিব। কিন্তু তাড়া-হুড়া করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন। মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন তিনি। 

আবারও তাইজুলের শিকার

ওমরজাইয়ের সঙ্গে জিয়ার জুটিটি একটু হলেও আশা জোগাচ্ছিল আফগানিস্তানকে, অন্তত বল খেলার দিক দিয়ে। তবে ৫৩ বল টেকার পর ভাঙল সেটি। ওমরজাইকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটি করা জিয়া বোল্ড হলেন তাইজুলের বলে। ব্যাকফুটে গিয়ে অফ সাইডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে গেছেন তিনি। তাইজুলের এটি দ্বিতীয় উইকেট, আফগানিস্তান অষ্টম উইকেট হারাল ৮৯ রানে। জিয়া সাজঘরে ফেরার পর উইকেটে এসেছেন মুজিব। 

৩২ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর উইকেটে এসেছিলেন ওমরজাই। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই যা টানছেন আফগানিস্তানকে। এবার পেয়ে গেলেন ফিফটি। তাইজুলের বলে ডিপ মিডউইকেটে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫০ পূর্ণ করলেন তিনি। 

শরিফুলের ৪ উইকেট

সিরিজের শেষ ম্যাচে দলে ফিরেই জ্বলে ওঠলেন শরিফুল। নতুন বলে আফগানদের কাঁপন ধরিয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসেও যেন শেষ থেকেই শুরু করলেন। ২৭তম ওভারের তৃতীয় বলটি শর্ট লেন্থে করেছিলেন এই পেসার। শরীর তাক করে আসা বাউন্সারে পুল করেন আব্দুল রহমান রহমানি। কিন্তু টাইমিং করতে পারেননি তিনি, বল রাখতে পারেননি নিচেও। ডিপ ফাইন লেগে কিছুটা দৌড়ে ক্যাচ নেন তাইজুল ইসলাম। ১৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শরিফুল ম্যাচে চার উইকেট নিলেন তৃতীয়বার।

তাইজুলের উইকেট

ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে একটা প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করার চেষ্টা করছিলেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। কিন্তু আফগান অধিনায়ক সেই চেষ্টা বৃথা গেছে বাজে শটে। তাতে দলে ফিরেই উইকেটের দেখা পেলেন তাইজুল ইসলাম। ২২তম ওভারের তৃতীয় বলে আগে থেকেই রিভার্স সুইপ করবেন বলে হয়তো ঠিক করেছিলেন শাহিদি। পজিশনেও চলে যান আগেই। কিন্তু বল পাননি নাগালে। শেষ মুহূর্তে বদলাতেও পারেননি পজিশন, রিভার্স সুইপই করার চেষ্টা করেন। বল আঘাত করে স্টাম্পে।

উইকেট পার্টিতে যোগ দিলেন সাকিব

পাওয়ার প্লেতে দুই পেসার তাসকিন ও শরিফুলকে টানা ৫ ওভার করে ব্যবহার করেছেন লিটন। এগারোতম ওভারে মিরাজকে দিয়ে প্রথমবার স্পিন আক্রমণে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরের ওভারে অপর প্রান্তে আসেন সাকিব। দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন আক্রমণেও সফলতা পান লিটন। অধিনায়ককে সাফল্য এনে দিতে এদিন সাকিব সময় নিলেন ১৮ বল। ইনিংসের ১৬তম ওভারের শেষ বলে এই বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নজিবুল্লাহ। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন তিনি। তবে সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই মিডল অর্ডার ব্যাটার ফিরিয়ে ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৫। যেখানে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে উইকেট শিকারির তালিকায় সাকিবের সাথে যৌথভাবে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। তবে কিউই এই স্পিনারের থেকে ৬০ ম্যাচ কম খেলেই এই রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।  

এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডে ইতিহাসে সাকিবের চেয়ে বেশি উইকেট আছে আর কেবল সনাৎ জয়সুরিয়ার। আর ১৮ উইকেট সংগ্রহ করলেই সাকিব স্পর্শ করবেন জয়সুরিয়াকে। এদিকে আর ২৬ উইকেট সংগ্রহ করলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেট হবে সাকিবের। 

 

ব্যাটিং বিপর্যয়ে আফগানিস্তান

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল আফগানিস্তান তখন উইকেটে আসেন মোহাম্মদ নবি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ওপর গুরু দায়িত্ব ছিল দলকে এমন পরিস্থিতি থেকে টেনে তোলার। কিন্তু সেটা তো পারলেনই না, উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ১ রান করে। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেন্থে করেছিলেন শরিফুল। সেখানে পেসে পরাস্ত হয়েছেন এই ব্যাটার। তাতে বল সরাসরি তার প্যাডে আঘাত হানে। ফলে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু নবি রিভিউ নেন। তাতেও আর শেষ রক্ষা হয়নি তার। ফলে ১৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।

গুরবাজকে ফেরালেন তাসকিন

ইব্রাহিম জাদরানের পর আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজকেও দ্রুত ফেরাল বাংলাদেশ। তাসকিনের বাউন্সারে পুল করার চেষ্টা করেছিলেন গুরবাজ, কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। দারুণ ক্যাচ লুফে নিলেন মুশফিক। আগের ম্যাচে ১৪৫ রান করে ম্যাচসেরা হওয়া ওপেনার এবার ফিরলেন ২২ বলে স্রেফ ৬ রান করে।

চলতি সিরিজে উইকেটের পেছনে সময়টা ভালো না কাটলেও আজ দুর্দান্ত করছেন মুশফিক। এখন পর্যন্ত তিন উইকেটের প্রতিটিতেই ক্যাচ নিলেন অভিজ্ঞ এই টাইগার ক্রিকেটার।

৫ বলে ২ উইকেট শরিফুলের

দ্বিতীয় বলেই উইকেট, তারপর তিনটি ডট আবারো উইকেট। শরিফুলের এক ওভারের গল্প এটি। আগের ম্যাচে আফগান ওপেনিং জুটি থেকে এসেছিল ২৫৬ রান। তবে আজ তাদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে গেল মাত্র ৩ রানেই। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান শরিফুলের বলে ব্যাট চালিয়ে খোঁচা দিয়েছেন, উইকেটের পেছনে বাকি কাজটা সহজেই সারেন মুশফিকুর রহিম।  ৬ বলে ১ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন ইব্রাহিম। 

ইব্রাহিম জাদরানের পর উইকেটে এসে থিতু হতে পারলেন না রহমত শাহ। শরিফুলের বাড়তি বাউন্সের বলে এজড হলেন। ৪ বলে কোনো রান না করেই ফিরলেন তিনি। এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে শুরুতেই আফগানিস্তানকে চাপে ফেলে দিয়েছেন শরীফুল।

dhakapost

বাংলাদেশ দলে তিন পরিবর্তন

চোটের কারণে আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন পেসার এবাদত হোসেন। শেষ ওয়ানডের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানকে। তাদের জায়গায় দলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ একাদশ :-লিটন দাস (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম।

বিশ্রামে রশিদ খান

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। হোয়াইটওয়াশের মিশনে এবার রশিদ খানকে বিশ্রামে রেখেছে আফগানিস্তান। এছাড়া প্রথম দুই ম্যাচ খেলা পেসার সেলিম সাফিও নেই আজ। তাদের জায়গায় অভিষেক হচ্ছে আব্দুল রহমান ও জিয়া আকবরের। 

আফগানিস্তান একাদশ 

রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি, জিয়া আকবর, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও জিয়া আকবর।

dhakapost

টস

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছে সফরকারী আফগানিস্তান। ধবলধোলাই এড়ানোর মিশনে শুরুতে ফিল্ডিং করবে বাংলাদেশ। 

এফআই/এইচজেএস

Link copied