হৃদয়কে সবসময় মুশফিকের কথা বলতেন হান্নান

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক খুব বেশি দিন হয়নি তাওহীদ হৃদয়ের। তবে এরই মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি ভক্ত-সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকেই নিয়মিত হৃদয়। যার ধারাবাহিকতাই গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন হৃদয়। সেই সময় যুব দলের নির্বাচকের ভূমিকায় ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হান্নান সরকার। হৃদয়ের ওপর তখন থেকেই বাড়তি নজর ছিল হান্নানের। তার আশা ছিল হৃদয়কে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও পারফর্ম করতে দেখবেন। বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতেও হৃদয় ধারাবাহিক হওয়ায় উচ্ছ্বসিত হান্নান। হৃদয়ের ধারাবাহিক ক্রিকেটার হয়ে উঠার গল্প ঢাকা পোস্টকে শুনিয়েছেন তিনি।
শুরুতেই হান্নান বলছিলেন, 'আসলে ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপের সময় ওর (হৃদয়) সাথে খুব কাছ থেকে কাজ করেছি। একসাথে থাকা হতো, বিভিন্ন সময় আলাপ আলোচনা হতো ব্যাটিং বা অন্যান্য দিক নিয়ে। তখন থেকেই একটা সম্পর্ক তারপর এখনো প্রতিনিয়ত কথা হয়, ভালো সময় বা খারাপ সময়ে।'

'হৃদয়ের ব্যাচের অনেক ক্রিকেটারের পরে কিন্তু ওর ডেব্যু হয়েছে। হৃদয়ের কিন্তু পরিচিত ছিল অনেক। কেননা ২০১৮ তে যুব বিশ্বকাপে ওর সেঞ্চুরি ছিল। তবে ২০২০ সালের বিশ্বকাপে যাদের সাথে খেলছে তাদের মধ্যে শামীম, শরিফুল তাদের আবার আগে অভিষেক হয়ে যায়। তখন ওর কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে।'-আরও যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মিস্টার ডিপেন্ডেবল হিসেবে পরিচিত মুশফিকুর রহিম। লম্বা সময় ধরে দলকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। হৃদয়ের মাঝে অনেক আগেই মুশফিকের ছায়া দেখেছিলেন হান্নান। যার প্রমাণ ইতোমধ্যেই কিছুটা হলেও দিচ্ছেন এই ব্যাটার।
'আমি সবসময় তাকে একটা জিনিস বলতাম, 'আমি তোমাকে মুশফিকুর রহিমের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে চিন্তা করি।সেটার জন্য ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্বকাপের পর মুশফিকরা ভিন্ন চিন্তা করবে তখন সেই জায়গা তুমি পূরণ করবা।' সে কারণে তাকে বলেছিলাম এখন ভালো করতে পারলে পরে কাজে আসবে।'

'তবে সুখবর হলো তাকে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। তার আগেই নিজেকে সে গড়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে যতটুকু গড়ার প্রয়োজন, অন্য অনেক ব্যাটারের থেকে সে এখানে এগিয়ে। সেজন্য অভিষেকের পর থেকেই কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো খেলছে। অন্যদের থেকে সে ধারাবাহিকভাবে খেলছে।'
গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হৃদয় করেছেন ৩২ বলে অপরাজিত ৪৭ রান। তার এমন ইনিংস নিয়ে হান্নান বলেন, 'টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে ম্যাচে রান করতে গেলে একটা প্রসেস আছে সেটা কিন্তু সে আয়ত্ত করতে পেরেছে। মূলত গেল বিপিএল থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ভালো শিখেছে সে। যেখানে ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলেছিল।'
'গতকালের ম্যাচে কিন্তু সে কখনো চড়াও হয়নি বোলারদের ওপর। তবুও ৩২ বলে ৪৭ রান করেছে কারণ কোন বল কিভাবে শট খেলতে হয় সেটা শিখে ফেলেছে সে। সবচেয়ে বড় জিনিস হৃদয় ওর রানের প্রসেসে আছে। আগে ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেকে প্রমাণ করেছে এখন টি-টোয়েন্টিতে করছে।'-আরও যোগ করেন তিনি।
হৃদয়ের মধ্যে ভালো করার তাগিদ অনেক সেজন্য সে সবটা দিয়ে অনুশীলন করে, 'ওর সবচেয়ে বড় জিনিস হলো একাগ্রতা। যখন বগুড়া যেতাম বা এইচপিতে থাকতো তখন ওর অনুশীলন নিয়ে সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করতো, যা এখনো হয়। তখন ওর একাগ্রতা দেখে আমিও বুঝতাম একটা সময় সে এমন স্টেজে আসবে। অনেকে আছে ক্লান্ত হয়ে যায়, হৃদয় কখনো ক্লান্ত হয় না। প্রচুর কষ্ট করতে পারে। লম্বা সময় ধরে যে অনুশীলন করেছে নিজেকে নিয়ে সেটাই ওর এখন কাজে দিচ্ছে।'
'নিজেকে পরিপূর্ণ করার জন্য একটা খেলোয়াড়ের যে গুণগুলো থাকা দরকার ওর সবগুলোই আছে। যে গুলোর জন্যই আজকে সে এমন পর্যায় পৌঁছাতে পেরেছে। তবে আমি ওকে নিয়ে এখনো তৃপ্ত নই, আরো বড় জায়গায় দেখতে চাই তাকে বিশ্বক্রিকেটে।'
