তিন ফরম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করতে চান জাকির

২৭তম জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) পর্দা নামলো আজ। শেষ ম্যাচে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে জিততে পারলে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতো সিলেট বিভাগ। তবে সেটা করতে পারেনি তারা। যে কারণে রানার্স-আপ হয়েই থামতে হলো। টুর্নামেন্টজুড়ে দলের অধিনায়ক জাকির হাসান ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন।
৬২৮ রান করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন টাইগার এই ব্যাটার। নিজের রান পাওয়া, চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার আক্ষেপ; জাতীয় দল ছাড়াও আরও নানান বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সঙ্গে কথা বলেছেন জাকির হাসান।
জাতীয় লিগে সিলেট টানা কয়েক বছর ধরে সাফল্য পাচ্ছে। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হলেও এবার রানার্স-আপেই থামতে হলো, কিভাবে দেখছেন?
জাকির: হ্যাঁ, আমাদের এই দলটা গেল ৪-৫ বছর ধরে ভালো করছে। শেষ বছর আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। তার আগের বছর আমরা রানার্স-আপ হয়েছিলাম। আমাদের দলে ধারাবাহিকতা খুব ভালো, দলে হয়তো অনেক বড় নাম সেভাবে নেই তবে সবাই কিন্তু পারফর্মার। দলে খেলোয়াড় হিসেবে যার যেখানে যেমন করা দরকার সে কিন্তু সেখানে তেমন করছে। যে কারণে ফলটা ভালো হচ্ছে।
এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাছাকাছি ছিল সিলেট, শেষ পর্যন্ত হলো না...
জাকির: চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে যে কষ্টটা আমরা করেছি এতদিন সেটার ফল পেতাম। মনের যে প্রশান্তি বলি সেটা পেতাম চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে। দুর্ভাগ্যজনক পারিনি একটু কষ্ট তো থাকছেই, কারণ পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই আমরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছি। একটা ম্যাচও কিন্তু আমরা হারিনি। যদি ড্র করলে একটু পয়েন্ট বেশি থাকতো তাহলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন থাকতাম এখন। যে কারণে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় খারাপ লাগছে। আমরা টুর্নামেন্টজুড়ে ভালো খেলেছি জিতলে আর এই কষ্টটা থাকতো না।

নিজ বিভাগের হয়ে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেলেন। কেমন অনুভূতি?
জাকির: অনেকদিন ধরেই অধিনায়কত্ব করছি। এটা এনজয় করি, মজা লাগে। আর খেলোয়াড়দের কথা কি বলবো, তাদের মধ্যে যে জয়ের জন্য আগ্রহ সেটা ভালো লাগে দেখলে। যে কারণে অধিনায়কত্বটা করে আনন্দ পাই এটা আমি সবসময় এনজয় করি আসলে। পাশাপাশি একটা গর্বের ব্যাপার জাতীয় দলের মতই আর কি, নিজের বিভাগের হয়ে খেলা। সবাই তার বিভাগকে কিন্তু মন থেকে ধারণ করে আমিও সেটাই করি। সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট করে, এখানে একটা পরিবারের মত হয়ে গেছে।
শুরুতে আপনি রান পাচ্ছিলেন না, ইনিংস বড় হচ্ছিল না
জাকির: বলতে গেলে প্রথম দুই ইনিংসে ব্যাটিং করেছি সেখানে ৩৮ এবং ৪২ রান করেছিলাম। এরপরও আমি আশা ছাড়িনি চেষ্টা করছিলাম যে ভালো খেলার। আমার ভেতর আসলে ইনিংস বড় করার ইচ্ছা ছিল সবসময়। চেষ্টা করছিলাম সেঞ্চুরিতে রূপ দেয়ার জন্য, কিন্তু হচ্ছিল না। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আসলে যে প্রসেস অনুযায়ী ব্যাটিং করার। হেড কোচ বলেছিল যে আশা রাখতে প্রসেস ঠিক রাখতে।
অবশেষে যখন সেঞ্চুরি পেলেন কেমন অনুভূতি ছিল?
জাকির: আমার মধ্যে বিশ্বাস ছিল যে আমি পারব। চিন্তা ছিল যদি আমার প্রসেসটা ঠিক রাখি আমি পারবো। আমাকে দলের সবাই বলেছিল, তারাও বিশ্বাস রেখেছিল যে আমি সেঞ্চুরি করতে পারব। আমার ভেতরে সবসময় বিশ্বাস ছিল ইনশাআল্লাহ হবে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, যে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সেটা তিনি পূর্ণ করেছেন।
৬২৮ রান করেছেন, সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হতে আর ৫ রান প্রয়োজন ছিল, এখন দ্বিতীয় সেরা হিসেবে শেষ করলেন...
জাকির: সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে কার না ভালো লাগে, আমারও ভালো লাগে। আমি হতে পারলে ভালো লাগতো। আমি এটাকে লক্ষ্য রাখার থেকে আমার যে প্রসেস সেটাতে বেশি ফোকাস রাখি। আমি পারফর্ম করতে চাই, ভালো খেলতে চাই। প্রত্যেকে ম্যাচে, প্রত্যেক ইনিংসে আমি যেখানেই খেলি না কেন আমার প্রসেসটা ঠিক রাখতে চাই।

কোন কোচের ক্রেডিট বেশি দেবেন
জাকির: জাতীয় দল থেকে বের হওয়ার পরে আসলে কারো সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করা হয়নি। সবার সমন্বয় নিয়েই কাজ করেছি, আগে সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। বাংলা টাইগার্সে সোহেল স্যারের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। পরে যখন টুর্নামেন্টে ঢুকেছি রাজিন ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি আমাকে সবসময় মানসিকভাবে অনেক সাহায্য করেছেন। একজন প্রধান কোচের থেকে যে সাহায্য দরকার সেটা উনি সবসময় আমাকে দিয়ে থাকেন। এর জন্যই মনে হয় আমি ধারাবাহিক রান করতে পেরেছি। যখন আমি ৩৮-৪০-৫০ রানে আউট হয়েছি উনি কখনো হতাশা দেখাননি। আমার ওপর সবসময় আশা রেখেছেন আমি পারব।
সিলেটে সবসময় ব্যাটার সংকট, এবার দিশান ভালো করেছে সঙ্গে গালিবও
জাকির: যখন স্থানীয়রা ভালো করবে তখন কিন্তু দল অনেক শক্তিশালী হয়ে যাবে। আমাদের বোলিং সাইডটা অনেক ভালো ব্যাটিং থেকে। বিশেষ করে আমাদের পেস বোলিংটা খুব ভালো। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যাটিংটা নিয়ে সমস্যা ছিল, গালিব সবশেষ বছর ভালো করেছে এবারো ভালো রান করেছে একটা ইনিংসে। দিশান ভালো করছে সে খুব কনফিডেন্ট। আর একজন আছে রিয়াদ, আমার কাছে মনে হয়েছে ওর খুব ট্যালেন্ট আছে। দলের জন্য খুব ভালো হবে ভবিষ্যতে।
এবার জাতীয় দল প্রসঙ্গে আসা যাক, ৮ মাস ধরে দলের বাইরে আছেন...
জাকির: জাতীয় দলের বাইরে থাকাটা সবসময় খারাপ লাগার। একই সঙ্গে এটা মেনেও নিতে হবে। আমি যদি এটা নিয়েই পড়ে থাকি তাহলে আমার ঘরোয়ার অন্য যে টুর্নামেন্ট লিগগুলো আছে সেগুলোতে ভালো করতে পারব না। আমি যদি ইনশাআল্লাহ পারফর্ম করতে পারি আবার জাতীয় দলে যাব এটা জানি। শান্তর সাথে কথা হয়েছে দুই ম্যাচ খেলে যে চলে যাব এমন না। আমি ধারাবাহিক পারফর্ম করেই যেতে চাই।
যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে বাদ পড়েছেন নাকি কম-আপনার কি মনে হয়
জাকির: এটাতে আমার কোনো রিগ্রেট নেই। এই জিনিসটা আমি এত চিন্তাও করি না। একটা খেলোয়াড় হিসেবে যেগুলো খেলেছি ওগুলো যদি ভালো করতে পারতাম তাহলে আর সুযোগের কথা আসতো না। আমার উচিত ছিল টিমকে আরো ভালো পারফর্ম করে সাপোর্ট দেওয়ার। এটা আমিও ফিল করি যে আমি সেটা দিতে পারিনি। যে কারণে আমি দলে নাই এখন এটার জন্য রেডি হচ্ছি। যখনই কল পাব শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করব।
জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের চিন্তায় আপনি ছিলেন হুট করে বাদ পড়লেন সব ফরম্যাট থেকেই...
জাকির: এই জিনিসটা নিয়ে একটু খারাপ লাগে। কেউ যদি একটা ফরম্যাট রেগুলার খেলে থাকে, তাহলে ওই ফরম্যাটে তাকে স্পেশালিস্ট বানিয়ে দেওয়া হয়, এই জিনিসটা হওয়া উচিত না। আমি মনে করি আমি যোগ্যতা রাখি তিন ফরম্যাটেই খেলার। আমার তিন ফরম্যাটেই খেলার জন্য মাইন্ড সেটআপ থাকে। সবসময় আমি ইনশাআল্লাহ চাই তিন ফরম্যাটে দলের প্রতিনিধিত্ব করতে।
আপনাকে শুধু টেস্ট তকমা নিয়েই খেলতে হচ্ছে এটাকে কি দুর্ভাগ্য বলবেন নাকি অন্যকিছু...
জাকির: না ভাগ্য খারাপ বলবো না। কেন হয়েছে এমনটা এটা আসলে বুঝি যে আমি প্রথম টেস্ট ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিলাম ভারতের বিপক্ষে তার জন্য। যে কারণে সবার মনে এটা গেঁথে রয়েছে টেস্ট ক্রিকেটার। তবে আমার শুরুটা হয়েছিল কিন্তু ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। আমি চাই যে ভালো পারফর্মম্যান্স করে তিন বিভাগে খেলতে।
বিপিএলে আরও বেশি দাম আশা করছিলেন কি না...
জাকির: অবশ্যই আশা করছিলাম। সবশেষ বছরের টুর্নামেন্টে রান সংগ্রাহকদের মধ্যে আমি টপ সিক্সে ছিলাম। ভেবেছিলাম অনেকগুলো টিম হয়তো চিন্তা করবে। জানি না হয়তো তাদের গেমপ্লান অন্যরকম ছিল। সিলেটের প্রতি আসলে কৃতজ্ঞতা আমাকে তারা পিক করেছে।
পরিবার বা নিকটজনদের থেকে কেমন সাপোর্ট পান?
জাকির: আমার পরিবার মানে স্ত্রী এবং বন্ধুবান্ধব তারা আমাকে খেলা নিয়ে তেমন কখনো কিছু বলে না। সবসময় তারা আমাকে নিয়ে আশাবাদী থাকে। কারণ তারা জানে যে আমি কতটা কষ্ট করি। আমার পরিবারের সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট করে, আমি খারাপ খেললে তারা মন খারাপ করে কিন্তু তারা আমাকে সেটা বুঝতে দেয় না।
এসএইচ/এফআই
