‘প্রমাণ করতে চেয়েছি যে লাল বলেও ভালো করতে পারি’

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ২৭তম আসরের সমাপনী হয়েছে আজ (মঙ্গলবার)। এনসিএল টি-টোয়েন্টির পর লাল বলের টুর্নামেন্টটিতেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর বিভাগ। যেখানে ২০ পয়েন্ট নিয়ে বরিশাল বিভাগ পঞ্চম স্থানে থেকে আসর শেষ করেছে। অবশ্য দল ভালো না করলেও, সেরা বোলার হয়েছেন বরিশাল বিভাগের অধিনায়ক তানভীর ইসলাম। গতি-সুইংয়ে ঝলক দেখিয়ে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট।
প্রথম শ্রেণির এনসিএল টুর্নামেন্ট শেষে নিজের পারফরম্যান্স, আসন্ন বিপিএলে ব্যক্তিগত ও দলগত প্রত্যাশাসহ নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওনের মুখোমুখি হয়েছেন তানভীর।
আপনার দৃষ্টিতে দল হিসেবে বরিশালের পারফরম্যান্স কেমন হয়েছে?
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ ভালোই করেছে। তবে ভালোর তো শেষ নেই। যদি আমাদের ম্যাচগুলো দেখেন তাহলে জানবেন প্রত্যেকটা ম্যাচে কিন্তু আমাদের সম্ভাবনা ছিল। ম্যাচগুলো আমরা সেভাবে ধরতে পারিনি, যে কারণে জয় থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে পারলে আরও ম্যাচ জিততে পারতাম।
প্রথমবার অধিনায়কত্ব করলেন, কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
তানভীর : চ্যালেঞ্জিং তো ছিল, অবশ্যই। তবে সেটা কাভার করা হয়েছে। আমার দলে যারা সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন, তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। বড় একটা সময় তাদের পরামর্শ অনুযায়ী দল পরিচালনা করেছি। আমাকে মাঠে বেশ সাহায্য করেছে তারা।

বোলারের ভূমিকায় আপনাকে নিয়মিত দেখা যায়, নতুন করে অধিনায়কত্ব সামলানো কতটা কঠিন…
তানভীর : কোনটা কঠিন সেটা বুঝতে পারিনি। কারণ তা আলাদা করার জন্য এখন পর্যন্ত সে রকম চ্যালেঞ্জ, তার মুখোমুখি হইনি। অধিনায়কত্ব করেছি, পাশাপাশি বোলিংয়ের যে ন্যাচারাল প্রক্রিয়া সেটা করেছি। আসলে বলার মতো চ্যালেঞ্জ ফেস করিনি। আমি পুরো টুর্নামেন্টে অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করেছি।
বাইরে থেকে দলের ভেতরকার পরিস্থিতি নিয়ে নানা কিছু শোনা যায়। বরিশাল দলের ড্রেসিংরুম কেমন ছিল আসলে…
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আগের চেয়ে ভালো মনে হয়েছে আরকি। যারা খেলেছে তারাই আরও ভালো বলতে পারবে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে সব ঠিকঠাক। অধিনায়ক হিসেবে আমি ভিন্ন কিছু দেখিনি।
শুরুতে আশরাফুল আপনাদের কোচ ছিলেন, এরপর জাতীয় দলে চলে যাওয়ায় আপনার ও দলের চাপ বেড়ে গিয়েছিল কি না…
তানভীর : আশরাফুল ভাই যখন ছিলেন, তখন আমার দায়িত্ব বাড়তি কিছু ছিল না। তিনি সবকিছু দেখভাল করতেন, বুঝিয়ে দিতেন। তিনি আমার কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছিলেন। পরে উনি চলে যাওয়ার পর মর্তুজা স্যার এসেছেন, উনার একটু সময় লেগেছিল সবকিছু বুঝে উঠতে। এরপর উনিও সবকিছু বুঝে নিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন।
‘সবাই বলত যে আমি সাদা বলের বোলার। তবে এখন প্রমাণ করেছি যে আমি লাল বলেও ভালো করতে পারি। লাল বলে কী আছে এটা আমি দেখতে চেয়েছিলাম।’
আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করলেন। প্রথম থেকেই কি এমন পরিকল্পনা বা লক্ষ্য ছিল?
তানভীর : না, এরকম চিন্তা ছিল না। তবে আমরা যখন প্রথম ম্যাচটা খেলি তার আগেরদিন আশরাফুল ভাই সবার সঙ্গে মিটিং করেছিলেন। প্রত্যেকটা ক্রিকেটারকে তার লক্ষ্য একটা কাগজে লিখে দেন তিনি। আমাকেও একটা লক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেই টার্গেট থেকে আমি হয়তো কিছু উইকেট কম পেয়েছি। তবে চেষ্টা করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে তিনি আসলে মূলত এত উইকেট এবং এত রান (ইকোনমি) এমন একটা টার্গেট দিয়েছিলেন। একইভাবে প্রত্যেক ক্রিকেটারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছোট ছোট কাগজে লিখে।
খেলা শুরুর আগেই প্রধান কোচ এমন পরিকল্পনা দিয়েছিলেন, বাদ বাকি আমরা সবাই চেষ্টা করেছি সেটা বাস্তবায়ন করার। প্রতিবছর আমরা সবাই একবারই এভাবে লাল বলের ফরম্যাটে খেলি। যদিও এবার আমি প্রস্তুতি নিতে যথেষ্ট সময় পেয়েছি, চেষ্টা করেছি ভালো দল গড়ার।
৩২ উইকেটের মধ্যে কোন উইকেটটা আপনার পছন্দের বা তৃপ্তি পেয়েছেন?
তানভীর : প্রত্যেকটা উইকেটই কিন্তু স্পেশাল। চার দিনের ক্রিকেটে খুব কষ্ট করে উইকেট নিতে হয়। মানে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের উইকেটে যেমন খুশি থাকি, তেমনি ১১ নম্বর উইকেট নিলেও আমি একই রকম খুশি থাকি। যা আমি আগেও বলেছি।
জাতীয় দলের জার্সিতে সাদা বলের দুই ফরম্যাটেই খেলেছেন, বাকি কেবল টেস্ট…
তানভীর : সবাই আমাকে একটা সময় বলত, আমি সাদা বলের জন্য ভালো। লাল বল নিয়ে যাতে চিন্তা না করি। পরে আমিও সেভাবেই চিন্তা-ভাবনা সাজাই। তবে গত দুই বছর ধরে আমি লাল বলেও ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই বছর প্ল্যান ছিল লাল বলে ভালো করতেই হবে। আমি দেখাতে চাই লাল বলেও খেলতে পারি।
লাল বলে ভালো করার ক্ষেত্রে মুমিনুল ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। উনার কাছে একদিন জিজ্ঞেস করি– আমি লাল বলে ভালো করতে পারব কি না। উনি সাহস দিয়ে বললেন যে টেস্টেও অনেক ভালো করতে পারব আমি। শুধু ফিল্ডিং সেটআপটা ঠিক রাখতে হবে, যেহেতু জোরে বল করি। উনার সঙ্গে যখনই দেখা হয়, কথা হলে আমাকে অনেক সাহস যোগান। আমার কাজ হচ্ছে খেলা, পারফর্ম করা, আমি সেটাই করে যাব।

টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন, তবে অভিষেক হয়নি। সামনে নিশ্চয়ই অভিষেক টেস্ট খেলার প্রত্যাশা করেন!
তানভীর : আমি সবসময় আশাবাদী থাকব ইনশাআল্লাহ। চেষ্টা থাকবে যেন বাংলাদেশের হয়ে লাল বলেও খেলতে পারি। এ ছাড়া সব ফরম্যাটে খেলার ইচ্ছা, দুই ফরম্যাটে ইতোমধ্যে খেলেছি। আল্লাহ যদি সহায় হয়, রিজিকে যদি থাকে টেস্টেও খেলতে পারব।
তিন ফরম্যাটের মধ্যে আপনার কোনটি বেশি পছন্দের?
তানভীর : ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই খেলেছি আলহামদুলিল্লাহ। যখন যেখানে খেলেছি, সবখানেই পারফর্ম করেছি। তবে লাল বলে এমন পারফরম্যান্স ছিল না। এবার আলহামদুলিল্লাহ ভালো করতে পেরেছি। টেস্টের প্রতি যে আগ্রহ নেই এমন নয়, আমার আগ্রহ আছে দেখে কিন্তু সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করতে পেরেছি। সবাই বলত যে আমি সাদা বলের বোলার। তবে এখন প্রমাণ করেছি যে আমি লাল বলেও ভালো করতে পারি। লাল বলে কী আছে এটা আমি দেখতে চেয়েছিলাম।
নাসুম-তাইজুল এবং আপনি, সবাই বাঁ-হাতি। পাশাপাশি রাকিবুলও আছে। আপনাদের মধ্যে ভালো প্রতিযোগিতা চলে বলা যায়
তানভীর : আমি আসলে সেভাবে চিন্তা করি না, তবে প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। কেউ বড় ভাই কেউ ছোট ভাই, তাইজুল ভাই-সাকিব ভাই-রাজ্জাক ভাই উনাদের দেখে তো খেলা শুরু করেছি। আসলে আমি প্রতিযোগিতাটা এভাবে দেখি না।
বিপিএলের আগের আসরগুলোয় পারফরম্যান্সের দিক থেকে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন আপনি। এবার প্রত্যাশা কেমন?
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ বিপিএল নিয়ে আশাবাদী। ইনশাআল্লাহ এবারও ভালো কিছু হবে। বিপিএলে সবসময় আমার ভালো করার ইচ্ছা থাকে, যেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করতে পারি।

বিপিএলে এবার চট্টগ্রাম রয়্যালসের জার্সি গায়ে জড়াবেন, কেমন হলো আপনাদের স্কোয়াড?
তানভীর : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। যা হয়েছে এটা নিয়েই তো আমাদের খেলতে হবে, ফাইট করে যেতে হবে।
তাদের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করেছেন, পরে নিলাম দেখেছেন। পারিশ্রমিকে খুশি নাকি অতৃপ্তি আছে?
তানভীর : আমি খুশি বা অখুশি কি না তা বিষয় না। আমার রিজিক যেখানে যতটুকু আছে এটা নিয়ে আমি চিন্তা করি। এটা নিয়ে আমি খুশি থাকি আলহামদুলিল্লাহ।
এসএইচ/এএইচএস
