বড় জয়ে লড়াইয়ে থাকল ভারতও

Aapon Tariq

০৫ নভেম্বর ২০২১, ১০:১৮ পিএম


বড় জয়ে লড়াইয়ে থাকল ভারতও

কেমন যেন অদ্ভুত এক নীরবতা চারপাশে। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স থেকে শুরু করে গ্যালারি, কোথাও যেন প্রাণ নেই! স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে আসার সময়ও দেখা গেল উচ্ছ্বাসহীন দর্শকের মুখচ্ছবি। একদিন আগেই দিওয়ালির রঙে রঙিন হলেও অবয়বে তা উধাও। অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের ভাগ্য যখন সুতোর ওপর ঝুলছে তখন আর হাসি থাকেই বা কী করে ভারতীয় সমর্থকদের মুখে! 

শুক্রবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মাঠে নামার আগেই সমীকরণটা জানা হয়ে গিয়েছিল, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই চলবে না, কামনা করতে হবে ৭ নভেম্বর আফগানিস্তানের কাছে নিউজল্যান্ডের হার। আর নিজেদের তো শেষ ম্যাচে নামিবিয়াকে হারাতেই হবে। এই যদি-কিন্তুর পথে প্রথম কাজটা ছুটির দিনে সেরে নিয়েছে বিরাট কোহলির দল। স্কটিশদের বিপক্ষে তুলেছে ৮ উইকেটের জয়।

রাতের এই ম্যাচে টস ভাগ্যটাও সঙ্গে থেকেছে বার্থ ডে বয় বিরাট কোহলির। প্রথমে ভারত অধিনায়ক ব্যাটিংয়ে পাঠালেন স্কটল্যান্ডকে। ওমানে বাছাই পর্বে বাংলাদেশকে হারানো দলটি শুক্রবার তুলল ১৭ ওভার ৪ বলে অলআউট হয়ে ৮৫ রান। জবাব দিতে নেমে রানরেট বাড়িয়ে নেওয়ার একটা ব্যস্ততা তো ছিলই ভারতের। সেই পরীক্ষায় ভালোই করল তারা। ৬ ওভার ৩ বলে ২ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নিল রোহিত শর্মারা। 

স্কটিশদের মামুলি সংগ্রহটা ৭ ওভার ১ বলের মধ্যে পার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে ভারত। কারণ এটা পারলেই আফগানিস্তানের রান রেট পেছনে ফেলার হাতছানি ছিল। ৮ ওভার ৫ বলের মধ্যে জিতলে নিউজিল্যান্ডকে টপকাতো ভারত। দুটো লক্ষ্যই পূরণ করেছে কোহলির দল। টি-টোয়েন্টিতে ৮১ বল হাতে রেখে জয়, বিস্ময়কর!

অবশ্য দলটার ঘুম উধাও হয়ে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পরই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত হওয়ার রেশ না কাটতেই নিউজিল্যান্ডের কাছে বিরাট কোহলির দল হেরে যায় ৮ উইকেটে! এরপর আফগানদের ৬৬ রানের বড় ব্যবধানে হারালেও ভারতের বিশ্লেষকরা মনে করছে আদতে শেষই হয়ে গেছে তাদের দলের বিশ্বকাপ মিশন। 

এই গ্রুপ থেকে সবার আগে সেমিতে পা রেখেছে পাকিস্তান। আর নিউজিল্যান্ডও আছে দাপটে। তারা আফগানদের হারাতে পারলেই শেষ চারের টিকিটটাও পেয়ে যাবে! নামিবিয়াকে শুক্রবার ৫২ রানে উড়িয়ে দিয়ে কাজটা সহজ করে নিয়েছে কিউইরা। এখন শুধু আফগানদের বিপক্ষে জয় হলেই হবে। রান রেট নিয়ে ভাবতে হবে না কেন উইলিয়ামসনদের।

এমন মারপ্যাঁচের মুখে ভালো খেলাটাই কঠিন। কিন্তু দলটা যখন ভারত, তখন এমন পারফরম্যান্স তো আশা করাই যায়। আগের ম্যাচে আফগানদের হারানো নিয়ে যদিও ফিসফাস ছিল, ম্যাচটা পাতানো কি না প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকে। তবে স্কটিশদের বিপক্ষে এই অনায়াস জয়টা তো কাঙ্ক্ষিত ভারতের।

ম্যাচের শুরুতে ব্যাট করতে নেমে তেমন একটা বড় পুঁজি গড়তে পারেনি স্কটল্যান্ড। আরেকটু সরাসরি বলা যায় সেই সুযোগটা দেয়নি ভারতের বোলাররা। মোহাম্মদ শামির পেস আর রবীন্দ্র জাদেজার স্পিনেই শেষ স্কটিশরা। বাংলাদেশকে হারানো দলটার তিনজন ব্যাটসম্যান শুধু ২ অঙ্কের দেখা পায়- কুলাম ম্যাকলয়েড (১৬), মাইকেল লেসাক (১২ বলে ২১) ও মার্ক ওয়াট (১৪)। আর শামির আগুন ঝরানো বোলিং ফিগার এরকম ৩-১-১৫-৩। সমান উইকেট পেতে জাদেজা দিয়েছেন ৪ ওভারে সমান রান। জাসপ্রিত বুমরাহ ৩.৪ ওভারে ১০ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ঝড় তোলেন লোকেশ রাহুল। তাকে সঙ্গ দিলেন আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা। স্কটিশ বোলারদের নিয়ে খেললেন দু’জন। ৩.৫ ওভারে এই জুটিতে আসে ফিফটি। রান রেটের কথা মাথায় রেখেই খেলেছেন দু’জন। তবে এই জুটি দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারেনি। দলের যখন ৫ ওভারে ৭০ তখন ফেরেন রোহিত, ১৬ বলে ৩০ রানে। 

এরপর রাহুল তুলে নেন ১৮ বলে ফিফটি। অবশ্য হাফসেঞ্চুরি করেই ফিরে যান এই ওপেনার। বাকি কাজটুকু অধিনায়ক বিরাট (২) সারেন সুরিয়াকুমার ইয়াদবকে (৬) নিয়ে।

এই জয়টা বিরাটের জন্য জন্মদিনের উপহারও। শুক্রবার ৩৩ পেরিয়ে যাওয়া ভারত অধিনায়ক ভাসছেন শুভেচ্ছা বৃষ্টিতে। সবচেয়ে প্রেরণাদায়ক কথাটা বলেছেন খোদ ঘরের মানুষ আনুশকা শর্মা। কোহলিকে তাতিয়ে দিয়ে অন্তর্জালে লিখেছেন, ‘কঠিন সময়ে নিজেকে তুলে ধরতে তোমার থেকে ভালো কেউ পারে না!’ কথাটা মিথ্যে হয়নি, কঠিন সময়ে টানা দুই ম্যাচে জিতল বিরাটের ভারত।

ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের এখন একটাই প্রার্থনা- আফগানরা যেন হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। তাহলে রানরেটের সমীকরণে হয়তো তারা পেয়েও যেতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমির টিকিট। তবে এই যখন সমীকরণ তখন কিছুটা আক্ষেপ করতেই পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। 

৫ নভেম্বর এই দিনে, এই দুবাইয়ে তো ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশেরই মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর পর আইসিসি বিতর্কিতভাবে গ্রুপিংটা পাল্টে দেওয়ায় মাহমুদউল্লাহর দল চলে যায় আরেক গ্রুপে। তারপর কী হয়েছে, সেটা তো সবারই জানা। টানা পাঁচ হারে দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ অভিযান শেষে ঘরের ছেলেরা ফিরে গেছে ঘরে! আর ঘরে ফেরার শঙ্কা নিয়ে লড়ে যাচ্ছে ভারত। কিউইরা আফগানদের হারালেই দেশে ফেরার বিমানে উঠতে হবে কোহলিদের।

এটি/এমএইচ/জেএস

Link copied