বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে ‘দুর্যোগের’ আভাস, এখনই উদ্বিগ্ন স্কালোনি

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি সহযোগী দুই আয়োজক মেক্সিকো ও কানাডাকেও অপ্রস্তুত বলা যাবে না। তবে ফিফার এই মেগা টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হবে, ফলে সেখানকার পরিস্থিতি-আবহাওয়া-কন্ডিশন নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে আগামী বছরের ১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত হতে যাওয়া বিশ্বকাপের সময়।
গত শুক্র-শনিবার আসন্ন বিশ্বকাপের ড্র ও ফিক্সচার চূড়ান্ত করেছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। প্রথমবারের মতো ৪৮ দলের অংশগ্রহণে বসবে বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই আসর। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর ১৬টি ভেন্যুতে হবে ১০৪টি ম্যাচ। অথচ আগের আসরেও বিশ্বকাপের ম্যাচসংখ্যা ছিল ৬৪টি। টুর্নামেন্টটির ৭০ শতাংশের বেশি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু ওই সময়ে সেখানে আবহাওয়া উত্তপ্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
চলতি বছরের জুন-জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৩২ দলের ওই টুর্নামেন্ট চলাকালে দেশটির বিরূপ আবহাওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল বেশ। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও হঠাৎ বজ্রপাত কিংবা রোদের কড়াকড়িতে বারবার ম্যাচ থামিয়ে ‘কুলিং ব্রেক’ দেওয়ার নজির দেখা গিয়েছিল। একই শঙ্কা আছে ২০২৬ বিশ্বকাপেও। তার ওপর এখানে প্রতিযোগী দল এবং ম্যাচসংখ্যাও অনেক বেশি। অবশ্য তাপমাত্রার পরিমাণে মনে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় অঞ্চলের বিচারে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে খেলোয়াড়দের অনুভূতিতে সেটিও অনেক অসহনীয় ঠেকে!
সংবাদ সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে প্রতিটি দেশ ৩টি করে ম্যাচ খেললেও, তাদের আবহাওয়া নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্বকাপ চলাকালে তাপমাত্রা সবসময়ই বিবেচ্য বিষয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপও বছরের শেষদিকে আয়োজন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল, যার বেশিরভাগ ম্যাচই হয়েছিল দিনের আলোতে। কারণ ইউরোপীয় দর্শকদের জন্য ওই সময়টা স্ক্রিনে খেলা দেখার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু ডালাসের মতো কন্ডিশনে ঘাম ঝরাতে হবে ফুটবলারদের।
তিন দশক পর আবারও বিশ্বকাপ আসর বসছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) ম্যাচ আয়োজিত হয় ডালাসের আরলিংটন, টেক্সাস, হিউস্টন, আটালান্টার মতো জায়গায়। এ ছাড়া লস অ্যাঞ্জেলসের সোফি স্টেডিয়াম, মেক্সিকোর আজতেকা স্টেডিয়াম, গুয়াদালাজারার অ্যাক্রন, মন্টেরের বিবিভিএ স্টেডিয়ামের কন্ডিশন বিরূপ হয়ে উঠতে পারে। গ্রুপপর্বের ম্যাচসূচিও উদ্বেগজনক হতে পারে, কারণ খেলার সূচি সাজানো হয়েছে টিভি সেটের সামনে অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের কথা মাথায় রেখে। অ্যাকুওয়েদারের গত ৩০ বছরের ‘রিয়াল-ফিল’ তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে একটি সম্ভাব্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দাঁড় করিয়েছে এপি।
৮৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট – সুইজারল্যান্ড বনাম ইউরোপিয়ান প্লে-অফজয়ী এ দল (১৮ জুন, ইঙ্গলউডের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় শুরু)
৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট – বেলজিয়াম বনাম ইরান (২১ জুন দুপুর ১২টা, ইঙ্গলউড)
৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট – কুরাসাও বনাম আইভরি কোস্ট (২৫ জুন বিকেল ৪টা, ফিলাডেলফিয়া)
৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট – তিউনিসিয়া বনাম নেদারল্যান্ডস (২৫ জুন সন্ধ্যা ৬টা, কানসাস সিটি)
৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট – স্কটল্যান্ড বনাম ব্রাজিল (২৪ জুন সন্ধ্যা ৬টা, মায়ামি গার্ডেন্স)
৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট – ইকুয়েডর বনাম জার্মানি (২৫ জুন বিকেল ৪টা, নিউ জার্সি)
৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট – নরওয়ে বনাম ফ্রান্স (২৬ জুন বিকেল ৩টা, ফক্সবরো, ম্যাসাচুসেটস)
৮৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট – কাতার বনাম সুইজারল্যান্ড (১৩ জুন দুপুর ১২টা, সান্তা ক্লারা, ক্যালিফোর্নিয়া)
৮৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট – উরুগুয়ে বনাম কেপ ভার্দে (২১ জুন সন্ধ্যা ৬টা, মায়ামি গার্ডেন্স)
৮৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট – দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম দক্ষিণ কোরিয়া (২৪ জুন সন্ধ্যা ৭টা, মন্টেরে)
৮৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট – সৌদি আরব বনাম উরুগুয়ে (১৫ জুন সন্ধ্যা ৬টা, মায়ামি গার্ডেন্স)
৮৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট – ইউরোপীয় প্লে-অফ বি বিজয়ী বনাম তিউনিসিয়া (১৪ জুন রাত ৮টা, মন্টেরে)
আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ আলজেরিয়ার বিপক্ষে ১৭ জুন। ওই ম্যাচের ভেন্যু কানসাস সিটি স্টেডিয়াম। বাকি দুটি ম্যাচ একই ভেন্যুতে (ডালাস স্টেডিয়াম) হবে। যেখানে আর্জেন্টিনা যথাক্রমে খেলবে ২২ জুন অস্ট্রিয়া এবং ২৮ জুন জর্ডানের বিপক্ষে। ডালাসে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে লিওনেল মেসিদের ম্যাচটি হবে স্থানীয় সময় দুপুর ১টায়। সেখানকার অত্যধিক উত্তপ্ত আবহাওয়া শঙ্কায় ফেলেছে আর্জেন্টাইন কোচকে। লিওনেল স্কালোনি বলেন, ‘আমাদের (ওই সময়ে) ম্যাচটি খেলতে হবে, সূচি নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় আর কোনো বিকল্প নেই। সেখানে বেশ গরম থাকবে, তবে দুটি দলকেই তা মোকাবিলা করতে হবে বলে আমরা অজুহাত দিতে চাই না।’
অন্যতম আয়োজক দেশ কানাডার কোচ জেসে মার্শও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতেই চাই যে, আমাদের ফুটবলাররা যেন সুস্থ ও ফিট থাকে। আমরা চাইব আবহাওয়ার সঙ্গে তারা যতটা ভালোভাবে সম্ভব মানিয়ে নিতে পারে।’
এএইচএস