সোনা জয়ী দাবাড়ু খুশবুর আকুতি 

প্রতিভা এমন একটি ব্যাপার যাকে কখনও দমিয়ে রাখা যায় না। শুধু একে সুযোগ, সহযোগিতা ও পরিচর্যা করতে হয়। নইলে তা বিনাশ হয়ে যায় অঙ্কুরেই। ওয়ারসিয়া খুশবু হচ্ছে তেমনই এক প্রতিভা। এক প্রতিভাময়ী ক্ষুদে দাবাড়ু। বয়স ১০। অথচ কি দাপট-আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে প্রতিপক্ষ বড় দাবাড়ুদের নাজেহাল করে ছাড়ে! ঢাকার মগবাজারের (নয়াটোলা) এই কন্যাটির বেশ ক’দিন ধরেই মন ভাল নেই। কেননা, একটি মাত্র বিমান টিকেট এবং নিবন্ধন ফি’র অর্থের অভাবে তার ইন্দোনেশিয়া এশিয়ান দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়া হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাবায় স্বর্ণ পদক জয়ী খুদে দাবাড়ুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাকর এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার মতো সবরকম যোগ্যতা থাকার পরও খুশবু শুধু অর্থের অভাবে ইন্দোনেশিয়া উড়াল দিতে পারছে না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশার। 

খুশবু নিজেও দারুণভাবে হতাশ। সেই সঙ্গে তাকে সাহায্য করার জন্য সমাজের বিত্তবান ও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছে খুব ছোট্ট করে, ‘কেউ কী আমাকে দুটি টিকেট দিতে পারেন না!’ একটি সংগঠন থেকে ইন্দোনেশিয়া যাবার টিকিট দেবার কথা দিয়েও হঠাৎ করে শেষ মুহূর্তে না বলায় চোখে অন্ধকার দেখছেন খুশবুর বাবা। এয়ার টিকিট ছাড়াও অংশগ্রহণ ফি ও খাবার আবাসন খরচ, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন থেকে অংশগ্রহণ ফি পাবে খুশবু । দাবা ফেডারেশন এর সহায়তায় ২০২২ এ মালদ্বীপে ওয়েস্টার্ন এশিয়ান দাবায় স্বর্ন পদক জয়ী এই খুদে দাবাড়ু। 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় এই অল্প বয়সেই চোখ ধাঁধানো সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে খুশবু। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় ১৩ টি পদক জয়ী খুশবু।

২০১৮ সাল থেকে জাতীয় বয়সভিত্তিকে অনুর্ধ-৮ বিভাগে বয়সভিত্তিক চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান অনুর্ধ-১০ বালিকা চ্যাম্পিয়ন,  ২০২১ ও ২০২২ সালে শেখ রাসেল স্মৃতি স্কুল দাবা প্রতিযোগিতায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন পদক লাভ করে। আন্তর্জাতিক দাবায়ও কিস্তিমাত করেছে খুশবু। ২০১৮ সালে  উজবেকিস্তানে ওয়েস্টার্ন ইয়ুথ এশিয়া চেস টুর্নামেন্টে অনুর্ধ-৬ বিভাগে এবং থাইল্যান্ডে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়শিপে অনুর্ধ-৬ বিভাগে স্বর্ন পদক, ভারতের কলকাতায় দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল দাবায় পদক জেতে। থাইল্যান্ডের শেষের টুর্নামেন্টে অন্য দুটি ক্যাটাগরিতে দুটি রৌপ্যপদকও লাভ করে।

২০১৯ সালে এলিগেন্ট জাতীয় যুব দাবায় অনুর্ধ-৮ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০১৯ জাতীয় জুনিয়র দাবায় (অনুর্ধ-২০ বালিকা) ৩য় স্থান তাম্রপদক লাভ করে খুশবু। এ বছরই অনুর্ধ-১৩ স্ট্যান্ডার্ড দাবা টুর্নামেন্টে এবং ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত মুম্বাই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অনুর্ধ-৮ বিভাগে রানারআপ হয়েছে। উজবেকিস্তানে এশিয়ান স্কুল দাবায় অনুর্ধ-৭ বালিকা বিভাগে ২ টি স্বর্ন ও ১ টি রৌপ্য পদক অর্জন করে। ২০২১ এশিয়ান স্কুল দাবা অনলাইন টুর্নামেন্টে অনুর্ধ-০৯ বালিকা বিভাগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ান ন্যাশনস কাপ  অনলাইন দাবা অনুর্ধ-১৪ এ বোর্ড চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ সালে জাতীয় যুব দাবায় অনুর্ধ-১০ বালিকা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন, মালদ্বীপ এ ওয়েস্টার্ন এশিয়ান দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ এ অনুর্ধ-১০ বালিকা বিভাগে স্বর্ন পদক জয়ী। শেখ রাসেল এর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত স্কুল দাবায় (১-৫ শ্রেণি বালিকা) অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। 

দেশী-বিদেশী সবধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে খুশবু ১০ টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৬টিতে রানারআপ এবং ১টিতে তাম্রপদক পেয়েছে। কোন সন্দেহ নেই, মাথা ঘুরিয়ে দেবার মতো সাফল্য।

মাত্র পাঁচ বছরেই দাবার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। বাবার কাছে দাবার হাতেখড়ি খুশবুর। ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতামূলক আসরে খেলতে নেমেই ফিদে আন্তর্জাতিক রেটিং লাভ করে। দেশকে পাচ বার আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দিয়েছে মাত্র দশ বছরের ছোট্ট মেয়ে খুশবু। সংখ্যাটাকে ছয়-এ উন্নীত করার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে তাকে। কিন্তু স্রেফ টাকার অভাবই তার এই সুনীল স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই আসরে যদি খুশবু অংশ নিতে পারে তাহলে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনার পাশাপাশি খেতাব বা নর্ম অর্জনের সুযোগ রয়েছে তার।

ইন্দোনেশিয়া যেতে কত টাকা আর লাগবে খুশবুর? হাতে এখনও ১৫-২০ দিন সময় আছে। তবে যতই দিন গড়াচ্ছে ততই টিকেটের দাম বাড়ছে। বিমান টিকেটের মূল্য এখন ৭০/৮০ হাজার টাকা। বছর খানেক দেশের বাইরে ছয়টি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে অনেক ঋণ নিয়ে ও বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে খুশবুকে খেলিয়েছেন মেহেদী। কিন্তু আর পারছেন না তিনি। চোখে দেখছেন ঘোর অমানিশা!